ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করতে চায় থাইল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করতে চায় থাইল্যান্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ থাইল্যান্ড বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাই ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য বলে তারা উল্লেখ করেছে। থাইল্যান্ড সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে থাইল্যান্ড ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এফবিসিসিআই এবং বিজিএমই-এর সঙ্গে মতবিনিময়কালে থাই ব্যবসায়ীরা এ আগ্রহের কথা জানান। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফবিসিসিআই) আয়োজনে সোমবার সংগঠনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)-এর পরিচালনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিবৃন্দ অংশ নেন। ১৪ সদস্য বিশিষ্ট থাইল্যান্ড বাণিজ্য প্রতনিধিদলের নেতৃত্ব দেন থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইটিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক মি. মানুসিথি প্রাসাসানা। এছাড়াও প্রতিনিধিদলে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ বোর্ডের উর্ধতন বিনিয়োগ প্রমোশন অফিসার মি. আপিপংখুনা কর্নবোদিনতর এবং বিভিন্ন বাণিজ্য খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ ছিলেন। সভার দ্বিতীয় পর্যায়ে থাইল্যান্ড থেকে স্বাস্থ্য, কৃষি, সিরামিক, লুব্রিকেন্ট, মোটরসাইকেল, প্লাস্টিক, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ইত্যাদি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিজনেস টু বিজনেস (বি টু বি) আলোচনায় মিলিত হন। এফবিসিসিআই সভাপতি তার বক্তব্যে দেশের দ্রুত বর্ধমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় করতে এফবিসিসিআই সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে বন্ধু প্রতিম এ দেশ দু’টির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনও সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি বলে এফবিসিসিআই সভাপতি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ সরকারের দেয়া আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা যেমন ট্যাক্স হলিডে, রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা, কর্পোরেট কর সুবিধা ইত্যাদি গ্রহণ করে তিনি থাইল্যান্ড প্রতিনিধিদলকে এ দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বর্তমান সরকারের দেয়া ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা নেয়ার জন্যও থাই ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান। থাইল্যান্ড প্রতিনিধি দলের নেতা মি. মানুসিথি প্রাসাসানা বলেন, বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য। থাইল্যান্ড সরকারও এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ এবং যৌথ বিনিয়োগ স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান সফর বিশেষ সহায়ক হবে বলে মি. সিথিপ্রাসাসানা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে, সোমবার রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে পোশাক মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্যিক উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা। আইটিডি নির্বাহী পরিচালক মানু সিথিপ্রাসাসানা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা ভাল, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি খুব ভাল। এ দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ আছে, যা আমাদের আকৃষ্ট করেছে। বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে, থাইল্যান্ড গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য তেমন নেই। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব। আমরা মনে করি, দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনায় বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সরেজমিনে ধারণা নিতে রবিবার থাইল্যান্ড ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে অবস্থান করবে। প্রতিনিধি দলটি বিজিএমইএ ভবনে এলে তাদের স্বাগত জানান বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি ফারুক হাসান। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৮.১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য থাইল্যান্ডে রফতানি করে এবং থাইল্যান্ড থেকে ১১৯৩.৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে ওভেন গার্মেন্টস, নীটওয়্যার, প্রকৌশল পণ্য এবং হোম টেক্সটাইল। আর থাইল্যান্ড থেকে মূলত প্লাস্টিক এবং রাবার উপাদান, খণিজ দ্রব্য, বস্ত্র ও বস্ত্র সামগ্রী এবং মেশিনারি আমদানি করা হয়।
×