ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ৫ নির্দেশ মেনে চলতে ওয়াদা

চুক্তিতে আর বাস চালানো নয়- অঙ্গীকার মালিক শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চুক্তিতে আর বাস চালানো নয়- অঙ্গীকার মালিক শ্রমিকদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস, সুষ্ঠু সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া পাঁচ নির্দেশনা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। সোমবার রাজধানীতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এক যৌথ সভায় এ অঙ্গীকারের কথা জানান তারা। সেইসঙ্গে চুক্তিতে বাস না চালানো, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, রাস্তায় গাড়ি ও চালকের সকল কাগজপত্র সঙ্গে রাখা, অবৈধ কাগজপত্রে গাড়ি না চালানো, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব যানবাহন রং করে রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি হাল্কা যান চালকদের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস চালানোর অনুমতি দিয়ে রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানি না করতে আহ্বান জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল গাড়ি চলাচল বিষয়ে মহানগর-মালিক ও শ্রমিক নেতাদের ডাকা হয়েছিল গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লাহ। বৈঠকে পরিবহন নেতারা বলেন, রাজধানীতে বাসে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চুক্তিতে গাড়ি চালানো। এক শ্রেণীর মালিক বারবার আহ্বানের পরও চুক্তিতে গাড়ি দিয়ে যাচ্ছেন। কিছু শ্রমিক এখনও চুক্তিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখা গেছে, চুক্তিতে গাড়ি চালানোয় চালকের তাড়া থাকে বেশি। ফলে সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চলতে দেখা যায়। এতে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ে। মালিকরা বলছেন, রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো চুক্তিতে গাড়ি চালানো। যে কোন মূল্যে চুক্তিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। কেউ নির্দেশ অমান্য করে চুক্তিতে গাড়ি চালালে নগরীতে কাজ করা চারটি ভিজিলেন্স টিম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে এসব গাড়ির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হবে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস, সুষ্ঠু সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আগস্টের শেষ দিকে পাঁচ দফা নির্দেশনা বিআরটিএর মাধ্যমে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। নির্দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে, চলমান অবস্থায় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখা, স্টপেজ ছাড়া গাড়ি না থামানো, পরিবহনের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও সহকারীর ছবিসহ নাম মোবাইল নম্বর প্রদর্শন এবং দূরপাল্লার বাসে চালক ও যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে বলে জানান বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা হলো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোন নির্দেশই শতভাগ কার্যকর হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ১২১ বাস স্টপেজ নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা মানছে না চালকরা। যত্রতত্র বাস থামানো, দরজা খোলা রাখার দৃশ্য প্রতিদিনের। বাসের ভেতর চালক ও সহকারীর মোবাইল নম্বর টাঙ্গাতে দেখা যায়নি। দূর পাল্লার বাস যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার নির্দেশ এক ভাগও কার্যকর হয়নি। মালিকরা বলছেন, সাধারণ বাসে এই ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। এই সমস্যা তারা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। কথা হলো বাকি চারটি নির্দেশ বাস্তবায়ন করা তো সম্ভব। তাহলে সেগুলো কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিনের অভ্যাস অল্প সময়েই দূর করা সম্ভব নয়, পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে। এদিকে চুক্তিতে গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকেই। তাও ভেস্তে গেছে। শতভাগ কার্যকর হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চারটি মনিটরিং টিম গঠন করা হলেও খুব একটা সুফল মিলছে না। এরই ধারাবাহিকতায় মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে যৌথ সভার ডাক দেয়া হয়। বৈঠকে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলে রাস্তায় হয়রানি না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, সবার আগে আমাদের সঠিক কাগজপত্রের দিকে নজর দেয়া উচিত। সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে। আইন মানলে সড়কে নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দফা নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক ও শ্রমিক নেতা ওসমান আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×