ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল লক্ষ্মীপুর;###;সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

আসন ধরে রাখতে তৎপর আওয়ামী লীগ, পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট বিএনপি ॥ কুমিল্লা দক্ষিণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আসন ধরে রাখতে তৎপর আওয়ামী লীগ, পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট বিএনপি ॥ কুমিল্লা দক্ষিণ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ হোটেল-মোটেল, ব্যাংক ও ট্যাংকের শহরখ্যাত কুমিল্লা। কোটবাড়ি বৌদ্ধ বিহার কুটিলামুড়া, আদিনা মুড়া, শালবন বিহারসহ হাজার বছরের প্রাচীন পুরাকীর্তি ও এশিয়ার অন্যতম গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) অনেক সমৃদ্ধ করেছে দেশের বৃহৎ এ জেলা কুমিল্লাকে। ১০টি উপজেলা, একটি সিটি কর্পোরেশন, ৪টি পৌরসভার সমন্বয়ে রাজনৈতিকভাবে কুমিল্লা দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিভক্ত। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আসনগুলো হচ্ছেÑ কুমিল্লা-৫, ৬, ৮, ৯, ১০ ও ১১। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার এ ৬টি সংসদীয় আসনে জোর নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলার ৬টি আসনের মধ্যে কোন কোন আসনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কতিপয় হাইব্রিড নেতা ও পরিবারতান্ত্রিকতার দাপটে কোণঠাসা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় কোন কোন আসনে দলে টানা সুযোগ সন্ধানী হাইব্রিড ও চাটুকার নেতাকর্মীদের উৎপাত, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, দলছুট অনেকে দলে ঢুকে নেতার আশীর্বাদে হঠাৎ করে প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া, উপেক্ষিত নেতাকর্মীদের চোখের সামনে নেতার বলয়ে থাকা ওইসব হাইব্রিড, সুযোগ সন্ধানী চাটুকার শ্রেণীর ‘কাউয়াদের’ রাতারাতি ভাগ্য ও রং-রূপের পরিবর্তনে বিস্ময় প্রকাশ করছেন দলের পোড় খাওয়া অনেক নেতাকর্মী। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কোন কোন আসনের নেতৃত্ব বিগত সময়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ-দুঃখ দুর্দশা, গ্রুপিং, অতীত ভুল বোঝাবুঝি এবং পাওয়া না পাওয়ার হতাশা দূরসহ তাদের দলে পুনরায় সক্রিয় করার প্রাণপণ চেষ্টাও চালাচ্ছেন সমানতালে। তবে কোন কোন আসনে মাঠ পর্যায়ের বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের অনেক ত্যাগী নেতা চরমভাবে উপেক্ষিত হওয়ার কারণে চরম ক্ষোভ-হতাশায় ভোগে আসন্ন নির্বাচনে সুযোগ বুঝে ওইসব নেতার নির্বাচনে বুমেরাং হতে পারেন এমনও আলোচনা-সমালোচনা হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। তারা বলছেন, স্বয়ং দলের সভানেত্রীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আসনের মাঠ পর্যায়ে গোপন তদন্ত করলে কথিত নেতা ও হাইব্রিডদের লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের অজানা অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এতে দলে যেমন আত্মশুদ্ধি আসবে তেমনি দলের ভাবমূর্তিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে দলকে কোন আসন হারাতে হবে না। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫টি এবং ১টিতে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি জয়লাভ করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ৩টি আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একক প্রার্থী থাকলেও অপর ৩টিতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া জেলার রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত জোট অনেকটা কোণঠাসা। প্রকাশ্য কোন মিছিল মিটিং না থাকলেও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদ পুনর্মিলনী, কেন্দ্র কমিটি গঠন, ঘরোয়া ও দলের অফিসকেন্দ্রিক সভা-সমাবেশ বেড়েছে। কোন কোন আসনে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এলাকাছাড়া থাকলেও আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারাও এলাকামুখী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মসজিদভিত্তিক ও ঘরোয়া বৈঠক শুরু করেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ জামায়াত-শিবিরের নারী সদস্যসহ বেশকিছু নেতাকর্মীকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এতদিন এলাকাছাড়া জামায়াত-শিবির কর্মীরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পর হার্ড লাইনে মাঠের রাজনীতি শুরু করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সূত্রের খবর রয়েছে। এসব ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সজাগ দৃষ্টি রাখছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। এছাড়া জেলার জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যক্রম ঝিমিয়ে থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আসনে দলটিও অনেকটা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সবকিছু ছাপিয়ে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সমমনারা চাচ্ছে সব আসন ধরে রাখতে, আর বিএনপিসহ সমমনা জোটের টার্গেট তাদের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে। কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা) ॥ বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ সংসদীয় আসন। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। এখানে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ, ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুছ এবং ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্রী লীগের মফিজুল ইসলাম ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান মজু এমপি হন। এছাড়া ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবদুল মতিন খসরু এমপি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া এ আসন থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং সেই লক্ষ্যে দলীয় কর্মকা-সহ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, শহর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আবদুছ ছালাম বেগ দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগের পাশাপাশি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রুপিং রাজনীতির বিরোধিতা করে তিনি ইতোপূর্বে কুমিল্লা নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন এবং দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে ২০০৮ থেকে ওই নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টানিয়ে এবং মহাসড়কের পার্শ্বে বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থিতা জানান দিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ঢাকা বিভাগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী। কিন্তু তাঁর এসব ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগালে প্রতিপক্ষরা তা তুলে ফেলে। এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি অভিযোগও করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এ আসন এলাকায় দলে গ্রুপিং রয়েছে, নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত। গ্রুপিংয়ের জেরে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারওয়ার আলম পলাশ নিহত হন। অপরদিকে এ আসনের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউপির গত নির্বাচনে চান্দলা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় টেঁটাবিদ্ধ হয়ে তাপস নামে নৌকার এজেন্ট নিহত হন। ওই ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়। এছাড়া আসনের বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের দুগ্রুপের পাল্টাপাল্টি দুটি আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টে দুপক্ষ পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন করেছে। ওই আসনের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়ও দল ও অঙ্গসংগঠনে কমিটি নিয়ে দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। গ্রুপিং রাজনীতির কারণে এ আসনে ঐক্যবদ্ধ কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীরা দুই-তিন ধারায় বিভক্ত বলে দলের স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে কোন কোন নেতা এ দ্বিধাবিভক্তিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বলে দাবি করেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে কোন্দল-গ্রুপিং নিরসন করা না গেলে ফলাফলের চিত্র পাল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে বিগত সময়ে যতগুলো অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন হয়েছে ততবারই এখানে দলের প্রার্থী বদল করেছে বিএনপি। দলীয় লোকজন জানায়, দল-বদলের প্রার্থীর কারণে ব্যাপক কর্মী-সমর্থক থাকলেও এখানে তারা অনেকটা অভিভাবক হারার মতোই মাঠে ছিলেন। ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি এএসএম আলাউদ্দিন। ওই নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে সাংগঠনিক কর্মকা-ে তাকে আর এলাকায় তেমন দেখা যায়নি বলে দলের অনেক নেতাকর্মী জানান। এরপর দলকে সুসংগঠিত করতে দুই উপজেলার (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) সাংগঠনিক দায়িত্বে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ। সেই থেকে ব্যক্তিগত ইমেজ ও সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে তিনি আসন এলাকায় দলের মজবুত অবস্থান করে নেন। এখানে তার নেতৃত্বে দল বেশ ঐক্যবদ্ধ এবং তিনি দলের সম্ভাব্য একক প্রার্থী বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। তবে আগামী নির্বাচনে এখানে বিএনপি থেকে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুছ ও এএসএম আলাউদ্দিন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। কুমিল্লা-৬ (সদর) ॥ এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলা, অনুসারী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ তিনি এ সংসদীয় আসন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আগাম আহ্বান জানিয়ে আসছেন। বিগত সময়ে এখানে রাজনৈতিক দুটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। তবে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার রাজনীতিক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগে আফজল ও বাহার গ্রুপ নামে দুটি চির প্রতিদ্বন্দ্বী ধারা বিদ্যমান। বিগত নির্বাচনে জেলার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আফজল খানের জ্যেষ্ঠপুত্র ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কাছে হেরে যান। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এ্যাডভোকেট আফজল খানের কন্যা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আঞ্জুম সুলতানা সীমা মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ওই সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে অপরপক্ষের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ তোলা হয়। এরপর মহানগর কমিটিতে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে সহ-সভাপতি পদে রেখে কমিটি ঘোষণা করা হয়। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আফজল খান পুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান সংবাদ সম্মেলন করে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ও তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীরা আসন এলাকার মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন এবং জাতীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পৃথক পৃথকভাবে পালন করে আসছেন। ইতোমধ্যে উভয় সম্ভাব্য প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। এখানে দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মোঃ ওমর ফারুক। পাঁচ বছর জেলা পরিষদের দায়িত্বে থেকে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে বেশ আলোচিত হন। এছাড়া এবার তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান সিটি কর্পোরেশনসহ নগরের ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও দলীয় দ্বিধা-বিভক্তির কারণে আসনটি ধরে রাখার ব্যাপারে শঙ্কিত দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের হস্তক্ষেপ ও নেতৃত্বের অতীত কর্মকা- বিচার-বিশ্লেষণসহ ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিলে আসনটি আবারও সহজেই আওয়ামী লীগের ঘরে আসবে। এদিকে লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের টানা বিজয়ের পথ ধরে এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ২০০৬ সালে আকবর হোসেনের মৃত্যুর পর এখানে দলের নেতৃত্বে আসেন শিল্পপতি হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ২০০৮ সালে তিনি দলীয় মনোনয়নে পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু দলের স্থানীয় নেতা-নেতৃত্বে বিভেদের কারণে ওই নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয়ের মধ্য দিয়ে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়। একাদশ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপি সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে দলের মধ্যে হাজী ইয়াছিন এবং সিটি মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু সমর্থিত দুটি ধারা বিদ্যমান। এ দুনেতার মধ্যে সাবেক এমপি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন এ আসনে দলের প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। সে লক্ষ্যে তিনি জোর সাংগঠনিক কর্মকা-সহ সভা-সমাবেশ বৃদ্ধি করেছেন। এছাড়া কুমিল্লা-১০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীরও কুমিল্লা সদর আসনে দলীয় প্রভাব রয়েছে। এ আসন থেকে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য, আলহাজ মুহাম্মদ নুরুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও এবিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার জামান বাপ্পীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং সে লক্ষ্যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) ॥ এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) এমপি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন। গত নির্বাচনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি আসন্ন নির্বাচনেও মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে পাওয়া না পাওয়ার বেদনা-হতাশা ও ক্ষোভ থেকে এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। বরুড়ায় আওয়ামী লীগকে যিনি তিলে তিলে সংগঠিত করেছেন চারবারের নির্বাচিত সেই সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর পরিচ্ছন্ন সৎ ও মেধাবী রাজনীতিক এবং বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ও নিজস্ব অর্থায়নে ৩ কলেজসহ ৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবদুল হাকিমের পুত্র কুমিল্লা আইন কলেজের সাবেক ভিপি, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এএইচএম কামরুল ইসলাম দলের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি তাঁর বাবার বর্ণাঢ্য রাজনীতিক ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি তাঁর বাবার উত্তরসূরি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে দলের হাইকমান্ডে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে আওয়ামী লীগ মূলত তিনটি ধারায় বিভক্ত। দলের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুলও এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মকা- অব্যাহত রেখেছেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এখানে কোন্দলের কারণে বরুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র ছাড়াও সাবেক এমপি নজরুলের নিজ এলাকা আদ্রা ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচিত হয়। অপরদিকে দলের ত্যাগী নেতা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মিয়াজী এ আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন। একসময়ের আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মিয়াজী দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ছাড়াও এলাকায় গণসংযোগ করছেন। দলের স্থানীয় রাজনীতিতে তাকে ফ্যাক্টর বলেও মনে করেন অনেকে। এ ৩ নেতার সকলেই দলের মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে এ আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক ৩ বারের এমপি প্রয়াত আবু তাহেরের জ্যেষ্ঠ ছেলে এবং দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন মনোনয়ন চাইবেন। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একাদশ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থীও তিনি। দলের স্থানীয় নেতারা জানান, শত প্রতিকূলতার মাঝেও এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ৭টি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে এখানে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা নেবে বিএনপি। কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) ॥ এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মোঃ তাজুল ইসলাম। তিনি বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য একক প্রার্থী। দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুত ও রাস্তাঘাটসহ অনেক উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন করেছেন। তবে গত ২ মেয়াদে পাওয়া-না পাওয়া এবং পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠজনদের প্রভাবের কারণে দলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ-অসন্তোষ রয়েছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধসহ আসনটি ধরে রাখতে মাঠ পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছেন তাজুল ইসলাম। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এখানে সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারলে আসন আবারও আওয়ামী লীগের ধরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে এ আসন থেকে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি ও বর্তমানে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আলমগীর মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেন। তার অনুসারীরা জানান, এ ধরনের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই ইতোপূর্বে তিনি বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরই মধ্যে তিনি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকহীন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ তার পূর্বের অনুসারীদের নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগসহ সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। মহাজোট থেকে মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে একসময় এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। দ্বন্দ্বের কারণে এখানে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে আওয়ামী লীগের ঘরে যায়। বিএনপিবিহীন গত নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০০১ সালে নির্বাচিত সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার-উল আজিম মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। তবে দলের কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ওরফে চৈতী কালাম দলের দুঃসময়ে দীর্ঘদিন ধরে এ আসন এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তিনি আসন এলাকার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলকে চাঙ্গা করে তোলেন। এরই মধ্যে তিনি দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ ও ঈদ পুনর্মিলনীসহ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করেন। সাংগঠনিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি এ আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিসহ নেতাকর্মীরা শতভাগ আশাবাদী। কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ ও লালমাই) ॥ জেলার নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও নবগঠিত লালমাই- এ তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান এমপি পরিকল্পনামন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। এ আসন থেকে তিনি দলের সম্ভাব্য একক ও হেভিওয়েট প্রার্থী বলে প্রচার রয়েছে। এখানে তাঁর ভাই গোলাম সারোয়ার সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। অপর ভাই এম এ হামিদ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং তিনি লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি বলে জানা গেছে। এ আসনে মন্ত্রীর হাত ধরে লালমাই উপজেলা গঠিত হয় এবং গত ২ মেয়াদে এলাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা- সম্পন্ন হয়। এ আসনে দলীয় নেতাকর্মীর মাঝে নানা কারণে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। সম্প্রতি এ আসনের লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের কেশনপাড় এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়। তবে এ আসন এলাকার বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী প্রায় প্রতি সপ্তাহে সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন এবং সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছেন। অপরদিকে এখানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে দলের তৃণমূল পর্যায়ে এ নেতার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। নেতাকর্মীরা জানান, তাঁর উদ্যোগে সদর দক্ষিণ পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ উপজেলা গঠিত হয়। দিনে দিনে সদর দক্ষিণ একটি মডেল উপজেলায় উন্নীত হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন। কুমিল্লা সদর আসন থেকেও তিনি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। উভয় আসন এলাকায় তার অনুসারী নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া দলের নাঙ্গলকোটের সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া, নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ লক্ষ্যে তারা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ আসনে বিএনপিতে দুই ভূঁইয়া গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এখানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তিনটি ধারায় বিভক্ত। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিডপয়েন্টে ও ভারত সীমান্তবর্তী জেলার চৌদ্দগ্রাম আসনটি একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এ আসনের গুরুত্ব অনেক। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে লক্ষ্য করা যায়- এ আসনটিতে যে দল বা জোটের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ওই দল বা জোটই সরকার গঠন করেছে। ওই বিবেচনায়ও এ আসনের প্রতি লোকজনের আগ্রহ বেশি। এ আসনের বর্তমান এমপি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক মুজিব। এই আসন থেকে তিনি ৩ বার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ওই মেয়াদে তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হয়ে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। পরে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মোঃ মুজিবুল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। মন্ত্রী মুজিবুল হকের হাত ধরে অবহেলিত চৌদ্দগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, পুল-কলভার্ট, মসজিদ-মন্দির, বিদ্যুতসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। চৌদ্দগ্রামের এমন কোনো গ্রাম কিংবা পাড়া নেই যেখানে তার বিচরণ নেই বা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মুজিবুল হক বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলেন, আমি কৃষকের সন্তান। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলের মনোনয়ন দেয়ায় এ আসন এলাকার জনগণের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে আমি বারবার এমপি হয়েছি, আর জননেত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় মন্ত্রী হয়েছি। মন্ত্রী মুজিবুল হক তাঁর মন্ত্রণালয় ও জেলার রাজনীতির গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায়ও প্রায় প্রতি সপ্তাহে দলের জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রেখেছেন। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে দল ও অঙ্গসংগঠনের পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী কেন্দ্র কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে আসনটির ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত। আগামী নির্বাচনে তিনিই এ আসনে দলের একক প্রার্থী। এ মুহুর্তে তার বিকল্প কোনো প্রার্থীর কথা ভাবছেন না দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে এখানে বিএনপি থেকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি মোঃ কামরুল হুদা। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দুইবার বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমা হামলায় বাসের আট যাত্রী নিহত হওয়ার মামলায় কামরুল হুদা প্রায় আট মাস কারাভোগ করেন। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামি হওয়া ছাড়াও দলীয় কর্মকা-ের কারণে তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়া এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের নাম প্রচার রয়েছে। এখানে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। এ কারণে বিএনপির কোন নেতাই এখানে রাজনৈতিক বিনিয়োগ করতে চান না। এ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এইচএনএম সফিকুর রহমান এবং ২০ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ নিজ নিজ দল এবং জোট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। সফিকুর রহমানের নেতৃত্বে এ উপজেলায় জাতীয় পার্টি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ বলে একাধিক নেতাকর্মীর দাবি। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ তার বাবার রাজনৈতিক ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।
×