সমুদ্র হক ॥ ধুলার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজার কল্পগল্প নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন জুতা আবিষ্কার কবিতা। ধুলা আর ময়লা আবর্জনা পৃথিবী জুড়েই। উন্নত বিশ্বে পথঘাট পরিষ্কার থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও সেই পর্যায়ে আসেনি। আমাদের বাড়ির সামনে সামান্য ময়লা আবর্জনা থাকলে তা পরিষ্কার করি না। বলা হয়- আরে এ তো পৌরসভার কাজ। সত্তরের দশকের প্রথম ভাগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায় লেখা ভেসে উঠতো ; আপনি শুধু আপনার বাড়ির সামনের অংশটুকু পরিষ্কার রাখুন দেখবেন গোটা শহর পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রকৃতির ঝাড়ুদার কাক নিত্যদিন ভোরে নগরীর আবর্জনা পরিষ্কার করে। পাখি আর কতটুকু করে। এই অবস্থার উত্তরণে এগিয়ে এসেছে ‘পরিবর্তন চাই’ নামের একটি সংগঠন। তাদের অনেক কর্মসূচীর একটি-দেশটাকে পরিষ্কার করি। শনিবার সকালে এই কর্মসূচী নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথায় সমবেত হয় শতাধিক তরুণ-তরুণী। তাদের সঙ্গে ছিলেন বগুড়া পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান। প্রত্যেকের হাতে ঝাড়ু প্লাস্টিকের বেলচাসহ ধুলাবালি আবর্জনা পরিষ্কারের নানা সামগ্রী। ওই সময়ে পথচারীদের অনেকে তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারাও ময়লা পরিষ্কারের নেমে পড়ে। নগরীর অনেকটা এলাকার পথঘাট পরিষ্কার হয় এই দিনে। সংগঠনের কর্মীরা জানায়, এই দিন বগুড়াসহ সারাদেশে ১৬৪টি স্থানে দেড় লাখের বেশি স্বেচ্ছাসেবক একযোগে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে। এভাবে গড়ে উঠছে সচেতনতা।
তরুণ-তরুণীদের নিয়ে গঠিত‘ পরিবর্তন চাই’ সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০১৪ সালে। এর পর তারা নানা ব্যতিক্রমী কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামে। দেশের মানুষের ভাবনা চিন্তাকে সৃষ্টিশীলতায় আনতে মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তনকে তারা প্রাধান্য দেয়। পরবর্তী বছরে তারা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কে আবর্জনামুক্ত রাখার উদ্যোগ নিয়ে আবর্জনামুক্ত ক্যাম্পাস বানায়। ঢাকা টিচার্স স্টুডেন্ট সেন্টারে (টিএসসি) আবর্জনা পরিষ্কার করে ময়লা পথে না ফেলে ঝুড়িতে ফেলার ক্যাম্পেন করে। এভাবে তারা নানামুখী কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যায়। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে দেশটাকে পরিষ্কার করি কর্মসূচী বাস্তবায়িত হতে থাকে ঢাকা, গাজীপুর, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ সারা দেশে। একটি দিবস নির্ধারণ করে সেই দিন সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত দেশের মানুষ যে যেখানে থাকুক সেখানে ও আশপাশে নাগরিক স্থানগুলো যেমন রাস্তা, মাঠ, পার্ক, জলাশয় ইত্যাদিতে যতটুকু পারা যায় পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ২০১৪ সালে ৪৩টি জেলায় ২০ হাজারেরও বেশি, ২০১৬ সালে ৬৪টি জেলার একশ’টি স্থানে ৭০ হাজারেরও অধিক, ২০১৭ সালে ৬৪টি জেলায় একশ’টি স্থানে ১ লাখ ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী পরিচ্ছন্নতায় মাঠে নেমে পড়ে। চলতি বছর আরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে মাঠে নেমেছে।
সংগঠনের জেলা সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বগুড়ায় তাদের সঙ্গে ছিল বগুড়া ইয়থ ফোরাম, ভিন্নদৃষ্টি, গ্রীন ওয়ার্ল্ড। তাদের কর্মসূচীর মধ্যে আছে, পথিক বিরতি ঘরের বুট ক্যাম্প, বিভিন্ন স্থানে দখল করা নদী ও খাল পুনরুদ্ধার। সবুজ ঢাকা গড়ি উত্তরের অভিযানে উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক (প্রয়াত)। গত বছর স্বামীবাগে মিতালী বিদ্যাপীঠে সবুজ ইশকুল গড়ি কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সবুজ ইশকুলের শিক্ষার্থীরা জৈব ময়লা আবর্জনা দিয়ে কম্পোস্ট প্লান্টে সার তৈরি করবে- যা ব্যবহৃত হবে ফুলের বাগানে। এভাবে দেশে ১শ’টি সবুজ ইশকুল গড়ে তোলা হবে।
পরিবর্তন চাই প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে গত বছর ‘শর্ট এ্যান্ড ক্লিন’ শিরোনামে শর্টফিল্ম প্রতিযোগিতায় ৬২টি শর্ট ফ্লিম জমা পড়ে। এগুলো ইউটিউবে দেয়া হয়। বিচারকগণের রায় ও ইউটিউবের ভিউয়ের ওপর ভিত্তি করে ৫টি সেরা শর্ট ফিল্মকে পুরস্কৃত করা হয়।