ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সক্রিয় ছয়টি জোট, চলছে নানা সমীকরণ, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচী আজ

নির্বাচনমুখী জোটের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনমুখী জোটের রাজনীতি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম জোটের রাজনীতি। সরব ছোট বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা। জোটের শক্তি বাড়াতে ছোট ছোট দলগুলো নিয়েও টানাহেঁচড়া চলছে। চলছে জোট গঠনের দেন দরবার। ন্যায্য হিস্যা আদায়ের চেষ্টা। নানা সমীকরণ। কোন জোটে গেলে লাভ-ক্ষতি এ বিষয়ে সচেতন দলগুলো। কোন কোন ক্ষেত্রে আদর্শগত বিরোধ থাকলেও নির্বাচনী ইস্যুতে গাঁটছড়া বাঁধতে চাইছে দলগুলো। ইতোমধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে ছয়টি রাজনৈতিক জোট। আগামী মাসে আরও একাধিক জোটের যাত্রা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। ৬০ দলের সমন্বয়ে সবচেয়ে বড় জোট গঠন করেছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এরপর জোট শরিক হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা। বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। ছোট ছোট দলগুলো মিলিয়ে আরও অন্তত পাঁচটি নির্বাচনী জোট গঠনের প্রস্তুতি চলছে। আজ শনিবার মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামী ভাবধারার বিশ্বাসী ১৫টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দলের সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স’ নামে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক জোট। এদিকে অক্টোবরের মধ্যে আরও একাধিক রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। পরিধি বাড়তে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেরও। তবে বড় দলগুলোর জোটের পরিধি বাড়ার সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে। আবার একাধিক জোট এক হয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর আভাসও মিলেছে নেতাদের কাছ থেকে। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স গঠন করা নিয়ে তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আওয়াল এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসী কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে নতুন এই জোটের যাত্রা শুরু হচ্ছে। আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ হোটেল ইম্পেরিয়ালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। ইসলামী ঐক্যজোটের মিজবাহুর রহমান চৌধুরী, গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, তরিকত ফেডারেশনের একাংশসহ আরও কয়েকটি দল ও সংগঠন জোটে থাকবে। ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাস ও মুক্তিযুদ্ধে চেতনার ঐক্য গড়ে তুলতেই এই জোট গঠনের কথা উল্লেখ করে আওয়াল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে এই জোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে জোটভিত্তিক রাজনীতির প্রচলন শুরু হয়েছে। ১৭৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ’৯০-এর স্বৈরাচার পতন এসব কিছুই জোটভিত্তিক রাজনীতির সফলতা। এছাড়া রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিতাসহ জোটের অর্জন রয়েছে অনেক। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক জোট হলে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরুর পর থেকেই রাজনৈতিক ঐক্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষা উভয়ই কমেছে। তবুও নির্বাচনকালীন জোটের প্রবণতা চলছে। চলমান রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় জোটের রাজনীতি অব্যাহত থাকার কথাও বলছেন তারা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অন্য বারের চেয়ে এবারও জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ একাধিক রাজনৈতিক জোট নিয়ে দরকষাকষির শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে নতুন জোটগুলো যে জোটকে সমর্থন দেবে সেই দলই ক্ষমতায় যেতে পারে। এক্ষেত্রে নতুন জোটগুলোর জনসমর্থন ও আদর্শগত বিষয় বিবেচনায় থাকবে। সবশেষে জোট শরিক বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করবে আসন বণ্টনসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর। যদিও ইতোমধ্যে ১৪ দল, ২০ দলীয় জোটে ও এরশাদের জোটেও আসন বণ্টনসহ নির্বাচনকালীন ইস্যুতে ইতোমধ্যে দরকষাকষি শুরু করেছে। নতুন করে জোটের যাত্রা শুরু করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তার সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহামুদুর রহমান মান্না রয়েছেন। এসব দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। গণফোরামের ড. কামাল হোসেন মিলিয়ে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বিত কর্মসূচী আজ ঘোষণা করা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এই জোটের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা আছে। আবার বিএনপির সঙ্গে যেতে চায় জোটটি। যদিও কামাল হোসেন বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে কোন ঐক্য নয়। নতুন এই রাজনৈতিক জোটকে নির্বাচনে অংশ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনভাবেই দেশে জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। তাই যুক্তফ্রন্টকে জাতীয় ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিতে হলে আওয়ামী লীগের কাছে আসতে হবে। শেষ পর্যন্ত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, সিপিবি-বাসদ জোট যুক্তফ্রন্টে যোগ দিতে পারে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক জোটের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একাধিক রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে পৃথক আরেকটি জোটের যাত্রা শুরু হয়েছে। এতে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল যুক্ত হতে পারে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে সমন্বিত কর্মসূচী ঘোষণা করব। এই জোটের পক্ষ থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার কথাও জানান তিনি। জোটের রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে জোটভিত্তিক রাজনীতির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে জোটভিত্তিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটে। জোটের রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৯০ সালের পর জোটভিত্তিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। আন্দোলন শেষে জোটের খোঁজ খবর কেউ রাখে না। আমাদের লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়া। কিন্তু দল ও নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অভাবে এর কোন কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, এসব কারণে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যেমন শতভাগ সফল হতে পারিনি তেমনি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে আমরা শক্তিশালী ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছি। ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার মানসিকতার কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে বলেও মনে করেন এই রাজনীতিবিদ। জোট করে ভোটের লড়াইয়ে নামার পথে হাঁটছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদসহ আরও কয়েকটি বাম প্রগতিশীল ঘরানার দল। পিছিয়ে নেই ইসলামী দলগুলোও। যদিও সিপিবি-বাসদ জোট অনেক আগে থেকেই চলমান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য নির্বাচনী জোটগুলো সেভাবে পর্দা উন্মোচন না করলেও পর্দার আড়ালে আগাম দরকষাকষির আলোচনা অব্যাহত আছে। মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই এ ধরনের জোট গড়ার রাজনীতি শুরু হয়েছে। বড় দলগুলোর পাশাপাশি ছোট দলগুলোও ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে জোটের রাজনীতিতে শামিল হতে ইচ্ছুক। কেননা অতীতে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় নির্বাচনী জোট করে জামায়াতসহ তিনটি দল ফায়দা নিতে সক্ষম হয়। জামায়াতের মতো স্বাধীনতাবিরোধী দলও মন্ত্রিত্বের স্বাদ গ্রহণ করে। সাংগঠনিকভাবে ক্ষমতার পাঁচ বছরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে বিগত মেয়াদে কম-বেশি লাভবান হয়েছে। বর্তমানে দলটি সরকার ও বিরোধী দলে রয়েছে। আবার এরশাদ আছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের আসনে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা নানাভাবে সুবিধা নেয়া ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক নানা সমীকরণের হিসাব মিলিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল শক্তিশালী জোটের সঙ্গে আগেভাগে একীভূত হওয়ার কথা ভাবছে। ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দুই প্রধান দলের মধ্যে যাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি তাদের প্রতি দলগুলো ঝুঁকছে বেশি। এই যখন অবস্থা তখন জাতীয় পার্টিও বসে নেই। নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিসহ ভোটের আগে দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়াতে তারাও জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলছেন, তাদের দল এবার পৃথক নির্বাচনী জোট করেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট থেকে। প্রথমত, কোন কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের বাইরে থাকলে নির্ঘাত সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। প্রয়োজনে এখনকার মতো সরকারের মন্ত্রিসভায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সংসদেও যৌক্তিক বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে। তাই এ হিসাবকে যেসব ছোট দল প্রাধান্য দিতে চায় তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করতে যোগাযোগ শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন জোট গঠন করেছি। প্রস্তুতি আছে একক নির্বাচন করার। সময় বলে দেবে আমরা কোন জোটে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেব। তিনি বলেন, আমাদের জোটে আরও একাধিক রাজনীতিক দলের যুক্ত হবার কথা রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নিজ নিজ অবস্থানে জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, ১৪ দলীয় জোট সম্প্রসারণ করে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আমরা ১৪ দলীয় জোট জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে এই জোটকে সুসংহত করার পাশাপাশি জোট সম্প্রসারণের বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই বড় দল ঘুরেফিরে ক্ষমতায় আসে- এ বিষয়টি বুঝতে পেরে ছোট দলগুলোও বেশ আগ্রহ নিয়ে তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে। কারণ এসব ছোট দলের শীর্ষ নেতারা জানেন তারা কখনও নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই বড় দলগুলোরও ওপর তারা সওয়ার হন। এক্ষেত্রে আদর্শেও বিষয়টি মুখে মুখে বলা হলেও ছোট দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মূল লক্ষ্য থাকে মন্ত্রী হওয়া, ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করা, ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া, সরকারে থাকার সুযোগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। জানা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট এ্যালায়েন্স (বিএনএ) নামে বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে থাকা একটি জোট ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছে। জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ একাধিক ইসলামী দলও নির্বাচনের আগে জোটগতভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এসব দল ও জোটের সত্যিকার চেহারা কী হবে তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে। জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ও গণতন্ত্রী পার্টির শীর্ষ নেতা নূরুর রহমান সেলিম বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে সামনে রেখে যার যার হিসাব মিলাতে শুরু করেছে। কেউ মনে করছে জোট গঠন ভাল। কেউ কেউ সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে। যেহেতু জোটের রাজনীতির প্রভাব এখন বেশি সে কারণে শক্তিশালী জোটগুলোকে বড় দুই জোট প্রাধান্য দিতে পারে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন জানান, দেশে একটি তৃতীয় বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার জন্য আমরা সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জোট গঠন করেছি। দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে পথ চলছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও তারা জোটবদ্ধভাবে করবে। এক্ষেত্রে সমমনা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে এই জোটের আকার বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সিপিবি এবং বাসদ তো একসঙ্গে পথ চলছেই। এর বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বাদে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বামপন্থী শক্তির সমন্বয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আরও আটটি বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা নামে একটি জোট দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। জানতে চাইলে এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে যদি নির্বাচনের একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই আমরা মোর্চাগতভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে থাকা দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ধারার সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়টিও মাথায় রেখে পথ চলছি।
×