ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চারটি আসনই উদ্ধার করতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে কোন্দল

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  চারটি আসনই উদ্ধার করতে চায় আওয়ামী লীগ,  বিএনপিতে কোন্দল

মহিউদ্দিন মুরাদ, লক্ষ্মীপুর ॥ এক সময় সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে লক্ষ্মীপুর পরিচিত ছিল। লক্ষ্মীপুর নাম শুনলেই ভীতির সঞ্চার হতো। তবে বর্তমানে সে পরিবেশ নেই। সন্ত্রাসী, খুন খারাবি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি আগের চেয়ে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের অনেক চেষ্টায় সেটি অনেকটা সম্ভব হয়েছে। অশান্ত লক্ষ্মীপুর বর্তমানে শান্ত হয়ে উঠেছে। এর মাঝে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে শান্ত লক্ষ্মীপুরে চারটি আসনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন। বর্তমানে চায়ের স্টলে, হাটে বাজারে, যেখানে সাধারণ মানুষের আড্ডা জমে উঠছে, সেখানেই চলছে ভোটের হিসেব-নিকেশ। বিগত দিনে কে কী কাজ করেছে, তৃণমূল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। বিগত দিনে জেলার চারটি আসনই বিএনপি তাদের ঘাঁটি হিসেবে দাবি করলেও বর্তমানে সেই অবস্থান নেই। আত্মকোন্দলে ভুগছে দলটি। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তথা ১৪ দলীয় জোট সরকার ২০০৮ সাল থেকে টানা দু’বার ক্ষমতা থাকার সুবাদে এলাকায় রাস্তাঘাট, পুল কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ দু’শতাধিক খাতে বিভিন্ন ভাতা প্রদান, কৃষি ভর্তুকি দানসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় বর্তমান সরকারের ওপর অনেকটাই খুশি এলাকার ভোটাররা। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চিন্তাভাবনা অনেকটা কাজ করছে। এরমধ্যে বিএনপি বিগত কয়েকটি বছর যাবত মাঠের রাজনীতি থেকে পিছিয়ে থাকার ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে দলটি নির্ভর করছে জামায়াতের ওপর। জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি না করতে পারায় বিএনপির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) ॥ সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যস্ততাও ততই বেড়ে চলেছে। ভোটারদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন এ সব সম্ভাব্য প্রার্থীরা। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে রশিদ মিয়া আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব এমএ আউয়াল এ আসন থেকে বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কয়েকভাগে বিভক্ত। গত ৭ এপ্রিল উপজেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। পরীক্ষিত-ত্যাগী কিছু নেতাকে উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে দলে ভেড়া কয়েক নব্য নেতা ও প্রবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। ৭১ সদস্যের প্রায় অধিকাংশ নেতাই ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অবস্থান করছেন। এতে আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের মাঠে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সংশয় রয়েছে। যার ফলে আগামী নির্বাচনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে তৃণমূল কর্মীরা আশঙ্কা করছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য লায়ন এম এ আউয়াল। সম্প্রতি মহাসচি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ায় নির্বাচনী হিসেবে নতুন সূত্র যোগ হয়েছে। জোটগত কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তার অব্যাহতিতে বর্তমানে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে এম এ আউয়াল বলেন, তিনি ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গেই রয়েছেন। ১৪ দল থেকে তিনি আবারও মনোনয়ন পাবেন এবং বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগেরও রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগ সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম, রামগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু, বিশিষ্ট ব্যাংকার শিল্পপতি রামগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ সহ-সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন খান, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও আ’লীগ জেলা কমিটির সাধারণ বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন, রামগঞ্জ পৌর মেয়র ও রামগঞ্জ পৌর আ’লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এম এ মমিন পাটওয়ারী। এর মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি ও আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড.আনোয়ার খান উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে, খাদ্য, বস্ত্র ও অর্থ সহায়তা এবং স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজ, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিচ্ছেন। সভা সমাবেশ করে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গাড়ি এবং স্বাস্থ্য খাতে গরিব রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে যুবলীগ প্রকাশ্যে তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। সব ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার তার পক্ষে ভোট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. আনোয়ার খান বলেন, অসহায় মানুষের পাশে থেকে আমি রামগঞ্জের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তথা তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার রূপকল্প ভিশন বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগ সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি একাধিকবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিলেও জোটগত কারণে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থীর পক্ষে দলের সিদ্ধান্তে তিনি নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। দলের সাংগঠনিক ভিত পাকাপোক্ত করতে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামোর উন্নয়নসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত বলে দাবি তার। