ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯ সালের মার্চে ডাকসু নির্বাচন হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 ২০১৯ সালের  মার্চে ডাকসু  নির্বাচন  হতে পারে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বিষয়ে একমত ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠন। তবে ডাকসু নির্বাচনের আগেই অধিকাংশ সংগঠন রাজনৈতিক সহাবস্থানের দাবি জানিয়েছে। রবিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চুয়াল শ্রেণীকক্ষে ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে ছাত্র সংগঠনের নেতারা এই দাবির কথা জানান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। বৈঠকটি বেলা ১২টায় শুরু হয়ে পৌনে চারটার দিকে শেষ হয়। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ ও অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী প্রমুখ। বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি। আমরা কোন নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেইনি। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন হবে। সেটা আগামী তিন চার মাসের মধ্যেও হতে পারে। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সহাবস্থানের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রতিটি হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। বাকিরা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। সব সংগঠন সহাবস্থানেই রয়েছে। ছাত্রদল যদি ক্যাম্পাসে আসার সময় ককটেল বা পেট্রোল বোমা না আনার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে তাদের সঙ্গে সহাবস্থানে আমাদের আপত্তি নেই। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এ নির্বাচনের আগে সহাবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রশাসনকে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন তা পূরণ করতে সক্ষম হলেই বুঝব যে তারা ডাকসু নির্বাচনের প্রতি আন্তরিক। এছাড়া হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করতে হবে। তখনই ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, আমরা ডাকসু নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানতে চেয়েছি। কিন্তু তারা জানায়নি। কেউ কেউ ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরের বিষয় নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু আমরা দ্রুততম সময়ে আমরা ডাকসু নির্বাচন চাই। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবীব বলেন, আমরা চাই নবেম্বরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন পর অত্যন্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, সংসদীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে আলোচনা করেছে। তাদের মতামতগুলো পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজনে এ ধরনের বৈঠক আরও দরকার হতে পারে। সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান একটি প্রক্রিয়ার অংশ। তার জন্য যা যা করণীয় তা প্রভোস্ট কমিটি সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছিলাম। এই টার্গেটকে সামনে রেখেই ভোটার তালিকা প্রণয়ন চলছে। তিনি অক্টোবরের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম মধুর ক্যান্টিন থেকে সভাস্থলে আসেন। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী প্রক্টর উপাচার্যের কার্যালয়ে উপস্থিত হন। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্রফন্টের নেতারা আলোচনা শুরুর কিছুক্ষণ পর সভাকক্ষে উপস্থিত হন। বৈঠক শেষে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের সঙ্গে কোলাকুলি করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী বাইরে অবস্থান করেছিল। অন্যদিকে ছাত্রদলের ছিল শুধু দুইজন নেতা। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তাদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসেন। এর পরে তারা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। শেষে চলে যাওয়ার আগে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের এই দুই নেতা কোলাকুলি করেন। ডাকসু নির্বাচন করার উদ্যোগ না নেয়ায় আদালত অবমাননার মামলা হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার এই আলোচনার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন সামনের কাতারে। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও সে নির্বাচন আর হয়নি। চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি এক রায়ে হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাত মাসেও নির্বাচনের কোন আয়োজন দৃশ্যমান না হওয়ায় গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার জবাব না পেয়ে গত বুধবার তিনি হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন উপাচার্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
×