ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বাড়ছে

দেশে জন্মহার ও বাল্যবিয়ে কমছে- সময়সীমার আগেই এসডিজি অর্জন

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  দেশে জন্মহার ও বাল্যবিয়ে কমছে- সময়সীমার আগেই এসডিজি অর্জন

সমুদ্র হক ॥ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে প্রায় ৭২ বছর হওয়ায় মৃত্যুর হার কমে প্রবীণ নাগরিক বা অভিজ্ঞ নাগরিকের সংখ্যা (৬০ বছরের উর্ধে বয়সী মানুষ) বেড়েছে। দেশে জন্মহার কমেছে, বাল্যবিয়ে কমেছে। তবে কোনটি এখনও আশাতীত পর্যায়ে পৌঁছেনি। আশা করা হয়েছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের সময়সীমার আগেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ (লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী) অর্জিত হবে। এদিকে বাংলাদেশের সিনিয়র সিটিজেন নিয়ে জাতিসংঘের জরিপে একটি সুখবর মিলেছে। তা হলো- দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের বড় একটি অংশ প্রান্ত বয়সেও নানা কাজের মাধ্যমে নিজেদের কর্মক্ষম রাখতে পেরেছেন। যা উন্নত দেশে বা প্রথম বিশ্বের দেশে সহজে দেখা যায় না। খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা, সর্বোপরি সবজি উৎপাদনে দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বাড়তি সবজি উৎপাদনের কারণে প্রতিটি ঘরে ভেজিটারিয়ান (সবজিভুক) মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই সবজি। সবজি কোলেস্টরেল মুক্ত। চিকিৎসকদের মতে, অতি মাত্রায় কোলেস্টরেলযুক্ত খাবার মৃত্যুহার বাড়ায়। মাছ-মাংসে আমিষ ও কোলেস্টরেলের মাত্রা বেশি। হালে ফাস্ট ফুডসহ এ ধরনের খাবারে চর্বির মাত্রা বেশি থাকায় কোলেস্টরেলের মাত্রাও বেশি। বর্তমানে দেশের মানুষ অনেকটা সচেতন হয়ে ওই ধরনের খাবার কমিয়ে দিয়েছে। দেশে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের হার কমে আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে মোট প্রজনন হারে (টোটাল ফার্টিলিটি রেট সংক্ষেপে টিএফআর) সাফল্য এসেছে। বর্তমানে এই হার ২ দশমিক ১। দেশে ১৯৭২ সালে টিএফআর ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ একজন মা গড়ে ৬ জনেরও বেশি সন্তান জন্ম দিতেন। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে টিএফআর নেমে দাঁড়ায় প্রায় অর্ধেকে যা ছিল ৩ দশমিক ১ । বর্তমানে শহর ও নগরের বিবাহিত নারী ২ জন সন্তান জন্মদান করেন। তবে গ্রামাঞ্চলে বিবাহিত নারীর সন্তান জন্মদানের হার এখনও দুইয়ের অধিক। বগুড়ার পশ্চিমাংশে বিবাহিত বেশিরভাগ নারীর সন্তান সংখ্যা ৩ থেকে ৪ জন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) সূত্র জানায়, গত বিশ বছরে প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে টিএফআর কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। বয়স ভিত্তিক হিসাব হলো : ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার কমেছে ১৬ শতাংশ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২২ শতাংশ। ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ৩২ শতাংশ। ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ৪৭ শতাংশ এবং ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে কমেছে ৬৩ শতাংশ। বগুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সমির হোসেন মিশু জানালেন, বগুড়ায় জন্মহার জাতীয় হারের চেয়ে কম। বগুড়া জেলায় প্রায় ৮৩ শতাংশ দম্পতি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। জন্ম নিয়ন্ত্রণে নতুন পদ্ধতি ইমপ্লান্ট ও জাডেলের সঙ্গে পূর্বের সকল পদ্ধতি বহাল আছে। যা নব দম্পতিরা ব্যবহার করতে পারে। গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ গুলশান আরা বলেন, বিবাহিত নারীদের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সন্তান ধারণ ঠিকমতো থাকে। এরপর সন্তান ধারণে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সে সন্তান ধারণে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে বালিকা বধূরাই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিশোরী বা বালিকাদের বিয়ে দেয়ার এক বছরের মধ্যে তারা গর্ভধারণ করে শিশুর জন্ম দেয়। এইসব মায়েরা দ্বিতীয় সন্তানও আগে নেয়। দেশে প্রতি বছর যে ১২ লাখ নারীর বিয়ে হয় তার মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার জনই বালিকা। শ্বশুর বাড়ির লোকজনই এই বালিকা বধূদের বিয়ের প্রথম বছরেই গর্ভধারণের চাপ দেয়। সরকারী ও বেসরকারীভাবে, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগের ফলে বাল্যবিয়ের হার কমেছে। বর্তমানে এই হার ৫১ শতাংশ। তারপরও দেশে প্রতি বছর যে বিয়ে হয় তার ১২ শতাংশ বালিকা বধূ। নতুন দম্পতিরা প্রতি বছর জন্ম দেয় প্রায় ৩০ লাখ শিশু। বর্তমানে দুইয়ের অধিক সন্তান নেয়ার প্রবণতা কমে এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভাবনায় এনে বছর বছর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয়টি আর আগের মতো নেই। তারপরও জন্ম নিয়ন্ত্রণের হার যে হারে কমে যাওয়ার কথা ছিল সেই হারে কমছে না। বাল্যবিয়ে ঠেকানোর উদ্যোগ বিচ্ছিন্নভাবে নেয়া হয়। সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে বাল্যবিয়ে হওয়ার আগেই খবর পৌঁছানোর সঙ্গেই তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। বিপরীত চিত্র : পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারী বালিকাদের বয়স বাড়িয়ে দিয়ে জন্ম সনদপত্র দেন। এই বিষয়ে একজন কর্মচারীর কথা, অভিভাবকরা যে জন্ম তারিখ লিখে দেন তার ওপর ভিত্তি করেই জন্ম সনদ দেয়া হয়।
×