ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেল সংযোগ প্রকল্পটি আজ একনেকে উঠছে;###;প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার

ফের সরাসরি ট্রেনেই যাওয়া যাবে দার্জিলিংয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফের সরাসরি ট্রেনেই যাওয়া যাবে দার্জিলিংয়ে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ভারতের দার্জিলিংয়ে এক সময় বাংলাদেশে থেকে সরাসরি ট্রেনেই যাওয়া যেত। তবে পাঁচ দশক আগে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগটি ফের সচল করার উদোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভারতের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ট্রেনে পর্যটকদের স্বর্গ দার্জিলিংয়ে যেতে পারবেন সাধারণ মানুষসহ ভ্রমণপিপাসুরা। প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুদেশের পরিত্যক্ত বিভিন্ন রেলসংযোগ পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ প্রকল্প প্রস্তাবে করা হচ্ছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নতুন এ সংযোগের জন্য বাংলাদেশকে চিলাহাটি থেকে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত সাত কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। যার পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যেই রেলপথটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে এ প্রকল্পটি শেষ করতে চায় সরকার। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের হলদিবাড়ি অংশে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রেলপথ ভারতের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে। মোট ১০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করলেই দুদেশের মধ্যে এই করিডরে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হবে। গত বছরের শুরুতেই নীলফামারিতে উন্নয়ন মেলায় রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ চালু করা হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছিলেন। জানা গেছে, চিলাহাটি থেকে চিলাহাটি বর্ডার পর্যন্ত ব্রডগেজ কানেক্টিভিটি স্থাপনের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে করে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃদ্ধিসহ নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে এই করিডর দিয়ে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পরিচালনার দুয়ার উন্মোচিত হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের রেল পরিবহন উইংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট বহু পুরাতন। এই প্রকল্প অনুমোদন হলে নতুন করে ঢাকা থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি-দার্জিলিং পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে দুই দেশ আর্থিকভাবেও উপকৃত হবো। রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বন্ধ হওয়া সেকশন পর্যায়ক্রমে পুনঃচালুর মাধ্যমে অবিচ্ছিন্ন রেল নেটওয়ার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত দুদেশের রেল সংযোগ সংক্রান্ত এক বৈঠকে চিলাহাটি ও হলদিবাড়ির মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ঢাকা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতা রুটে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর থেকে ভারতের মালদহের সিংহাবাদ, দিনাজপুরের বিরল থেকে উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর, কুষ্টিয়ার দর্শনা থেকে নদিয়ার গেদে এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে অসমের করিমগঞ্জের মহিষাশন পর্যন্ত রেল সংযোগ চালুর প্রকল্প চলমান আছে। জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে সাড়া থেকে (পাকশীর কাছে) চিলাহাটি পর্যন্ত মিটারগেজ এবং দামুকদিয়া (সাড়ার উল্টো দিকে) থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হয়। ১৯০৯ সালে পোড়াদহ থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডাবল লাইনে রূপান্তর করা হয়। ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালুর মধ্য দিয়ে দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে সান্তাহার থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত এবং ১৯২৬ সালে পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়। ওই সময় শিয়ালদহ ও শিলিগুড়ির মধ্যে সান্তাহার-পার্বতীপুর হয়ে দার্জিলিং এক্সপ্রেস ও নর্থবেঙ্গল এক্সপ্রেস নামে দ্রুতগতির ট্রেন চালু হয়। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ রুট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হতো। তবে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর এই রুটে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কালের পরিক্রমায় করিডরটিও গুরুত্ব হারায়। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি চিলাহাটি-ভারত সীমান্তে রেলপথ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথটি পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে চালুর বিষয়ে সেসময় মতবিনিময়ও করেন।
×