ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আত্মহত্যা প্রতিরোধে গ্যালারি চিত্রকে আর্ট ক্যাম্প

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  আত্মহত্যা প্রতিরোধে গ্যালারি চিত্রকে আর্ট ক্যাম্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অকালে প্রাণপ্রিয় দুই সন্তানকে হারানো এক দুখিনী জননী জয়শ্রী জামান। ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঘটে সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। একই দিনে আত্মহত্যা করে জয়শ্রীর দুই ছেলে-মেয়ে। এরপর বুক চাপা বেদনাকে সঙ্গী করে আত্মহত্যা প্রতিরোধে জয়শ্রী জামান প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন। সেই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার রং-তুলিতে ক্যানভাস রাঙাল চিত্রকররা। আত্মহত্যা প্রতিরোধে একাত্ম হলেন দেশের নবীন-প্রবীণ ও প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীরা। শুক্রবার ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী কর্মশালা। বর্ণে বর্ণে বহুমাত্রিক বিষয়ে চিত্রপট সাজানোর আয়োজনটিতে অংশ নেন ২৬ জন শিল্পী। শরতের সকালে কর্মশালার শুরুর আগে ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। ক্যানভাসে রংমাখা তুলির স্পর্শে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও চিত্রশিল্পী বীরেন সোম। স্বাগত বক্তব্য দেন ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশনের সভাপতি জয়শ্রী জামান। উদ্বোধনী বক্তব্যে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্র কিংবা সমাজের যে কোন সঙ্কটেই সব সময়েই এগিয়েছে শিল্পীরা। বন্যা হোক আর দুর্ভিক্ষ হোক, চিত্রশিল্পীরা সবার আগে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যান। এর ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে দেশের চিত্রকলা ভুবন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে একাত্ম হয়েছেন এবার শিল্পীরা। নানা পারিপার্শ্বিক চাপে মানসিক হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। তাই যে কোন পরিস্থিতিতেই প্রতিটি পরিবারের উচিত তাদের সন্তানদের পাশে দাঁড়ানো। সন্তানদের সাহায্য করার পাশাপাশি মেলে ধরতে হবে নিজের দিগন্তকে। সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, শিল্পীরা বড় ধরনের একটি কাজ করতে এক হয়েছেন। মানুষ ও মানুষের মধ্যে মানসিকতার উন্নয়নের লক্ষ্যে শিল্পীরা ছবি আঁকবেন। দিনভর আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেনÑ রফিকুন নবী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, বীরেন সোম, শিশির ভট্টাচার্য, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নিসার হোসেন, কামালুদ্দিন, আব্দুল মান্নান, জাহিদ মোস্তফা, জহির উদ্দিন, বিপাশা হায়াত, কনকচাঁপা চাকমা, নাসরিন বেগম, ফজলুর রহমান ভুটান, সনজিব দাস অপু, শামছুদ্দোহা, তরুণ ঘোষ, অনুকূল চন্দ্র মজমুদার, আবুল বারক্ আলভী, আহমেদ নাজির, মনিরুল ইসলাম, সুমন ওয়াহিদ, আলপ্তগীন তুষার, অরীন, শিশ্রা বিশ্বাস ও মনিরুজ্জামান। আর্ট ক্যাম্পে আঁকা ছবিগুলো নিয়ে আজ শনিবার থেকে শুরু হবে বিশেষ প্রদর্শনী। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আহমদ রফিকের নব্বইতম জন্মদিন উদ্্যাপন ॥ শরীরে বয়স ভর করলেও মননে তারুণ্যে ভরপুর এক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব আহমদ রফিক। গত ১২ সেপ্টেম্বর ছিল তিন কালের সাক্ষী এই ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক ও লেখকের নব্বইতম জন্মদিন। এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমিতে আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ। নৃত্য-গীত, আলোচনা, স্মৃতিচারণ ও সম্মাননাগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানানো হয় আহমদ রফিককে। ফুলে-ফুলে সাজানো হয়েছিল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। ‘আকাশ ভরা সূর্যতারা’ গানের সুরে নেচে-গেয়ে শিল্পীদল ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আহমদ রফিককে। পরে আহমদ রফিকের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। আয়োজনের মধ্যমণি আহমদ রফিক বসেছিলেন মঞ্চের মাঝখানে। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো যেন তার পরিপূরক। তার পাশে বসে আলো ছড়ান জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ভাষাসংগ্রামী ও প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এ ছাড়াও মঞ্চের সামনের সারিতে বসেছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গবেষক ও লেখক সৈয়দ আকরম হোসেন প্রমুখ। বিভিন্নজনের ভালবাসার জবাবে আহমদ রফিক বলেন, সারাজীবন মানুষের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি, মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। বিনিময়ে কিছুই প্রত্যাশা করিনি। তারপরও মানুষের যে ভালবাসা পেয়েছি, আমাকে তা আপ্লুত করেছে। যতদিন বাঁচব, মানুষের জন্যই কাজ করে যাব।’ মানুষের ঐক্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষে মানুষে ঐক্য বড় প্রয়োজন। হাতে হাত ধরে দেশের জন্য সবাই যদি কাজ করতে পারে, তবে দেশের যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনই মানুষের মধ্যে বাড়বে মমত্ববোধ ও ভালবাসা।’ আলোচনাপর্বের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। পরে মানপত্র পাঠ করেন হাসান আরিফ। ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক নবতিতম জন্মদিন উদযাপন পরিষদ লিখিত মানপত্রে বলা হয়, ‘আহমদ রফিক আশাদীপ্ত তারুণ্যের উজ্জ্বল দীপশিখা। তরুণ বয়সে যে প্রগতিচেতনার শাণিত সৃজনমুখর সংগ্রামী জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, নব্বই ছোঁয়া বয়সেও তিনি অক্লান্ত।’ উত্তরীয় পরিয়ে দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। পরে শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যরে আঁকা প্রতিকৃতি তুলে দেয়া হয়। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কথাপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী জসিম উদ্দিন। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সম্মননাগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন। পরে আলোচনা ও স্মৃতিচারণায় অংশ নেন অতিথিরা। তার আগে অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনান শিল্পী রোকাইয়া হাসিনা। গণসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাহমুদ সেলিম। পরে সমাজের নানা স্তরের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান কীর্তিমান এ বাঙালিকে। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, সমাজ ও মানুষের প্রতি আহমদ রফিকের দায়বোধ প্রশ্নাতীত। প্রগতিশীল চিন্তা ও মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি যেমন লেখালেখি করছেন, তেমনই অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলন ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর নানা গবেষণাকর্ম আমাদের নিত্য অনুপ্রেরণার উৎস। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শিল্পবোধ ও অঙ্গীকারবদ্ধতা আহমদ রফিকের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে। আমি যখন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখেছি, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছি, তখন আমাকে প্রাণিত করেছেন, পথ প্রদর্শন করেছেন তিনি।’ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, রবীন্দ্রনাথকে তিনি দক্ষতার সঙ্গে, শিল্পবোধের সঙ্গে যেভাবে তুলে ধরেছেন, আর কোন বাঙালি লেখক সেভাবে তুলে ধরতে পারেননি। অনুষ্ঠানের সভাপতি এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আহমদ রফিকের বহুমাত্রিক কাজ রয়েছে। আগুন চাবুক নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। আগুন চাবুক নামের নাটকটি মঞ্চে এনেছে উৎস নাট্যদল। রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মান্নান হীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। প্রযোজনাটির উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রদীপ প্রজ্বালন করেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ ও রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও মান্নান হীরা। দেশ অপেরার রজতজয়ন্তী উদ্্যাপন ॥ পথচলার ২৫ বছর পূর্ণ করল যাত্রা প্রতিষ্ঠান দেশ অপেরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় আনন্দ আয়োজনে উদ্্যাপিত হলো প্রতিষ্ঠানটির রজতজয়ন্তী। পদক প্রদান, আলোচনা ও যাত্রা প্রদর্শনীতে সাজানো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় হয় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। দেশ অপেরার রজতজয়ন্তীর পদক প্রদান করা হয় একুশে পদকজয়ী যাত্রাভিনেত্রী জ্যোৎস্না বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক সংগঠক লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাশকে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। প্রধান অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক অজয় দাশগুপ্ত এবং বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও নাট্য নির্মাতা অরুণা বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। আলোচনা শেষে ছিল যাত্রা প্রদর্শনী। ‘আমি অমলেন্দু বিশ্বাস’ শীর্ষক এই পরিবেশনায় একক অভিনয় করেন মিলন কান্তি দে। এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ॥ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় চিত্রশালায় চলছে মাসব্যাপী দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শিশুদের জন্য বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় এ আয়োজনে ছবি এঁকেছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মাল্টিমিডিয়া পাপেট পরিবেশিত হয় পাপেট শো, উলফাৎ কবিরের জাদু প্রদর্শনী, বিশেষ শিশুদল কারিশমা-এর আবৃত্তি পরিবেশনা ও একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক দলের প্রদর্শনী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে এস ও এস শিশুপল্লী, স্কলার্স স্পেশাল স্কুল, অটিজম কেয়ার এ্যান্ড একটিভিটিজের শিল্পীরা। মাসব্যাপী এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর আওতায় প্রতিদিন শিশু কর্ণারে প্রদর্শনীতে আগত শিশুদের জন্য রয়েছে চিত্রাঙ্কনের ব্যবস্থা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত।
×