ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-আফগানিস্তান সরাসরি বাণিজ্য

স্থলপথ ব্যবহার করতে দেবে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্থলপথ ব্যবহার করতে দেবে পাকিস্তান

পাকিস্তান আফগানিস্তানের সঙ্গে স্থলপথ ব্যবহারের সুবিধাসহ বাণিজ্য আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে একজন সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিক জানিয়েছেন। চলতি বছর আরও আগের দিকে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে স্থলপথ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে ভারত ও আফগানিস্তান সরাসরি বাণিজ্য হতে পারে। ডন। আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বাস ইকোনমিক টাইমস পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, পাকিস্তানের ভূখ-কে ব্যবহার করে আফগানিস্তান ও ভারত যেন বাণিজ্য করতে পারে সে উদ্দেশে ইসলামাবাদ মাস দুয়েক আগে কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে। বাস মনে করেন বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পাকিস্তান এর আগে ভারত ও আফগানিস্তানকে এ ধরনের সুযোগ দিতে রাজি হয়নি। বাস মনে করেন, আফগানিস্তান থেকে আকাশ পথে ভারতে রফতানি বৃদ্ধি ঘটা এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তান দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে থাকতে পারে। মুম্বাইয়ে ইন্ডিয়া-আফগানিস্তান ট্রেড শো’তে যোগ দিতে গিয়ে তিনি ওই পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আফগানিস্তানে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছে। গত বছর দিল্লীতে অনুষ্ঠিত এই এক শো’তেই বিভিন্ন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ২৭ মিলিয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর গত প্রায় এক বছরে অন্যান্য ভারতীয় কোম্পানি ২শ’ মিলিয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। এসব প্রস্তাবের বেশিরভাই বাস্তবায়িত হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ জড়িয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলো পারস্পরিক স্বার্থেই নিজেদের রুটগুলো ব্যবহার করতে পারে। বছর খানেক আগে আফগানিস্তান স্থলপথে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পাকিস্তানের ওয়াগা সীমান্ত ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু ইসলামাবাদ তা দিতে সরাসরি অস্বীকার করে। ইসলামাবাদে পাক-আফগান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন বা জেইসি’র বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে অংশ নিয়ে ছিলেন পাক সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এবং আফগান অর্থমন্ত্রী আকিল আহমেদ হাকিমি। এতে ওয়াগা-আত্তারি সীমান্ত দিয়ে আফগান ট্রাক বহর নয়াদিল্লী পর্যন্ত যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এ আহ্বান নাকচ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। জবাবে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে তাজিকিস্তানে যাওয়ার পাকিস্তানের অনুরোধ নাকচ করে দেয় কাবুল। আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইরানের ওপর তার দেশ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ইরানের চাবাহার বন্দর কিভাবে ব্যবহার করবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে ভারত। গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ভারত সফর করেন। ভারত তখন মার্কিন মন্ত্রীদের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। চাবাহার বন্দর যথাযথভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটি মনে করে না যে সামরিক উপায়ে আফগানিস্তানে লড়াইয়ে জয়লাভ করা সম্ভব। বরং এই সঙ্কট সমাধানের উপায় রাজনৈতিক সমাধান। ২০১৬ সালের মে মাসে ওমান উপসাগরের উপর চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত, ইরান ও আফগানিস্তান চুক্তিবদ্ধ হয়। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম জলসীমার কাছে অবস্থিত চাবাহার বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে ভারত। বিনিময়ে ভারত পায় বন্দরটি ব্যবহারের অধিকার। সেখান থেকে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের সমুদ্র উপকূলে চীন নির্মাণ করছে গাওয়াদার বন্দর। এসব কারণে চাবাহার বন্দরটি মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
×