ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনের আশা ছাড়েনি বিএনপি

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনের আশা ছাড়েনি বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছে বিএনপি। সাক্ষাতের অনুমতি পেলে দলের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাত করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করবেন। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। সূত্র জানায়, বর্তমান সংবিধান অনুসারে কিভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় এমন কিছু প্রস্তাব বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরবে। প্রস্তাবের খসড়া তৈরির জন্য দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও অভিজ্ঞ আইনজীবী বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন। এ বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ বিভিন্ন দলের আরও কয়েকজন নেতারও পরামর্শ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। এবারও তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে কিছু প্রস্তাব দেবেন। উল্লেখ্য, বিএনপির নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি নতুন নয়। বছরখানেক আগেই তারা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখার খসড়া প্রস্তুত করে। এ খসড়া প্রণয়নে বিএনপিকে সহায়তা করে বিএনপির থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তারা এ বিষয়ে আর তেমন কথা বলেননি। এখন নির্বাচন সামনে রেখে সেই দাবি আবারও জোরালো করছে দলটি। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হস্তক্ষেপ চাইবে তারা। আর এ জন্যই বিএনপি নেতারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে তিন মাস মেয়াদে নির্বাচনকালীন একটি গ্রহণযোগ্য সহায়ক সরকার চায় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধান অনুসারেও যদি এমন একটি সহায়ক সরকার করা যায় তাতে আপত্তি নেই তাদের। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সংলাপের মাধ্যমে এমন একটি সরকার করার পক্ষে তারা, যেটি একমাত্র রাষ্ট্রপতিই করতে পারেন। জানা যায়, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগ নেয়াসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চাইতে যত শীঘ্রই সম্ভব তার সঙ্গে দেখা করতে চান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। শীঘ্রই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে বঙ্গভবনে চিঠি দেবে বিএনপি। এ মাসেই তারা দেখা করতে চান। সূত্রমতে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়ে বেশ ক’টি প্রস্তাবনা দেবে বিএনপি। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব থাকবে রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। এ সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংস্থাপনমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব থাকবে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন এমন সহায়ক সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করবেন। বর্তমান সংবিধান অনুসারে তখন সংসদ বহাল থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রীও দায়িত্বে থাকবেন। তবে নির্বাচনকালীন তিন মাস প্রধানমন্ত্রীর ছুটিতে থাকার প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হবে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা নয়, সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবের পরেও হাল ছাড়বে না বিএনপি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোগ নেবেন বলে আশা দলটির। তাই তার সামনে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে অনুরোধ জানালে রাষ্ট্রপতি স্ব-উদ্যোগেই সংলাপের আয়োজন করবেন বলে ধারণা করছেন নেতারা। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত পেলে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আরও যেসব প্রস্তাব রাখবে সেগুলো হচ্ছে- কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি ও তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব মামলা স্থগিত রাখা, নতুন মামলা না দেয়া, পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ, ইভিএম ব্যবহার না করা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান করতে জাতীয় ঐকমত্য গঠন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কার, নাগরিকের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করাম, আয়ের বৈষম্য অবসানে আর্থিক নীতি গ্রহণ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। কিন্তু নির্বাচন বর্জন করে চরম বেকায়দায় পড়ে দলটি। এর পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের সহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বেশ ক’বার ক্ষমতায় থাকা এ রাজনৈতিক দলটি। সংবিধান অনুসারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচনে না গেলে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। তাই বিএনপিকে বাধ্য হয়েই এ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আর এ কারণেই দলটি চাচ্ছে নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকার হলে আর প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে হয়তো সে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর বিজয়ী হতে না পারলেও সম্মানজনক আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে। আর এ লক্ষ্য নিয়েই বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন একটি সরকারের পক্ষে জনমত তৈরি করতে দেশ-বিদেশে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছে। জানা যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাক্ষাতের অনুমতি পেলে বঙ্গভবনে গিয়ে দলের পক্ষে একটি লিখিত প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরবেন তারা। এ বিষয়টি ইতোমধ্যেই কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক। তাই দেশের সঙ্কট নিরসনে বিএনপি রাষ্ট্রপতির সহযোগিতা চাইতেই পারে। এর আগেও আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এবারও রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত পেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশের স্বার্থে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরব।
×