ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ

জাহিদুল আলম জয় ॥ এরচেয়ে মধুর প্রতিশোধ বুঝি আর হয় না। গ্রুপপর্বে এই ভারতের কাছে ০-২ গোলে হেরেছিল মালদ্বীপ। যে কারণে সেমিফাইনালে খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তাদের। পরবর্তীতে টস ভাগ্যে শেষ চারে নাম লেখায় পিটার সেগার্টের দল। এরপর থেকে রীতিমতো রূপকথার চিত্রনাট্য দেখিয়েছে মালদ্বীপ। সেমিফাইনালে নেপালকে উড়িয়ে দেয়ার পর ফাইনালে ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নিয়েছে মালদ্বীপ। শনিবার রাতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নান্দনিক ফুটবল উপহার দিয়ে সর্বোচ্চ সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়েছে মালদ্বীপ। এর ফলে ২০০৮ সালের পর অর্থাৎ নয় বছর পর আবারও দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়লো দ্বীপের মালভূমি খ্যাত দেশটি। এই জয়ে শুধু গ্রুপপর্বে হারের প্রতিশোধই নয়, এর আগে দুইবার ফাইনালে হারের মধুর প্রতিশোধও নিয়েছেন আকরাম, ইব্রাহিমরা। ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে গ্যালারিতে হাজার কয়েক দর্শক জড়ো হয়েছিলেন। তবে গ্যালারির উৎসবটা আরও বিশাল আকারে হতে পারতো। যদি না বরাবরের মতো গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিতে হতো বাংলাদেশকে। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে কোন দলই তেমন গোছালো আক্রমণ করতে পারেনি। দু’দলই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। এতে সফল হয় পিটার সেগার্টের মালদ্বীপ। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে তার শিষ্যরা ভারতীয় দুর্গে আক্রমণ শাণাতে থাকেন। ফলও আসে চটজলদি। ১৯ মিনিটে সংঘবদ্ধ আক্রমণে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। ডানপ্রান্ত দিয়ে ভারতীয় অর্ধে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড হাসান নাইজ। এরপর তিনি বল বাড়ান ডি বক্সে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আগুয়ান ভারতীয় গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন আরেক ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম হুসাইন (১-০)। পিছিয়ে পড়ার পরও প্রথম ৩০ মিনিটে সমতা ফেরানোর মতো তেমন কার্যকরী আক্রমণ শাণাতে পারেনি ভারত। অবশেষে ৩২ মিনিটে প্রথম বলার মতো সুযোগ আসে স্টিফেন ফিলিপ কনস্ট্যান্টাইনের দলের। ডি বক্সে মালদ্বীপের ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান ভারতের ফরোয়ার্ড মানবির সিং। কিন্তু তার শট অল্পের জন্য সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। ৪২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় মালদ্বীপের। বামপ্রান্তে ডি বক্সের কোণা থেকে ফরোয়ার্ড আলি ফাসিরের নেয়া ফ্রিকিক অল্পের জন্য বারপোস্ট উঁচিয়ে বাইরের জালে লাগে। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ নষ্ট হয় ভারতের। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে সার্থক গোলুইয়ের শট বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হয় সাফের সবচেয়ে সফল দলটিকে। বিরতির পর শুরু থেকেই গোল পরিশোধে মরিয়া আক্রমণ শাণাতে থাকে ভারত। ৪৭ মিনিটে ভাল একটি সুযোগও আসে। কিন্তু ফারুক চৌধুরীর হেড বারপোস্ট উঁচিয়ে বাইরে যায়। ৫১ মিনিটে অনিরুদ্ধ থাপার ফ্রিকিকে মানবিরের হেড বাইরে গেলে সমতা ফেরানো হয়নি ভারতের। উপুর্যপরি আক্রমণ শাণানো ভারত ৬৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আরও এক গোল হজম করে। এই গোলেই তাদের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। মাঝমাঠ থেকে হামজা মোহাম্মদ ভারতের তিনজন ফুটবলারের মাঝ দিয়ে অসাধারণ থ্রু দেন। এরপর বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভারতের আগুয়ান গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে আলতো টোকায় জালে জড়ান ফরোয়ার্ড আলি ফাসির (২-০)। ভারতীয় ডিফেন্ডার সার্থক প্রাণান্ত চেষ্টা করেও বল ফেরাতে ব্যর্থ হন। ৮২ মিনিটে আরও একটি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল মালদ্বীপ। কিন্তু ইব্রাহিম ওয়াহিদের শট অল্পের জন্য সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে অতিরিক্ত হিসেবে পাঁচ মিনিট যোগ করা হয়। এই সময়ের প্রথম মিনিটেই দুর্দান্ত গোল করে ম্যাচ উপভোগ্য করে তোলে ভারত। নিখিল চন্দ্রশেখরের পাসে দারুণ প্লেসিং শটে গোল করেন বদলি ফরোয়ার্ড সুমিত পাসি (২-১)। এরপর আর কোন গোল না হলে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন মালদ্বীপের ফুটবলাররা। রোল অব অনার সাল চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ ১৯৯৩ ভারত শ্রীলঙ্কা ১৯৯৫ শ্রীলঙ্কা ভারত ১৯৯৭ ভারত মালদ্বীপ ১৯৯৯ ভারত বাংলাদেশ ২০০৩ বাংলাদেশ মালদ্বীপ ২০০৫ ভারত বাংলাদেশ ২০০৮ মালদ্বীপ ভারত ২০০৯ ভারত মালদ্বীপ ২০১১ ভারত আফগানিস্তান ২০১৩ আফগানিস্তান ভারত ২০১৫ ভারত আফগানিস্তান ২০১৮ মালদ্বীপ ভারত।
×