ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ, পারল না ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ, পারল না ভারত

রুমেল খান ॥ এ যেন ২০০৮ আসরের পুনরাবৃত্তি। একেই বলে ভাগ্য দেবীর অশেষ কৃপা। গ্রুপের দুই ম্যাচের দুটিতেই হার, একটি গোল পর্যন্ত নেই। কিন্তু ‘টসে’ জিতে ভাগ্যক্রমে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে নাম লেখানো দলটি ফাইনালে উঠে সৃষ্টি করেছিল বিস্ময়ের। সেই দলটি যে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নই হয়ে যাবে তা কে জানতো? হ্যাঁ, মালদ্বীপ জাতীয় ফুটবল দলের কথাই বলছি। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সাফ সুজুকি কাপের ফাইনালে তারা অসাধারণ খেলে শক্তিশালী ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে শিরোপা জিতে সৃষ্টি করে ‘মহাবিস্ময়ের’! এই অসাধারণ বিজয়ে একসঙ্গে দুটি প্রতিশোধ নিল সাফ অঞ্চলের সবচেয়ে ছোট ও নিচু দেশ মালদ্বীপ। ২০০৯ সালে এই মাঠে সাফের ফাইনালে এই ভারতের কাছে টাইব্রেকারে হেরে শিরোপা খুইয়েছিল তারা। তাছাড়া সদ্য সমাপ্ত সাফেও গ্রুপপর্বে ভারতের কাছে ০-২ গোলে হার মেনেছিল তারা। এটা মালদ্বীপের পঞ্চমবারের মতো ফাইনাল খেলে দ্বিতীয় শিরোপা জয়। এর আগে ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। মজার ব্যাপারÑ সেবারও তারা ফাইনালে হারিয়েছিল এই ভারতকেই! ভারত-মালদ্বীপ দুটি দলই ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ সুুজুকি কাপের (সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ) পরিসংখ্যানের বিচারে সবচেয়ে সফল দল। এ নিয়ে রেকর্ড ১১ বার ফাইনাল খেলল ৯৬ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ভারত। ভারত এ নিয়ে ফাইনালে উঠলো টানা সপ্তমবারের মতো। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সর্বোচ্চ সাতবার। গত আসরেরও চ্যাম্পিয়ন তারা। ১৫০ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী মালদ্বীপ। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হলো ভারতের। এর আগে তারা ফাইনালে মুখোমুখি হয় ১৯৯৭, ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে। প্রথম ও তৃতীয় ফাইনালে শিরোপা জিতেছিল ভারত (৫-১ এবং টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে)। দ্বিতীয় ফাইনালে মালদ্বীপ জিতেছিল ১-০ গোলে। ঢাকার এই মাঠেই ২০০৮ সালে শিরোপা জিতেছিল তারা। এবারও সেই পয়মন্ত ভেন্যুতে ভাগ্য সহায় হলো ‘দ্বীপের মালভূমি’ খ্যাত মালদ্বীপের। এবারের সাফ ফুটবলে ভারত সেমিতে ৩-১ গোলে হারায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে। অপর সেমিতে মালদ্বীপ ৩-০ গোলে হারায় নেপালকে। মজার ব্যাপার এই দু’দলই একই গ্রুপের (‘বি’) দল। ভারতের কৃতিত্ব ছিল এ আসরে তারা পাঠায় অনুর্ধ-২৩ বা যুব দল। মালদ্বীপের কোচ পিটার সেগার্ট ফাইনালের আগেরদিন বলেছিলেন, ‘ম্যাচটাকে প্রতিশোধের ম্যাচ হিসেবে না দেখলেও ভারতকে হারিয়ে দিতে আত্মবিশ্বাসী আমরা। গ্রুপপর্বে তাদের কাছে হারার বিষয়টি অতীত। ফাইনাল হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ম্যাচ। ১১ জনের ভারতের বিরুদ্ধে ১১ জনের মালদ্বীপ দল জানবাজি লাগিয়ে খেলবে। কে জানে, ফাইনালে আমরা ৪-৫ গোলেও জিততে পারি। কারণ ফুটবলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।’ মালদ্বীপ এবারের আসরে নিজেদের গ্রুপে (তিন দলের গ্রুপ) কোন ম্যাচ না জিতে এবং কোন গোল না করেও ঠিকই নাম লেখায় শেষ চারে। কিভাবে? গ্রুপপর্বে তারা গোলশূন্য ড্র করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। পরের ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় ০-২ গোলে। এদিকে শ্রীলঙ্কাও ০-২ গোলে হেরে যায় ভারতের কাছে। ফলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের (মালদ্বীপের) গোল, গোল তফাত, পয়েন্ট, হেড টু হেড ... সবকিছুই সমান হয়ে যায়! তখন টুর্নামেন্টের ‘হাস্যকর’ বাইলজ অনুযায়ী তারা টসে জিতে সেমিতে খেলা নিশ্চিত করে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলার সময় গুজব ছড়িয়ে পড়েÑ মালদ্বীপ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে ঝামেলা চলছে কোচ পিটারের। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে ছাঁটাই করা হবে তাকে। তাছাড়া মালদ্বীপের সাংবাদিকদের সঙ্গেও তিক্ততা চলছিল তার। সেই ক্রোয়েশিয়ান পিটারই এখন মালদ্বীপের জনগণের নয়নের মণি। জিরো থেকে হয়ে গেলেন হিরো! আর মালদ্বীপ? যাদের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার কথা ছিল, যারা কিনা ধুঁকতে ধুঁকতে ফাইনালে ওঠেছিল, সেই দলটিই কি না দারুণ ফুটবল খেলে শিরোপা জিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের হাজার সাতেক দর্শকের ভালবাসা আদায় করে নিলেন।
×