ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে ১৯ কেজি এনপিএসের আরেকটি চালান জব্দ

গ্রীন টির আড়ালে ভয়ঙ্কর মাদক আসা থামছেই না

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গ্রীন টির আড়ালে ভয়ঙ্কর মাদক আসা থামছেই না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একের পর এক গ্রীন টির প্যাকেটে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক এনপিএসের চালান। শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৯ কেজি এনপিএসের আরেকটি চালান জব্দ হয়েছে। বিমানবন্দরের ফরেন পোস্ট অফিসে পার্সেল হিসেবে গ্রীন টির প্যাকেটে এনপিএসের চালানটি আসে। চালানটি জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এই নিয়ে গত ১৬ দিনে পছাট বড় মোট ছয়টি চালানে প্রায় ৩ হাজার কেজি এনপিএস জব্দ হয়েছে। এমন ঘটনায় দেশে মাদকের প্রবেশের বিষয়ে রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, গোয়েন্দা সংস্থা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে। শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৯ কেজি নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সংস্থাটি বলছে, ভারতের জেড এয়ারওয়েজে এনপিএসের চালানটি এসেছে। চালানটি বিমানবন্দরের ফরেন পোস্ট অফিস থেকে জব্দ করা হয়। এনপিএসগুলো গ্রীন টি ব্যাগের মধ্যে পার্সেল হিসেবে এদেশে এসেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, গ্রীন টি হিসেবে এনপিএসগুলো আমদানি করা হয়েছে। ইথিওপিয়ার রাজধানীর আদ্দিস আবাবা থেকে চালানটি পাঠানো হয়েছে। ঢাকার তেজগাঁও থানাধীন মনিপুরীপাড়ার একটি ঠিকানায় চালানটি এসেছে। ভারতঘুরে জেড এয়ারওয়েজের মাধ্যমে ফরেন পোস্ট অফিসে এসেছিল চালানটি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ১২০ কেজি এনপিএসের একটি চালান বিমানবন্দরের ফরেন পোস্ট অফিস থেকে জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সেগুলোও গ্রীন টির প্যাকেটে করে চা হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডাক বিভাগের সর্টিং এয়ারপোর্ট অফিসের গোডাউন থেকে ২৩টি কাটুনে মোট ৪৬৮ কেজি এনপিএস জব্দ হয়। পরে ওই মাদকের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার তথ্য মোতাবেক আরেকটি অভিযানে ঢাকার কাকরাইল থেকে রাতেই আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ী দুবাই ফেরত মোহাম্মদ নাজিমকে গ্রেফতার করা হয়। নাজিমের তথ্য মোতাবেক শান্তিনগরে অভিযান চালিয়ে প্রায় চার শ’ কেজি এনপিএস জব্দ করা হয়। দুই দফায় চালানো অভিযানে মোট ৮৬১ কেজি এনপিএস জব্দ হয়। জব্দকৃত মাদকের মূল্য প্রায় সোয়া কোটি টাকা। গত ৮ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ইউনিটের ভেতরে অবস্থিত ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আসা ১৬০ কেজি এনপিএস জব্দ করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, এনএসআইয়ের সহযোগিতায় গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আসা জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানে চালানটি আসে। পণ্যগুলোর রফতানিকারকের নাম জিয়াদ মুহাম্মদ ইউসুফ, ঠিকানা আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া। আর আমদানিকারক হিসেবে লেখা রয়েছে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন এশা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম। গত ১১ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পার্সেল হিসেবে আসা ১৬ শ’ কেজি এনপিএস জব্দ করে সিআইডি। মাদকগুলো ৯৬টি কাটুনে ২০টি ঠিকানায় গ্রীন টি নামে আনা হয়েছিল। সিআইডির ডিআইজি মোঃ শাহ আলম জানান, ব্যবসায়ীরা কৌশলে এনপিএস নামের নতুন মাদকটি গ্রীন টির আড়ালে আনছে। গ্রীন টি আমদানি যেহেতু বৈধ, তাই গ্রীন টির প্যাকেটে করে গ্রেফতার এড়িয়ে মাদক মাফিয়ারা নিরাপদে মাদকটি দেশে আনছে। এজন্য সম্প্রতি বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্রীন টির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মাদকগুলো গুলিয়ে অথবা চিবিয়ে সেবন করা হয়। পাশাপাশি ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে এই মাদকটি বিদেশে পাচার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এই মাদকের চাহিদা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় বেশি। এতদিন মাদকগুলো গ্রীন টির প্যাকেটে করে আসত। মাদকটির প্রবেশ ঠেকাতে আমদানি করা গ্রীন টির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে একের পর পর গ্রীন টির প্যাকেটে চা হিসেবে আমদানি করা এনপিএসের চালান ধরা পড়ছে। আমদানি করা গ্রীন টির ওপর নজরদারি আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
×