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৩১ বছরে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা আমি। রামগঞ্জে আমার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। ’৯৬ সালে দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে ভোট করেছি। সেখানে পরিকল্পিতভাবে ভোট ডাকাতি করে আমাকে বিএনপি হারিয়েছে। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমি তার হয়ে কাজ করব। আ’লীগ জেলা কমিটির বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলনও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি দাবি করেন, দুঃসময়ে কর্মীদের পাশের্^ থেকে দলটি টিকিয়ে রেখেছি। দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনিও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। রামগঞ্জ আ’লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু বলেন, দলের মধ্যে কোন প্রকার কোন্দল নেই। যা যা করার নিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয়েছে। দলের দুঃসময়ে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে ছিলাম। মনোনয়ন পেলে আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি। পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রামগঞ্জ পৌর আ’লীগ সভাপতি। দলের জন্য নিবেদিত তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে এলাকার মানুষের পাশের্^ ছিলেন। আগামীতেও জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আগামীতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। মনোনয়নের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী বলে তার। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম এ মমিন পাটওয়ারীও নিয়মিত উঠান বৈঠক ও নারী সমাবেশ করছেন। তিনি সরকারের উন্নয়ন সাফল্য জনগণের কাছে তুলে ধরে শেখ হাসিনার জন্য নৌকায় ভোট চাইছেন। এদিকে বিএনপির প্রার্থীদের অস্বস্তি জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল (এলডিপি) নিয়ে। এ আসনে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন। তিনি রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টক শো-তে অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন। তবে এলডিপিকে এখানে ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় বিএনপি। এ ব্যাপারে এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জোটগত কারণে বিএনপি এ আসনে আমাকে মনোনয়ন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইতোমধ্যে হাইকমান্ড থেকে আমাকে সংকেত দেয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এদিকে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা সে প্রশ্নে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানান দলটির একাধিক প্রার্থী। বিএনপি থেকে সাবেক এমপি ও রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আমরা অংশ নিতে প্রস্তুত আছি। এখানে ৮০ ভাগ লোক আমাদের দল করে। তিনি দাবি করেন এলাকাটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি আবার মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হব। নাজিম উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ পাঁচজন মনোনয়ন চাইবেন। এর বাইরেও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাবেক সাংসদ এম এ গোফরান, জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ মনির হোসেন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) ॥ এ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুইবার নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু সেই খালেদার ঘরেই বিএনপি এখন বিধ্বস্ত। দলের সাধারণ নেতাকর্মী ও ভোট থাকলেও সিনিয়র নেতাদের গা-ছাড়া মনোভাব আর একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে দলটির কার্যক্রম। জোটের কারণে দশম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনটি ছেড়ে দিলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নোমান। তবে এবার আ’লীগ এ আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় অধ্যাপক ডাঃ এহসানুল কবির জগলুলকে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক। পরে জোটগত কারণে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিলে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নেন। কিন্তু এরপরও তিনি নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি। এ ব্যাপারে বর্তমান এমপি মোহাম্মদ নোমান বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট. নৌ-বন্দর ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী স্থাপনার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমার সততা দিয়ে দলমত নির্বিশেষে জনগণের সমঅধিকার নিশ্চিত করে আমি জনসমর্থন তৈরি করেছি। নিজে যেমন চাঁদাবাজি করিনি, তেমনি কোন চাঁদাবাজও সৃষ্টি করিনি। জনগণ আমার সঙ্গে আছেন, তারাই আমাকে বিজয়ী করবেন। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপা রয়েছে। জোটগত কারণে তাই মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এ আসনের আওয়ামী লীগের রাজনীতি মূলত রায়পুর থেকেই নিয়ন্ত্রণ হয়। তবে এখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিভক্তি স্পষ্ট। উপজেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুল পাঠান ও পৌর কমিটির আহ্বায়ক জামশেদ কবির বাকী বিল্লাহর ব্যক্তিগত অফিসকেন্দ্রিক রাজনীতি চলছে। নেতাকর্মীরা একজনের ব্যক্তিগত অফিসে গেলে অন্যজন বাঁকা চোখে তাকায়। