ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি

বর্তমানে রফতানিমুখী পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। সম্প্রতি ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়িয়ে করা হলো আট হাজার টাকা। শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি ৫ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মজুরি কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল। সে হিসেবে আগামী ডিসেম্বরে নতুন করে পুনর্মূল্যায়ন করা মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মজুরি বোর্ডের চারটি বৈঠকে একমত হতে না পারায় উভয়পক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান। প্রধানমন্ত্রী উভয়পক্ষের কথা শুনে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেন। ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামোতে মজুরি পাবেন পোশাক শ্রমিকরা। উল্লেখ্য, দেশের পণ্য রফতানির আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে আসে। এ খাতে কাজ করেন প্রায় ৩৬ লাখ শ্রমিক। ১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে সেটি বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি কার্যকর হয়েছিল। চলতি বাজারদরের সঙ্গে এই মজুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে খাতসংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি মত দিয়েছেন। ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আইএলও কনভেনশন অনুসারে বর্তমান বাজারদর, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শ্রমিকের জীবনমান বিবেচনায় এর চেয়ে কম মজুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে মালিকপক্ষের দাবি, মজুরি কাঠামোতে ভারসাম্য রাখতে হবে। অন্যথায় বেতন বাড়িয়ে কোন লাভ হবে না। শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে সেটা হবে বড় ক্ষতি। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর কথা বলে, অথচ দাম বাড়ানোর কথা বললে এড়িয়ে যায়। এই বাস্তবতায় আবার অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প একটি বিশ্বশিল্পের অংশ। এর মধ্য দিয়ে যে উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি হয়, তার বিতরণ হয় বিশ্বব্যাপী। বিশ্ববাজারের বিভিন্ন পক্ষ সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য থেকে একটা গড় হিসাব দেয়া যায়। বাংলাদেশের যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিক বিক্রি করছেন ১৫-২০ ডলারে, তা ইউরোপে ও যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হচ্ছে ১০০ ডলারে; গড়ে তার মধ্যে ২৫-৩০ ডলার নিচ্ছে সেই রাষ্ট্র, ৫০-৬০ ডলার নিচ্ছে বিদেশী কোম্পানিগুলো আর শ্রমিক পাচ্ছে অনেক কম। এটা মানতে হবে যে, একবারেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। ধাপে ধাপে এগুতে হয়। মনে রাখতে হবে এই সরকার শ্রমবান্ধব সরকার। তেমনি ব্যবসায়ীরাও নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকছেন বর্তমান সরকারের কাছ থেকে। ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না এলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ হবে না। মাঝখানে সরকারকে উভয় পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দিক বিবেচনা করেই অগ্রসর হতে হয়। সেক্ষেত্রে সরকারের জনকল্যাণ চিন্তা সব সময়েই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। আপাতত যে মজুরি বৃদ্ধি করা হলো তাকে মন্দের ভাল হিসেবে দেখা যেতে পারে। কেননা এতে পাঁচ বছরে শতকরা ৫০ ভাগ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে অনেকের দাবি ছিল ৩০০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি। সামগ্রিক বাস্তবতা বিবেচনায় এটি কতটা যুক্তিনিষ্ঠ সেটিও ভেবে দেখা আবশ্যক।
×