ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এম. নজরুল ইসলাম

বিলেতে বাঙালীর গর্ব

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিলেতে বাঙালীর গর্ব

টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এখন নিজের পরিচয়েই পরিচিত। কিন্তু তাঁর আরেকটি পরিচয়ে বাঙালী মাত্রই শ্লাঘা অনুভব করে। তিনি যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী এবং জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে। তাঁকে নিয়ে গর্ব করতেই পারে বাঙালী। বিলেতে নতুন প্রজন্মের বাঙালী প্রতিনিধি তিনি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাঙালীর ঘরে জন্ম নিয়ে ব্রিটেনের শীর্ষ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকায় যে চার বাংলাদেশীর নাম এসেছে, সে তালিকায় তিনিও আছেন। রাজনীতি যাঁর রক্তের উপাদান উত্তরাধিকার সূত্রে, তিনি বিদেশেও সক্রিয় হবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মায়ের একনিষ্ঠ যতœ ও পারিবারিক ঐতিহ্যÑ এই দুইয়ের মিশেলে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন। তাঁর পরিচয় এখন কারও কাছে অজানা নয়। সেই কোন সময় থেকেই আমরা শুনে আসছি, ‘বাঙালীর ছেলে বিজয় সিংহ হেলায় করিল লংকা জয়’। একালের বাঙালী মেয়ের লন্ডন জয় বাঙালীকে নতুন গৌরবে অভিষিক্ত করে। এই বাঙালী মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। যিনি উচ্চারণ করতে পারেন, ‘গ্র্যান্ড ফাদারের আদর্শই আমার চরিত্র গঠন করেছে। পারিবারিক ঐতিহ্যই আমাকে একজন স্ট্রং সোস্যালিস্টে পরিণত করেছে।’ এই গ্র্যান্ড ফাদার আর কেউ নন, বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বাঙালী কন্যাকে নিয়েই সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শংসা উচ্চারণ, ‘সন্দেহ নেই, বঙ্গবন্ধুও চাইতেন, বাঙালী তার জাতীয় স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা নিয়ে জেগে উঠুক এবং বিশ্ব জাতীয়তার মোহনায় আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে মিলিত হোক। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ছেলেমেয়েরা তাঁর সেই সাধই পূর্ণ করেছে বলে মনে হয়। যদি তা না হতো তাহলে বিলাতে বাস করে, উচ্চশিক্ষা লাভ করে, চারদিকে এত অর্থবিত্তের পেশা থাকতে টিউলিপ রাজনীতিকে তাঁর পেশা হিসেবে গ্রহণ করতেন না।’ বাঙালী মেয়ে টিউলিপ নিজের চেষ্টাতেই আজকের এই অবস্থানে উঠে এসেছেন। হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে ২০১০ সালে টিউলিপ প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে এ আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। নিজের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সংসদে কথা বলছেন নিয়মিত। রাজনীতি ও সমাজকর্মে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন নানামুখী কাজের ভেতর দিয়ে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফিলিপ গ্লউড এ্যাসোশিয়েটস, সেভ দ্যা চিলড্রেন, বেথনাল গ্রিন এ্যান্ড বো আসনের সাবেক লেবার এমপি ওনা কিং, টুটিং এলাকার লেবার এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে লন্ডনের নির্বাচিত মেয়র সাদেক খান, লেইটন ওয়ানস্টেড এলাকার সাবেক লেবার এমপি হ্যারি কোহেনের সঙ্গে কাজ করেছেন। ক্যামডেন ও ইজলিংটন এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের গবর্নর, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন ইউকের সদস্য ও এমপি টিসা জোয়েলের পলিসি এ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। লেবার পার্টির ইয়ং লেবার অফিসার হিসেবে কাজ করছেন টিউলিপ সিদ্দিক। লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড-এর লিডারশিপ ক্যাম্পেইনের ফিল্ড ডেপুটি ডিরেক্টর ছাড়াও লন্ডন লেবার পার্টির প্রেস অফিসার, গ্রেটার লন্ডন অথরিটির রিসার্চার হিসেবে কাজ করার ব্যাপক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ সংসদ সদস্য হিসেবে লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি, মিডিয়া ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী মনোনীত হয়েছিলেন টিউলিপ। ২০১৭ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে চাইল্ড কেয়ার এবং আর্লি এডুকেশন অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) নিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ওয়েস্টমিনিস্টারে ১০ ভালো বক্তার তালিকায় প্রথম কোনো বাঙালী এমপি হিসেবে জায়গা করে নেন তিনি। ব্রিটিশ রাজনীতিতে তিনি এরই মধ্যে একটি পাকা আসন তৈরি করতে পেরেছেন। মানুষের ইচ্ছাশক্তি তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ আমরা পাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির জনককে হত্যার পর তাঁর জীবিত দুই কন্যার রাজনীতির প্রতি বিমুখ হওয়ার কথা ছিল। তাঁরা দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেপথে যাননি। দেশের প্রতি ভালবাসার টানে দেশসেবাকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য টিউলিপ নিজেকে তাঁর পরিসরে যোগ্যতার সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন। এবং তিনি তা পেরেছেন। যেখানে সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা, সেখানে তিনি শুধু নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেননি, নিজেকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এ সবই সম্ভব হয়েছে তাঁর ইচ্ছাশক্তির গুণে, যা তিনি অর্জন করেছেন তাঁর পারিবারিক সংস্কৃতি থেকে। তিনি সেই ঐতিহ্যের ধারক, যেখানে চ্যালেঞ্জ নেয়া থেকে কাউকে পিছিয়ে আসতে দেখা যায়নি। টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক প্রমাণ করেছেন, দূরপ্রবাসেও বাঙালী নিজেকে তুলে ধরতে পারে। টিউলিপের এই অর্জন আমাদের সবাইকে গৌরবান্বিত করে। বাংলাদেশের মানুষও তাঁর কৃতিত্বের অংশীদার। আজ তাঁর জন্মদিন। দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের মেরটন কাউন্সিলের মিটচাম এলাকায় ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর টিউলিপ সিদ্দিকের জন্ম। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা বিষয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের তালিকার শীর্ষে আছেন টিউলিপ। বিলেতে বাঙালীর প্রতিনিধি হিসেবে এই সংগ্রামী জাতির মুখ আরও উজ্জ্বল করুন তিনি। বিশ্বের দরবারে বাঙালীকে পৌঁছে দিন বিশ্ব নাগরিকের সম্মানজনক অবস্থানে। জন্মদিনে তাঁকে আমাদের অন্তহীন শুভেচ্ছা। লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক [email protected]
×