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন বিপাকে। এ আসনে আ’লীগের ছয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এহসানুল কবির জগলুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, জেলা যুবলীগ সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাউদ্দিন টিপু ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের কমিটির সদস্য শামছুল ইসলাম পাটওয়ারী। অধ্যাপক ডাঃ এহসানুল কবির জগলুল বলেন, তৃণমূলের ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু। এরপর পেশাজীবী সংগঠন এবং সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। মনোনয়ন পেয়ে আমি নির্বাচিত হলে সারাদেশের মধ্যে এ আসনকে মডেল এবং আদর্শ এলাকা হিসেবে গড়ে তুলব। বেকার যুবকদের সরকারী ও ব্যক্তিগতভাবে চাকরি নিশ্চিত করাসহ এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপন করব। কর্মমুখী প্রকল্প চালু করব। সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ৯ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, স্বাধীনতার পরে আর এত বেশি উন্নয়ন হয়নি। নেত্রী যাকেই মনোনয়ন দেয়, আমরা তার হয়ে কাজ করব। আমি এমপি থাকাকালে যে অবদান রেখেছি এবং দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি সে কারণে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী। রায়পুর উপজেলা আ’লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, কর্মঠ একজন লোক হচ্ছেন হারুনুর রশিদ। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে সেটি হবে যথাযথ। আগের মতো উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। মনোনয়ন প্রত্যাশী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ এখন সুসংগঠিত। আগামী নির্বাচনে জেলার চারটি আসনেই দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। লক্ষ্মীপুর-২ আসনে দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের অনুরোধে নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে আমি নিজেও কাজ করছি। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তখন আওয়ামী লীগের একজন নেতাও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তারা এলাকায়ও ছিল না। আমি মাঠে থেকে নেতাকর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা করে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি উপহার দিতে পারব। এ ছাড়া সম্প্রতি কুয়েতের প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনআরবি ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল বলেন, মনোনয়ন পেয়ে আমি এমপি নির্বাচিত হলে সরকার যদি আমাকে এক’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এরই সঙ্গে আমি আরও এক’শ কোটি টাকা দিয়ে কাজ করব। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। যুবলীগ নেতা একেএম সালাউদ্দিন টিপু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী মনোয়ন দিলে আমার বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। শামছুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, এলাকায় উন্নয়ন ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমি মনোনয়ন চাইব। দল ও জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ছাত্রজীবন থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে আছি। বাশমী ট্রেড ইন্টার ন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল বাকিন ভূঁইয়া ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। এরপর থেকে তারা নির্বাচনী এলাকার বিভিন্নস্থানে সরকারের সাফল্যের বিভিন্ন প্রচার চালাচ্ছেন। এদিকে নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মাঠে তৎপরতা থাকলেও হামলা-মামলা ও পুলিশী হয়রানির কারণে বিএনপির প্রকাশ্যে প্রচার নেই। যদিও এ আসনে বিএনপির নীরব জনসমর্থন রয়েছে বলে দাবি করছে দলটি। তবে নেতাকর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান এবং বিভক্তি রয়েছে। এতে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা ক্ষমতার সময়ে সুফল ভোগ করা নেতাদের থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এক সময়ের জনপ্রিয় নেতাদের রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখার কারণে তৃণমূলে যেন ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে দলটি। এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি জেলা কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ হলে আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করব। এখানে বিএনপি’র ঘাঁটি দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন করলে আসনটিতে আমি পুনর্নির্বাচিত হব। অপরদিকে খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্নেল (অব) আবদুল মজিদ মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকেও প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানা গেছে। লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) ॥ এক সময়ের সন্ত্রাসী খুনোখুনির জনপদ বর্তমানে লক্ষ্মীপুর সদর অনেকটাই শান্ত। লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে সন্ত্রাসরোধে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় পুলিশ-র‌্যাবসহ প্রশাসনের তৎপরতায় শান্তি ফিরেছে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নও জনগণকে আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা আস্থা ফিরিয়েছে। সংসদ নির্বাচনের ভোটের মাঠে উন্নয়ন আর সন্ত্রাসরোধই এখন আওয়ামী লীগের ভরসা। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র জন্য সদর এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত জেলার রাজনীতি এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। বিএনপি আসনটিকে নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে দাবি করলেও মূলত তাদের ভরসা জামায়াতের ওপর। জামায়াতে ইসলাম ছাড়া তাদের বিজয়ী হওয়া দুরূহ ব্যাপার। আধিপত্য নিয়ে বিভক্তির কারণেই বিএনপির অবস্থা হ-য-ব-র-ল। দলীয় প্রতীক ধানের শীষই তাদের একমাত্র পুঁজি। দলটির কোন্দল বর্তমানে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি মিলে এক প্রান্তে সভা-সমাবেশ করছেন এ্যানির বাসায় বা দলীয় কার্যালয়ে। অপরদিকে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু মিলে তার অনুসারীরা অনুরূপ কর্মসূচী পালন করছে অপরপ্রান্তে তার বাসভবন প্রাঙ্গণে বা উত্তর তেমুহানিতে। তিন বছর ধরে লক্ষ্মীপুরে তিন নেতার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু, সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহেরের হয়ে নেতাকর্মীরা বিভক্ত রয়েছে। সম্প্রতি সদর আসনের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামালকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী হওয়ায় কিছুটা হলেও পরিস্থিতি বদলে গেছে দলটির। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। তবে এ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও গত স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় পূর্ণ প্যানেলই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের একেএম শাহজাহান কামাল এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বেসাময়িক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। প্রবীণ এ রাজনীতিক প্রথম ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন- আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু, ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তার, সজিব গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, জেলা আওয়ামী লীগ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শিল্পপতি দেলোয়ার হোসেন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সোয়েব হোসেন ফারুক। এ বিষয়ে মন্ত্রী শাহজাহান কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। আমার এলাকায়ই ইতোমধ্যে রাস্তা, স্কুল-কলেজসহ সরকারী-বেসরকারী স্থাপনার প্রায় তিন শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে জনগুরুত্বপূর্ণ যে ২৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেছেন তা বাস্তবায়নে আমি কাজ করছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সরকারের বিকল্প নেই। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি নিয়মিত ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জনগণের কাছে সরকারের সাফল্য তুলে ধরছেন। এ সময় তিনি শেখ হাসিনার জন্য নৌকা মার্কা ভোট চাইছেন। পিঙ্কু বলেন, এক সময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল লক্ষ্মীপুর। আওয়ামী লীগ সরকারই কঠোর হস্তক্ষেপ করে সন্ত্রাসী বাহিনী নির্মূল করে জনগণকে শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন সাফল্য তুলে ধরে আমি প্রচার চালাচ্ছি। দলে আমার ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায়ন করে জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন আদর্শিক কর্মী হয়ে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। দলের হয়ে মানবিক সমাজ গঠনে জনগণের জন্য কল্যাণমুখী কাজ করছি। প্রতিটি ইউনিয়নে ছিন্নমূল মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। নেত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে মনোনয়ন দেবেন। তাহলে নেত্রীকে আসনটি উপহার দিতে পারব। জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন বলেন, আমি তিনবার সাধারণ সম্পাদক এবং দু’বার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলাম। দলের দুঃসময়ে আমি হাল ধরে রেখেছি। মনোনয়নের বিষয়ে আমি সবচেয়ে বেশি দাবিদার। নেত্রী আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে নেত্রীর সম্মান রক্ষা করতে চেষ্টা করব। জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাউদ্দিন টিপু বলেন, বর্তমানে যুবলীগ তৃণমূল পর্যায়ে সুসংহত। আমি নেত্রীর জন্য তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছি। ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত সম্মেলন করেছি। যেটি অন্যদের করা সম্ভব হয়নি। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব বলে আশাবাদী। শিল্পপতি এম এ হাশেম বলেন, শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আগেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি উপহার দিতে পারব। তবে ২০০৮ সালে নির্বাচন করে তিনি বিএনপির কাছে পরাজিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি জনগণের সঙ্গে আছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচিত হব। এদিকে, আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে দুইবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। মাঝে-মধ্যে এলাকায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং নিয়মিত হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও পরে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ্যানি ছাড়াও এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান হাসিব। এ ব্যাপারে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমাদের দল সুসংগঠিত। বিএনপির আন্দোলনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এর মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। মুক্তির পরই অধিকার আদায়ের জন্য নির্বাচনমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার নিয়মিত সাংগঠনিক যোগাযোগ রয়েছে। সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমি সকল আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছি তবুও আদর্শচ্যুত হইনি। সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য আমি দলকে সংগঠিত রেখেছি। ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায়ন করে আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আস্থা রাখি। তবে দলীয় কোন্দলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দেননি। অপরদিকে নাগরিক কমিটি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন শিল্পপতি ডাঃ আনোয়ারুল আজিম। এ বিষয়ে তিনি নির্বাচনী এলাকায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছেন অনেক দিন থেকে। তিনি বলেন, এলাকার বহু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আগামীতে এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম আর মাসুদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এম আর মাসুদ বলেন, দলের দুঃসময় ২০০৮ সালে আমি লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩ আসনে প্রার্থী ছিলাম। পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত কারণে দলের সিদ্ধান্তে আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। দল আমাকে যেখানেই মনোনয়ন দেয়, আমি নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুত রয়েছি। জেএসডি সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, জনগণ যেন স্বাধীন দেশে-স্বাধীনভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারে- সরকারকে সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে উৎসবমুখর। