ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াতের মা খালেদা, ভাই তারেকের সঙ্গে জোট?

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জামায়াতের মা খালেদা, ভাই তারেকের সঙ্গে জোট?

পড়ছিলাম ক্লারা সেৎকিনের লেনিনের সঙ্গে কথোপকথনের নোটবই। লেনিনের অসাধারণ দূরদৃষ্টি, মার্কসবাদকে বাস্তবে রূপায়িত করার অনন্যসাধারণ ধীশক্তি আর বঙ্গবন্ধুর মতো কৃষক-শ্রমিকের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবন থেকে মুক্তির কৌশল উদ্ভাবনের কথা। বারবার চোখ ভিজে উঠছিল অশ্রুজলে, কেন লেনিনকে এত অসময়ে চলে যেতে হলো, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সূচনাতে যেমন বঙ্গবন্ধুকে ধর্মনিরপেক্ষ, উন্নত রাষ্ট্র ও গর্বিত কৃষক-শ্রমিকের সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনের সূচনায় নিহত হতে হলো! কিন্তু এর মধ্যেই দেশের বর্তমান রাজনীতির হালচাল সম্পর্কে প্রকাশিত নানা তথ্যপূর্ণ সংবাদ দৈনিক সংবাদপত্রে দেখছিলাম। আকস্মিকভাবে মাথায় বিদ্যুতের মতো চমক দিয়ে উঠল একটা অশনি সঙ্কেত! মনে প্রশ্ন ভেসে উঠল, কেন হাজার হাজার সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট, প্রগতিশীল, বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিল্পী থাকা সত্ত্বেও জার্মানিতে হিটলার ও নাজিবাদী খুনী দলের উত্থান হতে পেরেছিল? বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক, দার্শনিকদের মতো অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক, ডেমোক্র্যাটিক রাজনৈতিক নেতাদের নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা, জোরালো প্রতিবাদী দৃঢ় অবস্থানের অভাবে বর্ণবাদী নাজিদের প্রতি লাখ লাখ সাধারণ মানুষ আত্মসমর্পণ করে ‘জার্মান জাতীয়তাবাদের’ শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করে! ১৯৪০-৪১ সালের জার্মানিতে এর ফলে জন্ম নিয়েছিল মানব ইতিহাসের ভিন্ন বর্ণবাদী ইহুদী, কমিউনিস্টবিরোধী হলোকস্ট, হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল জার্মান জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার নামে! খ্যাতনামা আইনবিদের(!) নেতৃত্বে কোন কোন রাজনীতিক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবীকে প্রায় একই রকম অবস্থানে দেখা যাচ্ছে কেন- এটাই এখন বড় প্রশ্ন। কেন এরা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল, নেতা-নেত্রীদের নির্বাচনে পরাজিত করার লক্ষ্যে খুব সম্ভব আইএসআইয়ের ফর্মুলার কাছে আত্মসমর্পণ করে, নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আরও একবার ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছেন? এ ফর্মুলার ফলে কি কি হতে পারে যদি না জনগণ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দৃঢ়ভাবে আস্থাবান রাজনীতিক ও অন্যান্য পেশাজীবী জনগণকে সচেতন করে এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ না করে- ১. জামায়াতের আশ্রয়দাত্রী ও দাতা, জামায়াতের মা খালেদা ও জামায়াতের ভাই তারেক যে ক্ষমতায় থাকাকালে বলেছিল জামায়াত আর বিএনপি মায়ের পেটের ভাই, তাদের নেতৃত্বের জোটে প্রখ্যাত আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পেশাজীবী ও রাজনীতিক জোট গঠন করবে। ২. আইএসআইয়ের ফর্মুলা অনুসারে জামায়াত-বিএনপিকে জোটে তাদের ‘বাদ’ রাখার সাময়িক কৌশল অনুমোদন করবে সম্ভবত যাতে ওই প্রখ্যাত আইনজীবী ও ‘জামায়াতের সঙ্গে জোট নয়’ শর্তটি মেনে খুব সহজে বিএনপি জোট গঠন করতে সক্ষম হয়! জামায়াত তো জানেই যে, খালেদা তাদের সুরক্ষাকারী এবং তারেক তাদের রক্তের ভাই। সুতরাং সাময়িক এ কৌশলটি আখেরে তাদের আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার গ্যারান্টি দেবে। দীর্ঘকালীন লাভের জন্য সাময়িক মৌখিক সম্মতি জামায়াতের জন্য তো কিছুই নয়। ৩. মির্জা ফখরুল বলেছে, কিছু ‘স্যাক্রিফাইস’ করে জোট গঠন করা