ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাইরের কোন চাপের কাছে সরকার ও জনগণ নতি স্বীকার করবে না

লবিস্ট নিয়োগ করে কোন লাভ হবে না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 লবিস্ট নিয়োগ করে কোন লাভ হবে না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওপর বিএনপি চাপ প্রয়োগ করতে চাচ্ছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রতিষ্ঠানকে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না। বাইরের কোন চাপের কাছে সরকার ও জনগণ নতি স্বীকার করবে না। বাংলাদেশ কি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ? এটা কি পাকিস্তান, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেন হয়ে গেছে যে, লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে? শুক্রবার সকালে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ (একেএমএমসি) দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। কলেজের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ধানম-িতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের সামগ্রিক বিষয় অবহিত করতে বিএনপি ওয়াশিংটনে একটি ‘লবিস্ট ফার্ম’ ভাড়া করেছে বলে বৃহস্পতিবার খবর প্রকাশ করেছে রাজনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘পলিটিকো’। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের চুক্তি অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিক’কে আগস্ট মাসে ২০ হাজার ডলার এবং বছরের বাকি মাসগুলোয় ৩৫ হাজার ডলার করে দিতে হবে। বিএনপি এত টাকা কোথা থেকে পেল? এত টাকা লন্ডন থেকে এসেছে। লন্ডন মানে আপনারা বুঝতেই পারছেন ওখানে কে থাকে। ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেয়া এই ছাত্তার কে?’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শেকড় দুর্বল নয়। আমাদের শেকড় বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের অনেক গভীরে। আমাদের গণভিত অনেক শক্তিশালী। চাইলেই আমাদের মাটি চাপা দেয়া যাবে না। দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তাই আমাদের চাপ দিয়ে কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের জনগণ এসব চাপ মানবে না।’ তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব গেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু আমার জানা মতে জাতিসংঘ মহাসচিব এখন ঘানায় অবস্থান করছেন। জানি না তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন কিনা! যদি নাই পারেন, তাহলে এত টাকা খরচ করে লবিং করে জাতিসংঘে গিয়ে লাভটা হলো কি? আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তারা হয়ত জাতিসংঘের তৃতীয় কি চতুর্থ শ্রেণীর কোন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে মন্তব্য না করাই ভাল। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন অভিযোগের দল ও নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশীদের কাছে নালিশ করছে। জনগণের ওপর তাদের কোন আস্থা নেই। দেশেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের সমস্যা দেশেই শেষ হবে। দেশের বাইরে যাওয়ার কি কারণ? বিএনপির কাছে তিন প্রশ্ন ॥ এ সময় বিএনপির কাছে তিনটি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনীদের বিচার থেকে রেহাই দিয়ে জারি করা অধ্যাদেশ বিএনপি সংবিধানে যোগ করেছিল। এটা কেন করা হয়েছে? সেই ব্যাখ্যা দবি করেন কাদের। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পায়ে ঠেলেছিল। যুক্তি ছিল, এতে দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে টাকা দিয়ে এই ক্যাবলে যুক্ত হয়। সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত না হয়ে বিএনপি কেন দেশকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের এক সপ্তাহ আগে বিএনপি তার গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা বাদ দেয়- যেখানে বলা ছিল চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, দন্ডপ্রাপ্ত ও উন্মাদরা বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। বেগম জিয়ার দ-ের সাত দিন আগে তাদের গঠনতন্ত্র থেকে সাত ধারা বাতিল করা হলো কেন? হাসপাতাল প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, হাসপাতালে রাজনীতি করবেন না। হাসপাতালের বাইরে রাজনীতি করতে হবে। শুধু ভাল রেজাল্ট করলে হবে না, রোগীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। অনেক ডাক্তার গ্রামে থাকতে চান না, এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। সমাজ থেকে অন্ধকার দূর করতে আলোর চর্চা করারও আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিং’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্ধকারকে অন্ধকার দিয়ে দূর করা যায় না। অন্ধকারকে দূর করতে হয় আলো দিয়ে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি চোরায় খাই না। সততাই বড় সম্পদ। কিছু লোক কঠোর পরিশ্রম করে টাকার জন্য। আমি কঠোর পরিশ্রম করি কাজকে ভালবেসে। কেউ হতাশ হবেন না। জীবনই একটা চ্যালেঞ্জ। যে নদীতে ঢেউ নেই, সেটা নদী না। এখন ছাত্ররাই যানজট দেখলে বাস উল্টো দিকে চালাতে বলছে ॥ ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবং সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করলেও এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস যানজটে পড়লেই চালককে উল্টোপথে চালাতে চাপ দেয়া হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের এই প্রবণতা ত্যাগের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিআরটিসি বাস দিয়েছি, রাস্তায় যানজট দেখলে ছাত্রছাত্রীরা ড্রাইভারকে বলে উল্টো পথে যেতে। আমি অনুরোধ করব, এগুলো করবেন না। এই প্রবণতা থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের হয়ে আসতে হবে।’ সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘সড়কে যত্রতত্র পারাপারে শিক্ষার্থীদের আরও সতর্ক হতে হবে। অনেক ছাত্রছাত্রী হেডফোন লাগিয়ে রাস্তার এপার থেকে ওপার যাচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে যাবে না। মা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পার হবে, ফুটওভার ব্রিজে উঠবে না।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ ফোন করলে যদি উনি ধরতে না পারেন মাস্ট কলব্যাক করেন। তিনি এমন একজন মানুষ যে রাত দুইটার দিকে ফোন দিলেও ফোন ধরেন। আমার সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররাও যখন ফোন দেই ধরেন। এর আগে মন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেই বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এবং ফিতা কেটে কর্মসূচী শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কলেজ পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন খান, অধ্যাপক সেলিম ফরহাদ সিদ্দিকা, অধ্যাপক ডাঃ এহতেশামুল হক, অধ্যাপক ডাঃ মোঃ এখলাসুর রহমান ও মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র কাজী মিলন বক্তব্য রাখেন।
×