ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়োমেট্রিক মেশিন ব্যবহার না করলে ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  বায়োমেট্রিক মেশিন ব্যবহার  না করলে ব্যবস্থা

নিখিল মানখিন ॥ বৈদ্যুতিক হাজিরা পদ্ধতি (বায়োমেট্রিক মেশিন) ব্যবহার না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারী-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রত্যাশিত হারে না পৌঁছানোর কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। বৈদ্যুতিক হাজিরা পদ্ধতি (বায়োমেট্রিক মেশিন) বাস্তবায়ন করছে না স্বাস্থ্য সেক্টরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সেক্টরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে এই পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্বাস্থ্য সেক্টরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতি চালু করা হয়নি। এই মেশিন স্থাপন করা হয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেও নিয়মিত উপস্থিতি তথ্য পাঠানো হচ্ছে না। ফলে অনেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও কর্মকর্তার কর্মস্থলে উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সেক্টরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত উদ্যোগসমূহ সফল না হওয়ায় বৈদ্যুতিক হাজিরা পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কোন অভিযোগ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যাহত হতে পারে এমন কোন পরিস্থিতি বরদাশ্ত করা হবে না। যে সিভিল সার্জন তার অধীন চিকিৎসকদের গাফিলতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন না তাঁকেও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের স্বাস্থ্য সেবা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসা কুড়াচ্ছে তাকে আরও উর্ধে তুলে ধরতে সকলকে কাজ করতে হবে বলে জানিয়ে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কর্মস্থলে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি চাকরিচ্যুত করার মতো কঠিন শাস্তি দেয়ার হুমকিও দিয়ে আসছেন। কিন্তু কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত পরিদর্শন টিমের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। থানা পর্যায়ে টিমের সদস্যরা যান না। সরকারী চিকিৎসাসেবা এমনিতেই প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক সরকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও কর্মস্থলে সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, কার্যদিবসে অনেক সরকারী মেডিক্যাল শিক্ষক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজ করে থাকেন। দিনে নামমাত্র সময় দিয়ে থাকেন তারা। দেশের বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সাইনবোর্ডে ছেয়ে গেছে সরকারী চিকিৎসকদের নাম। নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি সরকারী হাসপাতালের রোগী নিজেদের চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসালয়ে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেক সরকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অনেক চিকিৎসক তদ্বির চালিয়ে অবস্থান করছেন নিজেদের সুবিধাজনক এলাকায়। জেলা, এমনকি বিভাগীয় কার্যালয়ে তাদের অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন। যোগদান করার পরই কর্মস্থলে অনেকের দেখা নেই। তাদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। অথচ প্রত্যেক চিকিৎসককে প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাম পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ার নিদের্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসকদের উপস্থিতি সরেজমিনে দেখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দশ সদস্যের আকস্মিক পরিদর্শন টিম নিয়মিত কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পরিপত্রে বলা হয়েছে, কর্মস্থলে চিকিৎসকদের ইলেকট্রনিক হাজিরা মনিটরিং করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপিত মেশিনে চিকিৎসকদের ইলেকট্রনিক হাজিরা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘বায়োমেট্রিক মেশিন কোন সময় অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্ক দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে হবে বলে জানানো হয় পরিপত্রে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে দেশের কিছু সংখ্যক সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বায়োমেট্রিক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল। তখন চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থাপিত বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছিল খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেকটি আদেশ পাঠানো হয় সিভিল সার্জন এবং সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের কাছে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের সব সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক আদেশে নিজ নিজ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে হাজিরা মনিটরিংয়ের জন্য স্থাপিত বায়োমেট্রিক মেশিন নষ্ট করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে তিন কর্মদিবসের মধ্যে অধিদফতরকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ অনুযায়ী সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কোন তথ্যই পাঠাননি।
×