হবে। ‘জামায়াত’ সেই ‘স্যাক্রিফাইসটি’ করবে। ৪. জনগণ বিস্মিত হয়ে দেখবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী মহাজোট যারা দেশকে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে, যা দৃশ্যমান, তাদের পরাজিত করার জন্য ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য’ গণতন্ত্র ধ্বংসকারী, হত্যা ও চরম দুর্নীতিভিত্তিক ষড়যন্ত্র এবং অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী খালেদা ও তারেকের নেতৃত্বে জোট গঠন করছে খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকবৃন্দ! এর চেয়ে বড় চমক এবং দুঃখজনক ঘটনা আর কোনটি হবে না তা বলাই বাহুল্য। ৫. বিএনপির মির্জা ফখরুল খুব সম্ভব জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করে আসবে যে, বিএনপি ‘জামায়াত’কে বাদ দিয়েছে এবং খ্যাতনামা আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিএনপি জোট গঠন করে নির্বাচনে যাচ্ছে। তবে তাদের এ ‘স্যাক্রিফাইসের’ জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে দিতে তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। বিএনপি এমন আবদার করবে বলে মনে হয়। ৬. জাতিসংঘ এমন অনুরোধ প্রত্যক্ষ করবে বলে মনে হয় না। সম্ভবত তারা সব দলের জন্য সমান সুযোগ দিতে সরকারকে অনুরোধ করবে। কেননা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত- সব দেশেই শেষ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে কাজ করে। ৭. নির্বাচনের কোনভাবে যদি বিএনপি ‘জামায়াত বর্জনের’ কৌশলের পর গঠন করা জোটটি বিজয়ী হয় তাহলে মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ইত্যাদি পদে নবগঠিত জোটে যোগ দেয়া প্রখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধারা সহজে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু অদূরে অপেক্ষারত খালেদার পুত্র-জামায়াত তার ‘স্যাক্রিফাইসের’ পুরস্কার দাবি করবে না তা কি হয়? এই কৌশলে খালেদা, তারেক দেশে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই প্রথম পুরস্কৃত করবে জামায়াতকে, প্রখ্যাত ব্যক্তিদের আগেই! কেননা, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য অর্জিত হলে অন্য সবকিছু করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব। জামায়াতকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করে মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করলে তখন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীদের কিইবা করার থাকবে বিদেশে চলে যাওয়া ছাড়া? কিন্তু আমাদের দুশ্চিন্তা হচ্ছে মহাজোটের বিজয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা, অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নত বাংলাদেশের যাত্রাপথকে কিভাবে অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধপন্থী তরুণ-তরুণীরা নানারকম ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হয়ে সরব, সক্রিয় প্রচার-প্রচারণায় যোগ দেবে। তারা হিটলারের সময়ের মতো জার্মানের লাখ লাখ বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও জনসাধারণের মতো নিষ্ক্রিয় এবং নীরব না থেকে জামায়াত-জঙ্গীদের মা ও ভাইদের উত্থানের সব পথ ধ্বংস করে দেবে। তাদের সব ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল নির্মূল করে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করবে। শত্রুকে চিনতে পারলে, তাকে পরাস্ত করা কঠিন কোন কাজ নয়। আজকের সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভান্ডারকে হাতিয়ার করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বিজয়ী হতে হবে। নতুবা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে অন্ধকার যুগ নেমে আসবে। তাই তরুণ-প্রৌঢ় সবাই সতর্ক থাকুন এবং সক্রিয় হোন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×