ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি পণ্য শুঁটকি

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রফতানি পণ্য শুঁটকি

শুঁটকি মাছ। মুখরোচক খাবারগুলোর মধ্যে একটি। শুঁটকির কথা মনে হলেই জিভে জল এসে যায়। সাগড়পাড়ের সেই সব সুস্বাদু শুঁটকি নিয়ে রয়েছে নানা লোককথা। স্বাদু-অস্বাদু মুখরোচক কাহিনী। তবে যারা মাছ আহরণ করেন তারা জীবিকার তাগিদেই ছুটে চলেন গভীর সমুদ্রে। সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসা মাছ দিয়েই শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৭.৩ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। খাদ্য থেকে প্রাফত প্রাণীজ আমিষের প্রায় ৬০% আসে মৎস্য ও মৎস্যজাত খাদ্য থেকে। দেশের মানুষের বার্ষিক জনপ্রতি মাছের চাহিদা ২০.৪৪ কেজি। চাহিদার বিপরীতে বার্ষিক জনপ্রতি খাদ্য হিসাবে মাছ গ্রহণ ১৮.৯৪ কেজি অর্থাৎ ১.৫ কেজি ঘাটতি থাকে। এই গ্রহণকৃত মাছের প্রায় ৫% আসে শুঁটকি থেকে। বছরে প্রায় ৫.৪৬ লাখ টন মৎস্য আহরিত হয় সমুদ্র থেকে যার ২০% শুঁটকি হিসাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। বাংলাদেশ থেকে (২০১১-১২) অর্থবছরে প্রায় ৬২৩ টন শুঁটকি বিদেশে রফতানি করা হয়। আমাদের দেশে (৮-১০) প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি তৈরি হয়। ১ কেজি শুঁটকি মাছ তৈরিতে প্রজাতিভেদে প্রায় (৩-৫) কেজি কাঁচা মাছ প্রয়োজন। উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন সমুদ্র থেকে মাছ সংগ্রহ করে। আমাদের দেশে মূলত শীতকালে শুঁটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। সাধরণত অক্টোরব থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের দেশে শুঁটকি শুকানো হয়। উৎপাদিত শুঁটকি ১৫টি বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে মূল্য সংযোজিত হয়ে (৩-৬) ধাপ অতিক্রম করে ভোক্তার কাছে পৌঁছে। আমাদের দেশের উৎপাদিত সামুদ্রিক শুঁটকির সবচেয়ে বড় অংশই তৈরি হয় কক্সবাজারে। বাংলাদেশীদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে শুঁটকি প্রিয় খাবার হওয়ায় দেশের রফতানি পণ্য তালিকায় বর্তমানে শুঁটকি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের শুঁটকি মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বার্মাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দিন দিন শুঁটকি রফতানি বাড়ছে। কয়েক দশক আগে থেকে শুঁটকি রফতানি শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্প পরিমাণে রফতানি হলেও সম্প্রতি বেসরকারী উদ্যোগে তা বেড়েছে। দিন দিন বিলে মাছ কমে গেলেও দেশ-বিদেশে শুঁটকির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের শুঁটকির সুনাম ও চাহিদা দুটোই রয়েছে। দেশের সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, লাক্ষ্যা, লইট্যা, টেকচান্দা, সুরমা, পোপা, মাটিয়া, চিংড়ি, রিস্যা, হাঙর, রিঠা, বাচা, ফাইস্যা, ফাতরা, রুপালি ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির চাহিদা রয়েছে। আর মিঠা পানির মাছের শুঁটকির মধ্যে রয়েছে পুঁটি, শোল, পাবদা, গজার, টেংরা ইত্যাদির বিশেষ চাহিদা। তবে বিদেশের বাজারে যে পরিমাণ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিদেশে শুঁটকি রফতানিতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রফতানি আরও বৃদ্ধি পেত। এছাড়া উন্নত মানের শুঁটকি তৈরি ও সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ০সউপার্জন সম্ভব হবে এবং দেশের শুঁটকি শিল্পে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হতে পারে। তাছাড়া শুঁটকির কারবার করে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা। প্রতি মৌসুমে এখানে ব্যবসা হয় হাজার কোটি টাকার। মাছ রফতানি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। শুঁটকি নিয়ে হচ্ছে নানা গবেষণাও। কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক, সমিতির পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া ও তুরস্কল নামে চারটি শুঁটকিপল্লী আছে। এসব পল্লীতে আছেন ছোট-বড় ৯০৪ জন ব্যবসায়ী। পল্লীগুলোতে কাজ করছেন প্রায় ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। প্রতি সফতাহের শুক্র ও সোমবার কক্সবাজার শুঁটকিপল্লী থেকে যানবাহনে করে চট্টগ্রামে আসে প্রক্রিয়াজাত করা শুঁটকি। প্রতি সফতাহে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক শুঁটকি আসে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে। প্রতিটি ট্রাক বহন করে ৮ থেকে ১০ টন শুঁটকি। ৯ মাসের মৌসুমে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী মিলে হয় প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যের মাছ হলো রূপচাঁদা।
×