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আমি নির্বাচনে অংশ নেব। ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখা সভাপতি থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলপুর) ॥ এ আসনটি ক্ষমতাসীন দল হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। স্বাধীনতার পর একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মেঘনার ভাঙ্গন রোধ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে বলে স্থানীয় লোকেরা জানায়। স্বাধীনতার পর নদী ভাঙ্গন রোধে এত বৃহৎ প্রকল্প আর নেয়া হয়নি। নদী ভাঙ্গন ছিল রামগতিতে আতঙ্ক। বর্তমানে আলেকজান্ডারসহ দক্ষিণে নদী ভাঙ্গন অনেকটা রোধ হয়েছে। এতে মানুষ নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ভাগিদার। এ আসনে যে কোন সরকারের আমলের চেয়ে বর্তমান সরকারের অবদানই বেশি। গত নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ওরফে আবদুল্লাহ আল মামুন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী। বর্তমান এমপি ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সহসম্পাদক মোহাম্মদ আবদুজ্জাহের সাজু, ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজভীরুল হক অনু ও কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. শামছুল কবির। এ ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় গত সাড়ে চার বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এর মধ্যে মেঘনা ভাঙ্গন রোধসহ বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলমান। রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অবকাঠামোর উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করছে। এতে সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে। আমাকে আবার মনোনয়ন দিলে জনগণ তাদের আস্থা ও বিশ্বাস থেকে শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দেব। আমার নেতৃত্বে বর্তমানে দল (আওয়ামী লীগ) সংগঠিত এবং অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন বেশি শক্তিশালী। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই বলে তিনি দাবি করেন। কেন্দ্রীয় নেত্রী ফরিদুন্নাহার লাইলী সংরক্ষিত এ আসনের সাবেক এমপি ছিলেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে সরকারের সাফল্য ও উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, রামগতি ও কমলনগরের মানুষ আগে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারই এ জনপদে উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যোন্নোয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমি তাদের বিপদে-আপদে পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনবে। সে লক্ষ্যে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুজ্জাহের সাজু বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। নদী ভাঙ্গন রোধসহ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব। কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা তাজভীরুল হক অনু বলেন, রামগতি-কমলনগরকে রক্ষা করতে সরকার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দে কাজ করিয়ে হাজার-হাজার গৃহহীন মানুষ ও কয়েক শ’ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করেছে। এজন্য জনগণ আজীবন শেখ হাসিনাকে মনে রাখবে। আমি এ আসনের মানুষের পাশে সব সময় থাকতে চাই। এদিকে এ আসনের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডির) সভাপতি ও স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছেন। তিনি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সম্প্রতি এলাকায় আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দেয়ায় ভিন্ন আমেজে রয়েছে তার দলের অনুসারীরা। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরাও রাজনীতি সক্রিয় হয়ে উঠছেন। আ স ম আবদুর রব বলেন, আমি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এমন নির্বাচন চাই যেখানে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। রক্তারক্তি আর খুনোখুনি হবে না। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবে। ভোটকেন্দ্র সবার জন্য সুরক্ষিত থাকবে। অপরদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে এ আসন দলকে চাঙ্গা করতে কাজ করছেন সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজাম ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু। দলটিতে আরও দু’জন মনোয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ সামছুল আলম ও কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন। সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের নীলনক্সার কারণে কারাবন্দী। এখন নেত্রীর মুক্তি ছাড়া অন্য কোন চিন্তা করছি না। তারেক রহমান দলের দায়িত্বে আছেন। দল নির্বাচনে যাবে কি, না গেলে কী করতে হবে- এ ব্যাপারে। তিনি (তারেক রহমান) যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই কাজ করব। এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম বলেন, আমি রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অসহায়দের আর্থিক অনুদান দিয়ে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁতী দলের নেতা আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন এখন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমি তৃণমূলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। রামগতি ও কমলনগরের মানুষের সেবা করার জন্যই আমি কাজ করব। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন মওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ।
×