ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, সুবিধা নিতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, সুবিধা নিতে চায় বিএনপি

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ কুমিল্লার শ্যামল মায়া মেঘনা উদাস, কণ্ঠে তার মণিহার গোমতী-তিতাস। এছাড়া বুকে ধারণ করা ডাকাতিয়া, সোনাইছড়ি, কাঁকড়ী, বালুজুড়ী নদী বিধৌত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সংলগ্ন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অবস্থিত শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠখ্যাত প্রাচীন জেলা কুমিল্লার রয়েছে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। পাকিস্তান গণপরিষদে মাতৃভাষা বাংলার প্রথম দাবি উত্থাপনকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ সময়ের সাহসী সন্তানদের পদভারে এই কুমিল্লার মাটি যেমন হয়েছে ধন্য তেমনি ইতিহাসের ঘৃণ্য ঘটনার সৃষ্টিকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারী খুনী মোস্তাক ও রশীদের কারণে কুমিল্লার মাটি হয়েছে কলঙ্কিত। আবার কুমিল্লারই এক সন্তান সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করতে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল উত্থাপন করে সে কলঙ্ক কিছুটা হলেও দূর করেছেন। ১৭টি উপজেলা, ৮টি পৌরসভা ও একটি সিটি কর্পোরেশন সমন্বয়ে বিন্যস্ত ১১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা জেলার রাজনীতি ‘কুমিল্লা উত্তর’ ও ‘কুমিল্লা দক্ষিণ’ এ দুটি সাংগঠনিক জেলায় বিভক্ত। আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রাচীন ও বৃহৎ এ জেলার রাজনীতি বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। নদ-নদী, খাল ও জলাশয় পরিবেষ্টিত কুমিল্লা উত্তর জেলার কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-২, কুমিল্লা-৩, কুমিল্লা-৫ ও কুমিল্লা-৭সহ ৫টি আসনের প্রায় সব আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় ও জোটের মনোনয়ন লাভের জন্য এসব সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে যেমন গ্রুপিং রাজনীতির ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন তেমনি হাইকমান্ডে চালাচ্ছেন জোর লবিং। ওই ৫টি আসনের মধ্যে কুমিল্লা-২ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) এমপি ব্যতীত অপর ৪টি আসন রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। অধিকাংশ আসনের দলের ও মহাজোটের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত সময়ে কোন কোন এমপি ও পরিবারের বিতর্কিত কর্মকা-, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নসহ পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে গ্রুপিং রাজনীতি। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসন পুনরুদ্ধারে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- জনসম্মুখে তুলে ধরে রাজনৈতিক গ্রুপিং মিটিয়ে বিতর্কিতদের মনোনয়ন না দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আসনগুলো ধরে রাখতে পারবে। কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) ॥ ঢাকা থেকে কুমিল্লার প্রবেশদ্বার এ আসনটিতে ১৯৭৩ সালের পর ২০০৮ এর নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারেনি। মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ এ আসনে জাসদ, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি থেকে ৪ বার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিসহ ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য একক প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন টানা ৪ বার এ আসনের এমপি ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এ আসনের ২টি উপজেলার দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে হারিয়ে ৩৫ বছর পর আসনটি উদ্ধার করেন এবং ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে পুনরায় জয়ী হন। এরই মধ্যে তাঁর ছেলে মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। মোহাম্মদ আলী বর্তমানে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে এ আসন এলাকার দাউদকান্দিতে ‘টাকার খনিখ্যাত’ বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি কাজের ভাগবাঁটোয়ারাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতাকর্মী হত্যাকান্ডে শিকার হন। এদের মধ্যে রাজন, অপু, মিরাজ, মিলন, নাজমুল হত্যাকান্ড বেশ আলোচিত। বিভিন্ন ইস্যুতে দাউদকান্দিতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে গ্রুপিং চরমে। এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩টি কমিটি রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব কমিটির নেতা- নেতৃত্ব দ্বিধাবিভক্ত এবং জাতীয় ইস্যু ও স্থানীয় পর্যায়ে তারা পৃথক কর্মসূচী পালন করে থাকেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি। তিনি এলাকায় স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিদ্যুত, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ উন্নয়ন করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন লাভে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ-ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। এলাকায় তিনি ক্লিন ইমেজের ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত। এদিকে এ আসনের মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শফিকুল আলম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছেন বলে জানিয়েছেন। এ আসনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হাসান জামিল সাত্তারের ছেলে ব্যারিস্টার নাঈম হাসান এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগসহ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের তথ্য তুলে ধরে অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। এছাড়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবদুল মান্নানও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এ আসনের মেঘনা উপজেলার সাতানী গ্রামের বাসিন্দা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব আলতাফ হোসেন মনোনয়ন পেতে পারেন। এছাড়া এ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আবু জায়েদ আল মাহমুদ (মাখন সরকার) মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী একাধিক নেতা জানান, এবার এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসনে বিএনপি থেকে একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেশ তৎপর রয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা জানান, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসন ছাড়াও তিনি কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসন থেকেও দলের প্রার্থী হবেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় দলীয় কর্মকা-ের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বর্তমানে আদালতে দুদকের দায়ের করা মামলাসহ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। তিনি আইনী জটিলতায় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তাঁর ছেলে ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস) ॥ এ আসনের বর্তমান এমপি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন ভূঁইয়া। তিনি এ আসন থেকে আবারও জোটের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ, নিটল-নিলয় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সেলিমা আহমাদ মেরী, তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের পশ্চিম জেলা সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম ও ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আহমেদ খান প্রার্থী হতে পারেন। স্থানীয়রা জানায়, এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকান্ডে বর্তমানে বেশ সক্রিয় সেলিমা আহমাদ মেরী। তিনি অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন জাতীয় দিবস ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নে শোডাউনসহ সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী নেতাকর্মীরা। অধ্যক্ষ মজিদের অনুসারীরা জানান, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুরাদনগর আসনের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে এখানে দলের হাল ধরেন আবদুল মজিদ এবং তিনি নবম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির এমকে আনোয়ারের কাছে পরাজিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে প্রথমে অধ্যক্ষ মজিদকে দলের মনোনয়ন দেয়া হলেও পরে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আমির হোসেন ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) এমপি হন। এ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের অক্টোবরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে আগামী নির্বাচনে তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কায়জার এ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী বলে এলাকায় বেশ প্রচার রয়েছে। তবে এ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতাকর্মীর অনেকে জানিয়েছেন। এছাড়া হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লার নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) ॥ আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও এফবিসিআইসির সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এ আসনের বর্তমান এমপি। গত নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন। এরপর আওয়ামী লীগ তাঁকে দলে টেনে নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। স্থানীয়রা জানান, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপি হওয়ার পর এ আসনের সকল এলাকায় বিদ্যুত, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে এসব উন্নয়ন কাজের ভাগবাঁটোয়ারা, নেতাকর্মীদের টেন্ডারবাজি কিংবা পার্সেন্টেজ, এসব তাঁকে ছুঁতে পারেনি। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে তাঁর ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রায় প্রতিসপ্তাহে মাঠে-ময়দানে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পেলে এখানে আওয়ামী লীগের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া এ আসনে দলের পোড় খাওয়া নেতা কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনিও নির্বাচনী এলাকার বিভিন্নস্থানে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের মনোনয়ন পেতে তিনি জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি ধারা চলমান রয়েছে। দু’পক্ষ এক হয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিলে আসনটি আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ। তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পর থেকে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। জানা যায়, মামলাজনিত কারণে কায়কোবাদ এ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তাঁর পরিবার থেকে যে কেউ দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে প্রচার রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার মোঃ রাশেদুল হাসান মামুন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ কোন কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং সেই লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও মুরাদনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেল এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদ) থেকে গত নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়নে প্রার্থী হয়ে হেরে যাওয়া আক্তার হোসেন এবারও মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) ॥ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সীর ছেলে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। ওই নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুকে মহাজোট থেকে প্রার্থী করা হয়। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগে চতুর্মুখী কোন্দলের কারণে এখানে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি দলে ফিরে আসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। এদিকে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের অধিকসংখ্যক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের কুমিল্লা উত্তর জেলা সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তফা। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য, ঢাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান, শিক্ষানুরাগী ও শিল্পপতি আবুল কালাম আজাদ। গত বছরের মতো এবারও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পপতি আবুল কালাম আজাদ এ আসনের বরকামতা ইউনিয়নের নবীয়াবাদ এলাকায় ৮ সহস্রাধিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের জন্য ভোজের আয়োজন করে বেশ আলোচিত হন। তিনি আসন এলাকায় দলীয় ও সামাজিক কর্মকান্ডে মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি ও তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীরা। এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ ও রোশন আলী মাস্টার মনোনয়ন চাইবেন। তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসন এলাকায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একাদশ নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে না পারলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৪টি নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১/১১ এর সময় তিনি গ্রেফতার হন এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনে এখানে দলের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন তাঁর স্ত্রী মাজেদা আহসান মুন্সী। একাদশ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী মনোনয়ন চাইবেন। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, হংকং বিএনপির সভাপতি এএফএম তারেক মুন্সী। এছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমেনা আহমেদ এমপি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, এখানে আসন ভাগাভাগিতে ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টি ও ন্যাপ যে কোন কৌশলে প্রার্থিতার ভাগ বসাতে চায়। ফলে জোটের প্রধান আওয়ামী লীগের চার গ্রুপের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি জাপা ও ন্যাপের মনোনয়ন দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কে এগিয়ে যান এ নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে টেনশন ক্রমেই বাড়ছে। কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) ॥ এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সাবেক ডেপুটি স্পীকার অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ। তিনি এ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী নির্বাচনে উভয় নেতা দলীয় মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতি একে অপরের বিরুদ্ধে নানামুখী সমালোচনাও করতে শোনা যাচ্ছে এবং যা সংবাদ মাধ্যমসহ ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। এখানে প্রভাবশালী দু’নেতার কর্মীদের মাঝে প্রায়ই ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। উভয় গ্রুপের সিনিয়র কয়েক নেতা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনের পর ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে দলের অনেক নেতাকর্মী ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্তের কাছে ভিড়তে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আসন এলাকায় বেশ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে জানান নেতাকর্মীর অনেকে। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জোটের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। এক সময় তাঁর নেতৃত্বে এখানে বিএনপির মজবুত অবস্থান সৃষ্টি হলেও বর্তমানে বিএনপিতে নেতৃত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জানা যায়, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি শুরু করেন রেদোয়ান আহমেদ। ২০০৬ সালে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) গঠনের পর তিনি এ দলের মহাসচিব হন। ওই সময় বিএনপির হাল ধরেন খোরশেদ আলম এবং তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেও হেরে যান। পরবর্তীতে তিনি মারা যাওয়ার পর দলের স্থানীয় নেতৃত্বে অনেকটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় এ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন নেতাকর্মীরা। তবে এলডিপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকলে রেদোয়ান আহমেদ এ আসন থেকে জোটের মনোনয়ন পাবেন বলে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কুমিল্লা উত্তর জেলার সভাপতি লুৎফর রেজা খোকন দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র নিয়েও মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হওয়ায় তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন। এবার তিনি মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
×