ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার যে মেডিক্যাল বোর্ড হয়েছে তাতে আমরা হতাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  খালেদা জিয়ার যে মেডিক্যাল বোর্ড হয়েছে তাতে  আমরা হতাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেছেন, সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড দিয়ে তাঁর সঠিক চিকিৎসা হবে না। রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ড. মোশাররফ বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বৈঠককালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন আমাদের নেত্রীর পছন্দ মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সরকারের কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে। কিন্তু দেখা গেল মেডিক্যাল বোর্ডে শুধুই সরকার সমর্থিত চিকিৎসকরা আছেন। আমরা এতে অসন্তুষ্ট। কারণ, সরকার সমর্থিতদের দিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ সঠিক হবে না। তাই যারা আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতেন তাদের যুক্ত করে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক না রেখে যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাতে আমরা হতাশ হয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কখনও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে, তার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বে ৯০-এর মতো আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য গণতন্ত্রকামী সব দল, সংগঠন তথা ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ড. মোশাররফ বলেন, আমরা বিএনপির ৭ স্থায়ী কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম আমাদের নেত্রী অসুস্থ। প্রথম দাবি করেছিলাম তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য। যাতে তিনি তার পছন্দ মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। তারপর বলেছিলাম যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে যেহেতু তিনি সরকারের দায়িত্বে আছেন তার পছন্দের কিছু বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সরকারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে একসঙ্গে একটি মেডিক্যাল বোর্ড করে নেত্রীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথাও দিয়েছিলেন দুই পক্ষের চিকিৎসকদের দিয়ে বোর্ড গঠন করা হবে। তিনি বলেন, একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করারও বিধান বা রেওয়াজ নেই। তাই তাকে চিকিৎসা করে সুস্থ করাটাকে আমরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ড. মোশাররফ অভিযোগ করেন এ সরকার গত দশ বছরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে ৭৮ হাজার মামলায় প্রায় ১৮ লাখ লোককে আসামি করেছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে চালান দেয়া হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩৪ লাখ। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনসহ ২০ দলীয় জোটের ৭৭২ জনকে খুন ও ৪২৭ জনকে গুম করা হয়েছে। এখনও ১৫২ জন নিখোঁজ রয়েছে। এ সময় সরকারী বাহিনী অথবা সরকারী দলের লোকদের আক্রমণে আহত হয়েছেন ৩৩ হাজার নেতাকর্মী। সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে আজগুবি অভিযোগে মামলা হয়েছে প্রায় দুই হাজার, আসামি করা হয়েছে ২০ হাজার। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে লক্ষাধিক। এ সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে প্রতিদিন পুলিশ পোশাক পরে অথবা সাদা পোশাকে হানা দিচ্ছে। অবিলম্বে নেতাকর্মীদের নামে মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। ড. মোশাররফ বলেন, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে ১ হাজার ৭৩৪ জন খুন, জেলে মৃত্যু হয়েছে ৭০৬ জন, গুম হয়েছে ৪২৩ জন, ধর্র্ষিত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৪৭ নারী ও শিশু। রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুবরণ করেছে ১ হাজার ৯৯৯, আহত হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৪ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবও প্রায় একই রকম। ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎকণ্ঠিত। বিএনপির মহাসচিবের জাতিসংঘে যাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে যাওয়াটা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীকে কোন না কোনভাবে আঘাত করেছে, অথবা হতাশার কারণ হতে পারে, সে জন্যই তিনি ফখরুলের এ সফর নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। লিখিত বক্তব্যে প্রশাসন ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোন দল কিংবা দলীয় সরকারের নন। দেশের সংবিধান ও জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করবেন। কোন ব্যক্তিকে কিংবা দলকে ক্ষমতায় রাখা কিংবা আনার জন্য আপনারা কাজ করবেন না। ড. কামাল হোসেনদের বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনকে স্বাগত জানিয়ে মোশাররফ বলেন, জাতীয় ঐক্যকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী ও আনন্দিত যে, আমরা যে দাবি জানিয়েছি, বিএনপি ও ২০ দলের বাইরের অনেক দল এবং ব্যক্তি একই দাবি করেছেন। জাতীয় ঐক্যে জামায়াতকে নেয়া হচ্ছে না এ বিষয়টিকে বিএনপি কিভাবে নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, জাতীয় ঐক্যের যে ঘোষণা শনিবার দেয়া হয়েছে ওই বিষয় নিয়ে আমরা এখনও বসিনি। আর তাদের ঘোষণার মধ্যে জামায়াতকে নিয়ে কোন প্রশ্নও দেখিনি।
×