ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাবার কিনতে ঘড়ি বন্ধক রাখতেন নারী সাংবাদিক

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  খাবার কিনতে ঘড়ি বন্ধক  রাখতেন নারী সাংবাদিক

চল্লিশের দশকে কোন আফ্রিকান-আমেরিকান কিংবা নারীকে হোয়াইট হাউসের প্রতিবেদক হিসেবে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল একেবারেই বেমানান, অথচ এলিস ডানিঙ্গান ছিলেন দুটোই। কেন্টাকিতে জন্ম নেয়া এ সাংবাদিকই প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেস, সুপ্রীমকোর্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কভার করার সুযোগ পেয়েছিলেন। -খবর এনডিটিভির। ওয়াশিংটনে পেশাদারি জীবনের চূড়ায় থাকা অবস্থাতেও খাবার কিনতে ডানিঙ্গানকে প্রতি শনিবার রাতেই ঘড়ি বন্ধক রাখতে হতো, সোমবার সকালে বেতনের চেক আসার আগ পর্যন্ত ওই অর্থই ছিল তার সম্বল। ‘এটা ছিল অপমানজনক অনুশীলন। কখনই ৫ ডলারের বেশি পেতাম না, কেবল রবিবারের রাতের খাবার পর্যন্তই চলত,’ ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘এ ব্ল্যাক ওমেন’স এক্সপেরিয়েন্স- ফ্রম স্কুলহাউস টু হোয়াইট হাউসে’ এমনটাই লিখেছিলেন এ নারী সাংবাদিক। টাকা নিয়েই ছুটতেন ওয়াশিংটনের ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার ব্রুকল্যান্ড এলাকার এক কামরার বেসমেন্ট এ্যাপার্টমেন্টে, ভাড়ার টাকা বাঁচাতে যেখানে তাকে ফার্নেসের কয়লা ভাঙতে হতো। ১৯৪৭ সালের পর থেকে টানা ১৪ বছর এ্যাসোসিয়েটেড নিগ্রো প্রেসের ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান ছিলেন ডানিঙ্গান। ‘কৃষ্ণাঙ্গ পাঠকদের জন্য এ্যাসোসিয়েটেড নিগ্রো প্রেস ছিল সিএনএন, এমএসএনবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্টের যৌথ সংমিশ্রণ। এটি বিক্ষোভের জন্ম দিত, কৃষ্ণাঙ্গদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রতিবাদ জানানো সংগঠনগুলোকে দিত উদ্দীপনা,’ বলেন বর্ণবাদের ইতিহাস নিয়ে কাজ করার জন্য খ্যাত হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গেরাল্ড হর্নে। ১৯৪০ সালের মধ্যেই ওই ‘ব্ল্যাক প্রেস’-এর পাঠক প্রায় ১৩ লাখে পৌঁছে গিয়েছিল বলেও এক বইতে জানান এ ইতিহাসবিদ। ‘১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে সাদাদের কোন গণমাধ্যমই কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাপত না। এলিস তিনটি প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তিনি যা বলতেন অনেক সময়ই তারা (প্রেসিডেন্ট) তা পছন্দ করতেন না,’ বলেছেন ডানিঙ্গানের আত্মজীবনীর সম্পাদনাকারী ক্যারল ম্যাককেব বুকার। ২০১৫ সালে বুকার ‘এ ব্ল্যাক ওমেন’স এক্সপেরিয়েন্স- ফ্রম স্কুলহাউস টু হোয়াইট হাউস’ বইটি পুনঃপ্রকাশ করেছিলেন। হোয়াইট হাউসের প্রতিবেদক হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের সঙ্গে ওয়েস্ট কোস্ট সফরে যাওয়ার সুযোগ হয় ডানিঙ্গানের। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যেতে তখন ‘এখনকার হিসেবে এক থেকে ১০ হাজার ডলারের মতো’ খরচ হতো; এ্যাসোসিয়েটেড নিগ্রো প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ক্লড বার্নেটকে ওই অর্থ দিতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে, ডানিঙ্গানের প্রতি ক্লডের জবাব ছিল, ‘নারীরা এ ধরনের সফরে যায় না।’ ডানিঙ্গান নিজস্ব উপায়েই ওই অর্থ জোগাড় করেছিলেন, ফিরেই লিখেছিলেন সাড়াজাগানো প্রতিবেদন, যার শিরোনাম ছিল- ‘মধ্যরাতে পাজামা পরা প্রেসিডেন্ট মুখোমুখি হলেন নাগরিক অধিকারের’। মন্টানার মিসৌলায় প্রেসিডেন্টের জন্য রেলস্টেশনে অপেক্ষারত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে ঢিলেঢালা গাউন পরেই প্ল্যাটফর্মে নেমেছিলেন ট্রুম্যান; সেখানেই এক ছাত্র ‘প্রেসিডেন্ট, নাগরিক অধিকার সম্পর্কে আপনার মতামত কি’ জানতে চেয়েছিলেন; তা নিয়েই ছিল ডানিঙ্গানের ওই প্রতিবেদন।
×