ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ঐক্যের পাঁচ দফা দাবি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের

এখন মামার বাড়ির আব্দার করলে তো চলবে না

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  এখন মামার বাড়ির আব্দার করলে  তো চলবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ভোটের সময় বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনসহ ‘জাতীয় ঐক্যে’র পাঁচ দফা দাবিকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই দাবিগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অবান্তর, অপ্রয়োজনীয় ও অসাংবিধানিক। এখন সংসদ ভেঙ্গে নির্দলীয় সরকার করারতো প্রয়োজন নেই। রবিবার দুপুরে ইনস্টিটউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) কাউন্সিল হলে সংগঠনটির ৪১তম কাউন্সিল অধিবেশনে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের বিকল্প কি? আমাদের বিকল্প হচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। যাদের দুঃশাসনে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। ব্লাডি পলিটিক্স ছিল। সেই নির্যাতন অন্ধকারে কি কেউ ফিরে যেতে চান? আমরা মনে করি না আমাদের সবকিছু শুদ্ধ। আমাদের ভুলত্রুটিও আছে কিন্তু ভুলত্রুটি সংশোধনের সৎসাহস শেখ হাসিনার রয়েছে। তিনি বলেন, দলের মধ্যে কেউ অন্যায় করলে তাকে আমরা শাস্তি দেই। কিন্তু আমাদের বিকল্প যারা ভাবেন, তারাতো নিজেদের লোকদের শাসন করেন নেই। আইডিইবির সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম হামিদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান। জাতীয় ঐক্যের দাবিগুলো প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে আমাদের দেশে। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনের আর দেড়মাস বাকি আছে। এখন মামার বাড়ির আবদার করলেতো চলবে না। তিনি বলেন, সংসদের শেষ অধিবেশন অক্টোবর মাসের ২০ তারিখের আগেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর আর সংসদ বসবে না নির্বাচন পর্যন্ত। এ সংসদ সদস্যদের কোন ক্ষমতা ও কার্যকরিতা থাকবে না। কাজেই এটা ভেঙ্গে দেয়া, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো রেখে এবং অকার্যকর এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়, আমি বুঝতে পারি না। জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন সেনা মোতায়েন হবে না, এটা আমরা বলব না। প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন হবে। যদি সময় এবং পরিস্থিতিতে মোতায়েন করা দরকার হয়, সেই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করলে, সরকার প্রয়োজনে এবং বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে কিভাবে মোতায়েন হবে সেই সিদ্ধান্ত নিবে। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় এখন নেই। এখানেতো (ইসি) বিএনপিরও প্রতিনিধি রয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই রাষ্ট্রপতি এ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। যুক্তফ্রন্টের পাঁচ দফা বিএনপির দাবির সঙ্গে মিলে গেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, এটা মিলে গেল কিনা, তা দেখা আমাদের কোন বিষয় না। বিএনপি কার সঙ্গে যাবে, কিভাবে যাবে তা আমাদের বিষয় না। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলেছেন বিএনপির প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলাম থাকলে তারা বিএনপির সঙ্গে যাবে না। এখানেতো আমাদের কোন মন্তব্য নেই। তবে নতুন নতুন জোট হলে স্বাগত, শত ফুল ফুটুক। নতুন নতুন জোট হোক, নির্বাচন করুক। বিএনপি মহাসচিবের যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাহস থাকলে জনগণের কাছে নালিশ করুন। বিদেশে গিয়ে নালিশ করে দেশকে কেন খাটো করছেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণ, বাস্তবে দেখা গেল এমন কোন আমন্ত্রণ নেই। কি রকম তারা প্রতারণা করে, রাজনীতে ছদ্মবেশী প্রতারণা পার্টির নাম বিএনপি। বিএনপি এখন বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশ কান্নাকাটি পার্টি হয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে যুক্তফ্রন্টই বিএনপির বিকল্প কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, সেটা আমরা জানি না। তবে আমরা জানি বিএনপি না এলেও এবার প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব নেই। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতার ফাঁদ তৈরি কোন সুযোগ নেই। সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই এবার নির্বাচিত হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশে কারও জন্য বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, গণভবনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকের এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে সরকার এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যাতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে এ কথা পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দিতে তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আজকে আমি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দিয়েছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাস্তাঘাট বন্ধ করে সমাবেশ না করে, পল্টনে রাস্তাবন্ধ করে সমাবেশ, প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ, এসবের প্রয়োজন নেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উন্মুক্ত, যারাই অনুমতি চাইবে পুলিশ অনুমতি দিবে। এ বিষয়ে সরকারের কোন বাধা ছিল না, পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক সময় অনেকই অনুমতি দেয় না। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন নিবন্ধিত যেসব দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি চাইবেন কোন সমস্যা হবে না। সবাই অনুমতি পাবে। দলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন ॥ নির্বাচন সামনে রেখে অসুস্থ প্রতিযোগিতা না করার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রবিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র ভিক্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যশনালের আয়োজনে নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিরাই মনোনয়ন পাবেন। জনগন যাকে ভোট দিবে আমরা তাকেই মনোনয়ন দিব। প্রতি ছয়মাস অন্তর আমাদের পার্টির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঁচটি জরিপ জমা হচ্ছে। সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন। তাই এই মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করা যাবে না, কোন ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেন না হয়। যারা যোগ্য তারাই মনোনয়ন পাবে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীদের পৌঁছে দিতে আমাদের নির্দেশ দিবেন। এই সিদ্ধান্ত পেলেই আমরা সবার কাছে পৌঁছে দিব।
×