ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুপালি ইলিশে বাজার ভর্তি, সস্তায় কেনার ধুম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রুপালি ইলিশে বাজার ভর্তি, সস্তায় কেনার ধুম

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার কোন্ বাসায় কী রান্না হলো, জানার সুযোগ নেই। সাধারণত সুযোগ হয় না। তবে এখন অনুমান করে বলে দেয়া যায়। বলে দিলে বিশেষ ভুল হবে না। কারণ ইলিশের মৌসুম। এ মৌসুমে মাছটি না খেলেই নয়। ডিপফ্রিজ ভর্তি ইলিশ যখন তখন বের করে ডুবো তেলে ভেঁজে নেয়া হচ্ছে। ওমনি আশপাশের বাসাবাড়ি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে ঘ্রাণ। কথার কথা নয়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ইস্কটানের এক সরু গলি হয়ে মূল রাস্তায় ওঠার মুহূর্তে চেনা ঘ্রাণটি নাকে এসে লাগল। নিচতলার কোন একটি রান্না ঘর থেকে ভেসে আসা ঘ্রাণ অবেলায় মনে করিয়ে দিল রাতের খাবারের কথা। ক্ষুধা নেই? মুখে অরুচি? ইলিশের ঘ্রাণ নাকে আসলে সব দূর হয়ে যায়। পেটপুরে খেতে ইচ্ছে করে। এ কারণেই জাতীয় মাছ ইলিশ। সারা বছর মাছটি পাওয়া যায় না। মৌসুম শুরু হয় বর্ষায়। এবারও ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি যেন আহ্বান করে নদীতে এনেছিল মাছটিকে। মেঘনায় ব্যাপক হারে ধরা পড়েছে। ভোলা বরিশালসহ আরও কয়েকটি উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসছে ইলিশ। উৎপাদনও ক্রমশ বাড়ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৬-৮৭ সালে দেশে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার টনে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন চার লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় গত বর্ষায় শুরু হয় চলতি মৌসুম। এ মৌসুমে ইলিশ আরও বেড়েছে। আকারেও বড়। বড় এবং মাঝারি মাপের ইলিশই বেশি দেখা যাচ্ছে বাজারে। শুরুর দিকে দাম ছিল বেশ। এখন কমে এসেছে। তাছাড়া আগামী ৭ অক্টোবর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে ইলিশ ধরা। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ফলে মাঝখানের সময়টাতে চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। এখন রাজধানী ঢাকার মৎস্য আড়তগুলো ইলিশে ভরে উঠেছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ আর ইলিশ। পাড়া মহল্লা ঘুরে মাছটি বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। ফুটপাথে বসে পড়ছেন ইলিশের ঝুড়ি নিয়ে। ক্রেতারাও আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। দরদাম করে কিনছেন। শনিবার সকালে কাওরানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের রাস্তাগুলোতে খুচরা দোকানিরা বসেছেন। এফডিসি সংলগ্ন রাস্তাটিকে মনে হচ্ছিল মূল বাজার। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন বেশিরভাগ মাছ আসছে বরিশাল থেকে। চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম থেকে আসছে কিছু। চাঁদপুরের ইলিশের চাহিদাই বেশি। কিন্তু চলে যাচ্ছে সিলেটে। কোন কোন বিক্রেতা তাই বরিশালের ইলিশ চাঁদপুরের বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। মিয়া নামের এক বিক্রেতা জানান, এখন আসা অধিকাংশ ইলিশ ৫০০ গ্রাম থেকে সোয়া কেজি ওজনের। এখান থেকে প্রতিটি ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেনা যাচ্ছিল ১ হাজার ৭শ টাকায়। আবদুল হালিম নামের এক ক্রেতা চারটি ইলিশ কিনেছিলেন ৭ হাজার টাকায়। চাঁদপুরের ইলিশের দাম একটু বেশি। জানা যায়, শনিবার চাঁদপুরে ২ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঢাকার অলিগলি ফুটপাথ থেকেও কেনা যাচ্ছে ইলিশ। সবুজবাগ এলাকার এক গলিতে কয়েকজন বিক্রেতা ইলিশ ফেরি করছিলেন। তাদের একজনের কাছ থেকে দুই হালি ইলিশ কেনেন ফয়জুল হক। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ফ্রিজে রাখা ইলিশ এখনও শেষ হয়নি। এরপরও কিনলাম। আসলে এই কয়দিনই তো খাওয়ার সময়। এদিকে নকল ইলিশও আছে বাজারে। ইলিশের মতোই দেখতে। আসলে সার্ডিন। আসলে চৌক্কা মাছ। এ মাছ ইলিশের চেয়ে কম চওড়া। বড় বড় চোখ। লম্বা মাথার সামনের অংশ কিছুটা ভোতা। সমুদ্রে বাস করলেও, মাঝে মধ্যে নদীর মোহনায় চলে আসে। ধরাও পড়ে ইলিশের সঙ্গে। বিক্রিও হচ্ছে সেভাবেই। তাই কেনার সময় একটু সতর্ক থাকা চাই। তা না হলে প্রকৃত স্বাদটা পাওয়া হবে না। অবশ্য অতি সম্প্রতি ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক এই সাফল্য অর্জন করেন। সফল গবেষণা ইলিশ মাছের সংরক্ষণ উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাড়বে ইলিশের উৎপাদন। আর তাহলে অন্য মাছ ইলিশ নামে বিক্রি করতে হবে না।
×