ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করবে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করবে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচনী কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা ও কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করবে দলটি। জেলা কমিটিগুলো এসব নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কার্যক্রম সমন্বয় করবে। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীকে সক্রিয় করে কেন্দ্রের সঙ্গে সমম্বয় করে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন প্রার্থিতা ঘোষণা, জোট সম্প্রসারণ এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট-মহাজোট সম্প্রসারণ প্রসঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, নির্বাচন প্রসঙ্গে কোন ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যথাসময়ে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অক্টোবরে বিএনপি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। তাই রাজধানীসহ সব জেলা-উপজেলার মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে রাখতে হবে। কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউই হারাতে পারবে না। তাই দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দুষ্টু গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা (বিএনপি) আর কী মাঠে নামবে? এদের মাঠে নামার মতো অবস্থানও নেই। তবে সতর্ক থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি করা জনমত জরিপগুলোতে বর্তমান এমপিদের জনপ্রিয়তা এখনও ভাল আছে বলেই উঠে এসেছে। দু’-একজন এমপির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকলেও তাদের অবস্থানও উন্নতির দিকে। আশা করি, আগামী নির্বাচনে এসব এমপি আবারও প্রার্থী হলে সমস্যা হবে না। তবে জনমত জরিপের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বৈঠকে বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ড. অনুপম সেন, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আখতারুজ্জামান, এ্যাডভোকেট আজম উল্লাহ খান প্রমুখ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রæততম সময়ের মধ্যে উপজেলা ও কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে কোন উপজেলা কমিটির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হলে ওই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অথবা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিগুলো গঠনের তাগিদ দেন। শনিবারের এই বৈঠকে আগামী নির্বাচন পরিচালনায় উপ-কমিটিগুলো চ‚ড়ান্ত করার কথা থাকলেও হয়নি। তবে খসড়া উপ-কমিটিগুলো নিয়ে আলোচনার পর জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা যত দ্রæত সম্ভব এই কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম ও সদস্য সচিব ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলো চ‚ড়ান্ত করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার পর জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আবারও বৈঠকে বসবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় ড. কামাল হোসেনসহ অন্য নেতাদের ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠনের প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী নতুন এই জোটকে স্বাগত জানিয়ে তারা যেন তাদের দাবি অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারেন, সেই অনুমতি দিতে পুলিশ কমিশনারকে বলবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন দুটি ঐক্য ফোরাম গঠনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এরকম হওয়া উচিত। আরও নতুন নতুন পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন তৈরি হোক। তারা আগামীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং করতে চেয়েছেন, তারা যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চান, আমরা করতে দেব। আমাদের কোন আপত্তি নাই, আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করব আপনারা বাধা দেবেন না। কিন্তু অন্যকিছু ভাবলে তাদের আশা পূরণ হবে না। গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে যুক্তফ্রন্টকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দরকার হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি স্থায়ী মঞ্চ করে দেব। যার যত খুশি সেখানে বক্তৃতা দিতে পারবে। যেন তারা ৬০-৭০ জন মিলে গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা করতে পারেন। প্রয়োজনে লোকও দেব। আমি বলব একটি কর্ণার ঠিক করে দিতে সেখানে বক্তৃতা দিক, আন্দোলন করুক, যা খুশি করুক। কারণ আমরা কারও গলা চেপে ধরিনি, আমরা কারও মুখ বন্ধ করিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা অভিযোগ করেছেন, তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেয়া হয়নি। আসলে সেখানে আরও কেউ জনসভা করতে চেয়েছিল। তাই হয়ত যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়নি।’ তবে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশ হলে মাঠ নোংরা করে ফেলা হয়। পরে এটা পরিষ্কার করতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তাই সমাবেশ করার অনুমতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে মাঠ পরিষ্কার করার অর্থও নিয়ে নিতে হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সর্বাত্মকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কাজের প্রচার করতে হবে। তাদের সমর্থন আদায় করতে হবে।
×