ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  আজ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা  লড়াই

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই দিয়ে আজ এশিয়া কাপের মিশন শুরু করছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্ট কি ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ‘আবেগ’কে নাড়া দেবে? অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে ‘অভিষেক’ হতে যাচ্ছে মাশরাফির। আর এবারই হয়তো ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে শেষবারের মতো দেখা যাবে মাশরাফিকে। তাতে ‘আবেগ’ তো জড়িত থাকারই কথা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লড়াই শুরু হবে। এমন টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচে আবার ওপেনার তামিম ইকবালের খেলা শতভাগ নিশ্চিত নয়। আঙ্গুলের চোটে পড়া তামিম যদি শেষ পর্যন্ত না খেলতে পারেন তাহলে দলও তো শ্রীলঙ্কার সামনে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাতে মাশরাফির ‘আবেগে’র টুর্নামেন্টের শুরুটা না আবার হোঁচট দিয়েই হয়। যদিও আশা থাকছে। বাংলাদেশ দল যেমন ইনজুরিপ্রবণ। তেমনি শ্রীলঙ্কা দলও একই অবস্থায় আছে। লঙ্কানরাই বরং খাদের কিনারায় পড়ে আছে। চান্দিমাল ইনজুরির জন্য নেই। গুনাথিলাকাও শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়েছেন। আর আকিলা ধনঞ্জয়াও সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় দেশে থাকায় নিশ্চিত বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে পারবেন না। তিন নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার শ্রীলঙ্কার নেই। সেইদিক থেকে সাকিব আল হাসানের আঙ্গুলে চোট থাকলেও খেলবেন। তামিম এখন খেলতে পারলেই হয়ে গেল। তখন শ্রীলঙ্কার দুর্বলতায় ভালভাবেই আঘাত করা যাবে। জয় দিয়েও তখন এশিয়া কাপের মিশন শুরু করা যাবে। দিনে গরম। সন্ধ্যা হতেই শিশিরের ছোঁয়া মিলছে দুবাইয়ে। এমন অবস্থায় একাদশের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নেমে বাংলাদেশ জয় তুলে নিতে পারলেই হলো। ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপ ঘুরে আসতে আবার ২০২২ সাল লাগবে। ততদিনে মাশরাফি কী আর ওয়ানডেতে খেলবেন? তিনি তো ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরই অবসর নিতে পারেন। মাশরাফির জন্য হলেও কী আজ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারবে? এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা খুবই শক্তিশালী দল। বরাবরই ভাল খেলে। এশিয়া কাপে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীলঙ্কা। সর্বশেষ ২০১৪ সালে যে ওয়ানডে ফরমেটে এশিয়া কাপ হয়, তখন শ্রীলঙ্কাই শিরোপা জিতে। ১২ বারের ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি ১০ বারই আবার ফাইনালে খেলে শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপে দল যেমনই হোক, বরাবরই হুঙ্কার দেয় শ্রীলঙ্কা। সেই হুঙ্কার বাংলাদেশের জন্যও থাকছে! এবার গ্রুপপর্ব পেরিয়ে সুপারফোরে খেলে ফাইনাল খেলতে হবে। দুই গ্রুপ থাকছে শুরুতেই। গ্রুপপর্বে সেরা দুই দলের একটি হওয়ার পর সুপারফোরে খেলা যাবে। সুপারফোরে থাকবে চারদল। একে অপরের সঙ্গে লড়াই করবে। সুপারফোরে সেরা দুই দলের একটি হলেই ফাইনালে খেলার সুযোগ মিলবে। আজ শুরু হয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনাল দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ হবে। গ্রুপপর্ব পেরিয়ে ‘সুপারফোরে’ খেলতে হলে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের মধ্যে যে কোন এক দলকে টেক্কা দিতে হবে। না হলে যে ‘সুপারফোরে’ খেলা হবে না বাংলাদেশের। গ্রুপপর্বেই দম ফুরাবে বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস তো বলেই দিয়েছেন, তারা গ্রুপপর্ব, ‘সুপারফোর’ নিয়ে নয়; এবার চিন্তা করছেন শিরোপা ঘরে তোলার। জানিয়েছেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সমন্বয়ে এবার গড়া হয়েছে দল। সেরা দলটাই আমাদের। যে কোন দলকে হারানোর মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।’ বাংলাদেশের কাছে অবশ্য প্রথম ম্যাচটিই মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ম্যাচটির ওপরেই যে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকখানি বোঝা যাবে। যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে পারে বাংলাদেশ, তাহলে টুর্নামেন্টের মিশনটা সুন্দরভাবে শুরু করতে পারবে। তখন আত্মবিশ্বাসও অনেক বেশি থাকবে। আর যদি উল্টো ফল হয় তাহলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০ সেপ্টেম্বর খেলতে নামার আগেও মানসিকভাবে দুর্বল থাকবে বাংলাদেশ দল। তখন বিপদ ধরা দিতে পারে। আত্মবিশ্বাসেও যে চিড় ধরা পড়বে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাই প্রথম ম্যাচটিকেই মহাগুরুত্ব দিচ্ছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আসন্ন ১৫ তারিখটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগে যে টুর্নামেন্ট খেলেছি সেগুলোও কঠিন ছিল। এবারও অবশ্যই কঠিন থাকবে, পরিস্থিতি অবশ্যই কঠিন হবে। আর সেখানে (আরব আমিরাতে) আমরা দল হিসেবে খেলিনি। এটাও একটা পয়েন্ট। অনেক জায়গায় আমরা সফল হয়েছি যেখানে আমাদের সামর্থ্যে অনেক প্রশ্ন ছিল। এমন অনেক ভাল খারাপের মধ্য দিয়েও আমরা সফল হয়েছি। এগুলো আসলে আমার কাছে খুব বড় ইস্যু মনে হয় না। ইস্যু হচ্ছে আমরা শুরুটা কেমন করছি, আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কেমন খেলছি।’ দেখতে দেখতে ২৩ বছর আগে ১৯৯৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে সর্বশেষ খেলেছে বাংলাদেশ। এরপর আর জাতীয় দল কখনই খেলেনি। দলের ক্রিকেটাররা এরই মধ্যে দুবাই পৌঁছে অনুশীলনও করছেন। নিজেদের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন। সঙ্গে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভাল খেলার আত্মবিশ্বাস। আর আছে ২০১২ ও ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে ফাইনালে খেলার প্রেরণা। সেই প্রেরণা আর সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে এখন আজকের ম্যাচটি জেতা গেলেই হলো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজকের লড়াইটাতে জিতলেই হলো।
×