ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাখ লাখ লোক নিরাপদ আশ্রয়ে ॥ এগিয়ে যাচ্ছে হংকংয়ের দিকে

সুপার টাইফুনে উত্তর ফিলিপিন্স লণ্ড ভণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সুপার টাইফুনে উত্তর ফিলিপিন্স লণ্ড ভণ্ড

চলতি বছর বিশ্বজুড়ে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় সুপার টাইফুন মাংখুট শনিবার গভীর রাতে দমকা বাতাস ও তুমুল বৃষ্টিসহ ফিলিপিন্সের উত্তর উপকূলের কাগায়ান প্রদেশের লুজন দ্বীপে আছড়ে পড়ে। পাঁচ মাত্রার এ ঝড়ে দেশটির লুজন আইল্যান্ডের বিভিন্ন বাড়িঘরের জানালা চুরমার এবং বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এটি এখন লুজন প্রণালী হয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে হংকংয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এএফপি, সিএনএন ও বিবিসি। স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফিলিপিন্সের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাগাওতে মাংখুট আঘাত হানে। এটি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। কেউ হতাহত হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তাও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। ঘণ্টায় ৩২৫ কিলোমিটার (২০০ মাইল) গতিবেগের বাতাস নিয়ে অগ্রসর হওয়া মাংখুটের পথে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের বাস। বাতাসের গতিবেগ কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৩৩০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। ২০ ফুট উচ্চতার সমুদ্রের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের উত্তর উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে লাখ লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘ওমপাং’ নামে পরিচিতি পাওয়া টাইফুন মাংখুটে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। মহাসড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে আছে। গাছাপালা উপড়ে পড়েছে, ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। ঝড়ের কারণে কাগায়ান, নর্দান ইসাবেলা, আপাইয়াও ও আব্রা প্রদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার নম্বর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ফিলিপিন্সে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রাণঘাতি সুপার টাইফুন হাইয়ানের সময়ও চার নম্বর সতর্কতা জারি হয়েছিল। ঝড়টি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার (১৬৫ মাইল) বেগে পশ্চিমদিকে ধাবিত হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে ঝড়টি ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছিল। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৫ কিলোমিটার (১৩৪ মাইল)। লুজন প্রদেশের প্রাদেশিক আবহাওয়া দফতরের এক পূর্বাভাসে ক্রিস পেরেজ জানান, যতটা সম্ভব বাড়ির অভ্যন্তরে থাকুন। গড়ে ফিলিপিন্সে প্রতিবছর ২০টি টাইফুন ও ঝড় আছড়ে পড়ে। ঝড়ের আঘাতে শত শত লোকের প্রাণহানি হয় এবং লাখ লাখ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করতে বাধ্য হন। দেশটির সবচেয়ে প্রাণহানিকর সুপার টাইফুন হলো হাইয়ান। এর আঘাতে ৭,৩৫০ জন লোক প্রাণ হারায়। এদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, শক্তির বিবেচনায় টাইফুন মাংখুট হচ্ছে এ বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। ঝড়টি ক্রমাগতভাবে পশ্চিমদিকে সরে যাবে বলেও পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে। এটি রবিবার বিকেলের মধ্যে হংকং অতিক্রম করবে। ঝড় ধেয়ে আসায় হংকংয়ের কর্তৃপক্ষও বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তবে ঝড়টি সরাসরি হংকংয়ে আঘাত হানবে না। শহরটিতে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি ঝরিয়ে এটি দুর্বল হয়ে পড়বে। মঙ্গলবারের মধ্যেই ঝড়টি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। টাইফুন মাংখুট রবিবার রাতে অথবা সোমবার ভোরের দিকে দক্ষিণ চীনে আঘাত হানতে পারে। চীনা কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে সতর্কতার মাত্রা ‘হলুদ’-এ উন্নীত করেছে। চীনের চার মাত্রার সতর্কতা ব্যবস্থাপনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুত-গতির ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
×