ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৭০ মেও জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

   বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কয়লা সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যাওয়া বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রটি শুক্রবার বিকেলে ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে দিচ্ছিল। কয়লার সঙ্কট থাকায় ফুল লোডে কেন্দ্রটি চালানো আপাতত সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন খনির কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াটের পুরো কেন্দ্র চালানো সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আপাতত কয়লা আমদানিকে জ¦ালানি সংস্থানের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম শুক্রবার বিকেলে বলেন, ২৭৫ মেগাওয়াটের ইউনিটটি চালু করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রটি ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিচ্ছিল। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ১১ হাজার টন কয়লার মজুদ নিয়ে ফের চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াটের ইউনিট চালতে প্রতিদিন দুই হাজার ৮০০ মেট্রিকটন কয়লার দরকার। কিন্তু বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০০ টন কয়লা প্রতিদিন সরবরাহ করতে পারবে। গত ৮ সেপ্টম্বর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ফের উত্তোলন শুরু হয়। এরপরই কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন গড়ে খনি থেকে দুই হাজার ৪০০ টন কয়লা তোলা হচ্ছে। সর্বোচ্চ দৈনিক তিন হাজার টনের বেশি কয়লা উত্তোলন সম্ভব নয়। এরমধ্যে আবার বছরে শিফট পরিবর্তনের জন্য তিন মাস খনি বন্ধ থাকে। খনি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক শুক্রবার বিকেলে জানান, আমরা এখন দৈনিক দুই হাজার ৪০০ টন কয়লা উত্তোলন করছি। তিন হাজার টনের বেশি কয়লা তোলা সম্ভব না। বিষয়টি বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিট আমাদের অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করলেও তৃতীয় ইউনিটে কয়লা দেয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা দেইনি। আজকেও পিডিবির সদস্য উৎপাদনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে জানিয়ে বলেন, পিডিবি জানে আমাদের পক্ষে দৈনিক কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার টন কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। গত ২২ জুলাই থেকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রটি কয়লার অভাবে বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ঈদের সময় উত্তরাঞ্চলের ভোল্টেজ উন্নতির জন্য ৯ দিন একটি ইউনিট সীমিত ক্ষমতায় চালিয়ে আবার কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ৪৪ দিন একেবারেই বিদ্যুত উৎপাদন করেনি কেন্দ্রটি। উত্তরাঞ্চলের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এই কেন্দ্রটি বন্ধ হলে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুত বিভ্রাট দেখা দেয়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ করা হলেও গ্রাহক মানস্মত বিদ্যুত পায় না। অর্থাৎ লোল্টেজ লেভেল ঠিক থাকে না। মোট ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটের স্টিম চালু করা হয় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ২৭ মিনিটে ওই ইউনিট থেকে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হয়। চালু না হওয়া দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট ও ২৫০ মেগাওয়াট। অভিযোগ রয়েছে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটে কয়লা সরবরাহ পাওয়া যাবে না জেনেও পিডিবি তৃতীয় ইউনিটটি নির্মাণ করে। এ নিয়ে পিডিবি ওই সময় কয়লা সরবরাহের নিশ্চয়তা চাইলেও পেট্রোবাংলার তরফ থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। বড়পুুকুরিয়া কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের পর বিষয়গুলো আলোচনায় আসে। এই সমস্যা সমাধানে বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে কয়লা আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে দেশে এখনও কয়লা আমদানির অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। উপকূল থেকে কয়লা বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রে পৌঁছানোবে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আংশিক খনির কয়লা দিয়ে আর আংশিক আমদানি করে চালানোটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কি না তাও চিন্তা করতে হবে। কয়লা পরিবহনে উপকূল পর্যন্ত জাহাজ এলেও সেই কয়লা বড়পুকুরিয়া পর্যন্ত নেয়ার জন্য রেলওয়ে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু দেশে কয়লা পরিবহনের জন্য রেলওওয়ের কোন ওয়াগান নেই। আবার একেবারে নৌপথেও দিনাজপুর পর্যন্ত কয়লা পরিবহন সম্ভব না। যদিও সরকার কয়লা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুত সচিব আহমদ কায়কাউস ইতোমধ্যে জানিয়েছেন কয়লা আমদানির জন্য একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে কয়লা বিক্রেতাদের আগ্রহপত্র জমা নিয়েছে পিডিবি। পিডিবি বলছে কয়লা পরিবহনের বিষয়টি বিক্রতার ওপর ছেড়ে দিতে চায় তারা। এক্ষেত্রে কয়লা বিক্রেতাকে রুট নির্ধারণ করে কয়লা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হবে।
×