ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ ভারতের আট, নাকি মালদ্বীপের দুই?

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 আজ ভারতের আট, নাকি মালদ্বীপের  দুই?

রুমেল খান ॥ ভারত এবং মালদ্বীপ। সাফ অঞ্চলে ভারত যেমন সবচেয়ে বড় দেশ, তেমনি সবচেয়ে ছোট দেশ মালদ্বীপ। সাফ অঞ্চলে ভারত সবচেয়ে জনবহুল দেশ। আর মালদ্বীপের জনসংখ্যা অর্ধকোটিও নয়। দুটি দলই ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ সুুজুকি কাপের (সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ) পরিসংখ্যানের বিচারে সবচেয়ে সফল দল। দুটি দলই এখন ফাইনালে। এই দু’দলের এক দল হেরে গিয়ে কান্নায় ভাসাবে বুক। আরেক দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে হাতে তুলে নেবে সুদৃশ্য ট্রফিটা। কারা হবে সেই দল? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত মহারণে (সন্ধ্যা ৭টায় শুরু) চোখ রাখতে হবে ফুটবলপ্রেমীদের। একদিকে রেকর্ড ১১ বারের ফাইনালিস্ট এবং ৯৬ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ভারত। আরেকদিকে পাঁচবারের ফাইনালিস্ট এবং ১৫০ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী মালদ্বীপ। ভারত এ নিয়ে ফাইনালে উঠলো টানা সপ্তমবারের মতো। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সর্বোচ্চ সাতবার। গত আসরেরও চ্যাম্পিয়ন তারা। আর মালদ্বীপ ফাইনালে উঠলো নয় বছর পর। আর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একবার। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দেশ দুটি। এর আগে তারা ফাইনালে মুখোমুখি হয় ১৯৯৭, ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে। প্রথম ও তৃতীয় ফাইনালে শিরোপা জিতেছিল ভারত (৫-১ এবং টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে)। দ্বিতীয় ফাইনালে মালদ্বীপ জিতেছিল ১-০ গোলে। ৯ বছর আগে যে এই ভারতের কাছেই শিরোপা খোয়াতে হয়েছিল মালদ্বীপকে। এবারের ফাইনালে জিততে পারলে এই আসরের হারেরও একটা শোধ নেয়া হবে মালদ্বীপের। তাছাড়া ঢাকার এই মাঠেই ২০০৮ সালে শিরোপা জিতেছিল তারা। এবারও কি সেই পয়মন্ত ভেন্যুতে ভাগ্য সহায় হবে তাদের? এবারের সাফ ফুটবলে ভারত সেমিতে ৩-১ গোলে হারায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে। অপর সেমিতে মালদ্বীপ ৩-০ গোলে হারায় নেপালকে। মজার ব্যাপারÑ এই দু’দলই একই গ্রুপের (‘বি’) দল। ভারতের কৃতিত্ব হচ্ছেÑ এ আসরে তারা পাঠিয়েছে অনুর্ধ-২৩ বা যুব দল। ভাগ্য নিয়তি এমন একটা ব্যাপার যা কাউকে হাসায়, কাউকে আবার কাঁদায়। সাফ সুজুকি কাপে মালদ্বীপ এমনই এক দল যারা পেয়েছে ভাগ্যের পরশ। তারা নিজেদের গ্রুপে (তিন দলের গ্রুপ) কোন ম্যাচ না জিতে এবং কোন গোল না করেও ঠিকই নাম লেখায় শেষ চারে। কিভাবে? গ্রুপপর্বে তারা গোলশূন্য ড্র করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। পরের ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় ০-২ গোলে। এদিকে শ্রীলঙ্কাও ০-২ গোলে হেরে যায় ভারতের কাছে। ফলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের (মালদ্বীপের) গোল, গোল তফাত, পয়েন্ট, হেড টু হেড ... সবকিছুই সমান হয়ে যায়। তখন টুর্নামেন্টের ‘হাস্যকর’ বাইলজ অনুযায়ী তারা টসে জিতে সেমিতে খেলা নিশ্চিত করে। সেই টস-ভাগ্যে জয়ী দল মালদ্বীপই কি না বিপুল বিক্রমে এখন স্বপ্নের ফাইনালে। মালদ্বীপের কোচ ম্যাচটাকে প্রতিশোধের ম্যাচ হিসেবে না দেখলেও ভারতকে হারিয়ে দিতে আত্মবিশ্বাসী তার দল। অন্যদিকে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতও চায় মালদ্বীপকে হারিয়ে দিয়ে শিরোপা ধরে রাখতে। ভারতের কোচ স্টিফেন ফিলিপ কন্সটেন্টাইন বলেন, ‘ফাইনালের জন্য দল প্রস্তুত আছে। দলের প্রস্তুতি ভাল। আমি আশা করব আগামীকাল আমরা ম্যাচটা জিতব।’ অনুর্ধ-২৩ দল নিয়ে সাফে অংশগ্রহণের কারণটা কি অন্য দলগুলোকে দুর্বল মনে করা? ভারতের কোচের উত্তর, ‘২৩ দল নিয়ে আসার কারণ অন্যদের দুর্বল মনে করা না। মূলত এ ধরনের বড় টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পায় না বর্তমান দলটি। ফাইনালে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ এই সাফের মঞ্চ। যদি এখানে সিনিয়র দল নিয়ে আসতাম তাহলে জুনিয়ররা এই সুযোগটা পেতো না। মালদ্বীপকে আমরা খাটো করে দেখছি না। তারা নেপালের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছে। নেপাল অনেক ভাল টিম তাদের হারিয়ে তারা ফাইনাল। ফাইনালে ওঠা আমাদের প্রাপ্য ছিল। এ পর্যন্ত আমাদের যা হয়েছে সবকিছু ঠিক মতোই হয়েছে। গ্রুপপর্বে আমরা জিতেছি। কিন্তু ফাইনাল সম্পূর্ণ ভিন্ন ম্যাচ। ছেলেরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে ফাইনালে জিতবে আশা করছি।’ যোগ করেন ভারতের কোচ। ভারতের অধিনায়ক সুবাশীষ বোস বলেন, ‘কোচকে ধন্যবাদ আমাকে পুরো দলের দায়িত্ব দেয়ায়। ফাইনালে খেলতে পারব সেটা জানতাম না। দু’বছর আগে ট্রফি জিতেছিলাম। সেটা ধরে রাখতে চাই। বাইরের দেশে এসেও গ্যালারিতে আমাদের এত দর্শক দেখে খুবই ভাল লেগেছে। আশাকরি ফাইনালে আরও বেশি দর্শক আমাদের সমর্থন জানাতে আসবেন।’ মালদ্বীপের কোচ পিটার সের্গেট বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি ছিলাম না। অতীতে কি হয়েছে সেটি নিয়ে ভাবছি না। আমি ভবিষ্যতের দিকেই তাকাচ্ছি। ৯ বছর পর আমরা আবার এখানে (ফাইনালে) সে জন্য দল নিয়ে আমি গর্বিত। ভারতকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নেব এটাই আমার প্রত্যাশা।’ এখন দেখার বিষয়- আজকের ফাইনালে কি হয়, ভারতের আট, নাকি মালদ্বীপের দুই।
×