ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার বিপাকে

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৫০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার বিপাকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৫ সেপ্টেম্বর ॥ সাগর গরম। ঘন ঘন নিম্নচাপ। ¯্রােতের চাপ বেশি। দুই-তিন দিন পর পর সিগন্যাল। বোট চালানোর উপায় নেই। গেল দেড় মাসে অন্তত কুড়িবার আবহাওয়া খারাপ হয়েছে। এমন মন্তব্য করে জানালেন, ট্রলার মাঝি নিজাম উদ্দিন। গত ১৮ বছরে এমন বাজে অবস্থা তিনি আর দেখেননি। মিহির দাসের নম্বরবিহীন একটি ফিশিং বোটে কাজ করেন এ মানুষটি। একই কথা জেলে আবু জাফরের। এরা জানালেন এমনিতেই এখন ইলিশ পাওয়া যায় অনেক গভীর সাগরে। চালনার বয়ার পরে। চরম ঝুঁকি নিয়ে সাগরে যাওয়ার দুদিন পরই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। কিছু ইলিশ নিয়ে ফিরে আসতে হয়, কখনও খালি হাতে। এক-দুইবার জাল পাতার সুযোগ মেলে। অথচ একেবারে সাগরে যেতে ৫০-৬০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকার বাজার করতে হয়। বরফ, খাবার ও জ্বালানিসহ এই খরচ লাগে। যেখানে ৮-১০ দিন থাকার কথা সাগরে। তাইলে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যেত তাতে লোকসান হতো না। এফবি লিমা বোটে এখন বাবুর্চির কাজ করেন ছোহরাব হোসেন। জানালেন বয়োবৃদ্ধ এ মানুষটি, দেশ স্বাধীনের এক বছর পর থেকে বোটে কাজ করেন। ১৬ কি ১৭ বছর বয়সে শুরু। টানা ১৯টি বছর মাঝি ছিলেন। মৌডুবির এক মালিকের বোটে এখন আছেন। স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, তখন বরফ ছিল না। কাটারুর কাছে ইলিশ বিক্রি করতেন। লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করত। তখনও ৫০/৬০ মণ ইলিশ পেতেন একবারে। অনেক কিনারে মাছ ধরতেন। এখন গহীন সাগরে যেতে হয়। ঝড়-ঝাপটাসহ ডাকাতের কবলে পড়েছেন।সাগরে ভেসেছেন। ছোহরাব হোসেন বললেন, র‌্যাবের কারণে ডাকাইত নেই বললেই চলে। ভয় কাইট্যা গেছে। কিন্তু সাগর যেন ক্যামন অইয়া গ্যাছে। জানালেন, গত এক মাসে অন্তত আটটি বোট ডুবেছে। এখনও সাত জেলে নিখোঁজ রয়েছে। হাজারো ফিশিং ট্রলার শিববাড়িয়ার চ্যানেলের আলীপুর-মহিপুর বন্দরে ভিড়ে আছে। সবার ভাষ্য এক। মাছ আছে। ধরতে পারছেন না। অন্তত ৩০ হাজার জেলে। দুইশ’ আড়ত মালিক। অর্ধশত বরফকল মালিকসহ ৫০ হাজার পরিবারে এখন শঙ্কা বিরাজ করছে লোকসানের। এ সময় গেল বছর প্রত্যেক ট্রলারের গড়ে লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে। এ বছর এরা শতকরা ৯০ জনে লাভের মুখ দেখতে পারেনি। উল্টো লোকসানের ধকল বইছেন। মহিপুর মৎস্য আড়ত ও ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গাজী ফজলুর রহমান জানালেন, ধারদেনায় কাহিল অধিকাংশ বোট মালিক। ১০-১২ দিনের বাজার নিয়ে সাগরে গিয়ে দুদিনও থাকতে পারে না জেলেরা। এমন কোন গোন (জো) নেই একবারে দুদিনের বেশি সাগরে অবস্থান করতে পারছে। তার দাবি এমনিতেই এ বছর ইলিশ কম ধরা পড়ছে। তার ওপরে এত বেশি সাগর উত্তাল আগে কখনও দেখেননি। তার মতে একেকটি আড়তের কমপক্ষে ১০ থেখে ৫০ লাখ টাকার দেনায় পড়েছে। কলাপাড়া উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিপিপি) সহকারী পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান খান জানান, সাগরে প্রচ- ঢেউ থাকছে। এ বছর খুব বেশি। তার মতামত জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে এটি হচ্ছে। আর সাগরে ট্রলার ডুবিতে প্রাণহানি এড়াতে বারবার সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে জেলে, ট্রলার মালিক আড়তদারসহ এ পেশা সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার পরিবারে লোকসানের শঙ্কা বিরাজ করছে। জেলেসহ সকলের দাবি ইলিশ ধরার আসন্ন নিষেধাজ্ঞার সময়কাল পেছানো হোক।
×