ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখেই সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখেই সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ এর বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখেই সংসদে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সোমবার রাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ ইমরান আহমেদ প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে বিলটি সংসদে পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। বিলের ৩২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি অফিসিয়াল সিক্রেসি এ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদ- বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। ৩২ (২) ধরায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি উপধারা-১ এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদ- বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। বহুল আলোচিত ওই ধারার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন-এ্যাটকোরসহ সব স্টেকহোল্ডার। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সম্পর্কে তাদের আপত্তি রয়েছে। বিলের ওই ছয়টি ধারা বিদ্যমান থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির সঙ্গে তাদের একাধিক বৈঠকও হয়। সংসদীয় কমিটির সুপারিশকৃত বিলের ২৫ ধারায় আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ও ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি বিষয়ে (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোন তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণœ করার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো বা তদুদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোন তথ্য সম্পূর্ণ আ আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ৩ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা পুনরায় অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের ২১ ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচার চালানো বা এতে মদদ প্রদান করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা পুনরায় অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদ- ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও নিরাপদ ব্যবহার আবশ্যক বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল ভোগের পাশাপাশি অপপ্রয়োগও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সাইবার অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও ডিজিটাল অপরাধসমূহের প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরণ, তদন্ত এবং বিচারের উদ্দেশ্যে এ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। সাইবার তথা ডিজিটাল অপরাধের কবল থেকে রাষ্ট্র এবং জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য। আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে প্রকারান্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার পুনর্জাগরণ বলা যেতে পারে। এই মহান স্বপ্নদ্রষ্টার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
×