ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই চার দিনের মধ্যেই ঘোষণা

এলএনজির খরচ মেটাতে গ্যাসের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এলএনজির খরচ মেটাতে গ্যাসের দাম বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) খরচ মেটাতে বাড়ছে গ্যাসের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দুই চার দিনের মধ্যে গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্র বলছে, আইন অনুযায়ী শুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। সেই সময় আগামী সপ্তাহে শেষ হচ্ছে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যেই গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণা করা হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নেট মিটারিং’ সংক্রান্ত একটি সেমিনার থেকে বেরিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে জানান, দুই চার দিনের মধ্যে গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণা করা হবে। তবে কতভাগ বৃদ্ধি করা হবে তা তিনি জানাননি। এর আগে উপদেষ্টা সেমিনারে বলেন, আমরা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে বলেছি সহনীয় মাত্রায় দাম বৃদ্ধি করতে। শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য তাদের হাতে ৯০ দিন সময় রয়েছে। জুনের শেষে শুনানি শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে আগামী সপ্তাহে ৯০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। এর মধ্যে কমিশন দামের ঘোষণা দেবে। দাম না বাড়িয়েও কমিশন আদেশ দিতে পারে। সে ধরনের কোন কিছু হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটা তো বাড়বেই। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে কতটুকু এলএনজি এলে কতটুকু দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে তা নির্ধারণ করে রেখেছে কমিশন। এই দাম বাড়ানোর পর যে ঘাটতি থাকবে তা পূরণের জন্য ভর্তুকির প্রস্তাব দেবে তারা। এর আগে গত ১১ জুন থেকে গ্যাসের দাম ও সঞ্চালন বাড়ানোর বিষয়ে গণশুনানি শুরু করে কমিশন। চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। তবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। এর আগে কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছিল এলএনজি এলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হবে। গত ১৮ আগস্ট প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হয়। প্রথমে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হলেও এখন প্রতিদিন কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রিড থেকে সমপরিমাণ গ্যাস চট্টগ্রামের বদলে অন্য জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এলএনজি পাইপলাইনে যুক্ত হলেই ছয় হাজার কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। আর সেই ঘাটতির অর্ধেক সরকারের কাছ থেকে পেলে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। তবে প্রতিদিন এলএনজি সরবরাহ কম হওয়াতে এখন গ্যাসের দাম এতটা না বৃদ্ধি করলেও চলবে। নেট মিটারিং সেমিনার ॥ এদিকে নেট মিটারিং-এ সরকার প্রয়োজনে প্রণোদনা প্রদান করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম। জাতীয় প্রেসক্লাবে নেট মিটারিং-এর সম্ভাবনা এবং বাস্তবায়ন জটিলতা নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে উপদেষ্টা সরকারের এই উদ্যোগের কথা বলেন। যৌথভাবে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স (এফইআরবি) এবং সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসএমএমএবি) এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক জায়গায় সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করতে চেয়েছি। এর মধ্যে বিমানবন্দরে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করলে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সিভিল এভিয়েশন এতে আপত্তি জানিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি দিল্লী বিমানবন্দরে এ ধরনের সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। তারা দেখে এসেছে। এখন আশা করি তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হবে। নেট মিটারিং-এ উদ্যোক্তা ছাদ ব্যবহার করলে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে ৪০ ভাগ ব্যয় সাশ্রয় হবে। কারণ এখানে জমির কোন ব্যয় লাগবে না। আবার তিনি যখন বিদ্যুত পাবেন তখন গ্রিডের দামে বিদ্যুত পাবেন। আবার ছুটির দিনে তিনি পুরো বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করতে পারবেন। এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক সদরুল হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার। অন্যদের মধ্যে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এতে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে দুটি মূল প্রবন্ধের একটি উপস্থাপন করেন এসএমএমএবি-এর প্রেসিডেন্ট মোনোয়ার মিজবাহ মঈন এবং অন্যটি উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক শাকিলা আজিজ। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে গ্রাহক ছাদে সৌর প্যানেল ব্যবহার করে দিনের বেলা বিদ্যুত উৎপাদন করবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহার শেষে বাকি অংশ উদ্যোক্তা গ্রিডে সরবরাহ করবে। যার হিসেব একটি মিটারে সংরক্ষণ করা হবে। রাতের বেলা সমপরিমাণ বিদ্যুত তাকে গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হবে। এভাবে মাস শেষে বিদ্যুত বিলে যা সমন্বয় করা হবে। এতে করে গ্রাহকের বিদ্যুত বিল কম আসবে।
×