ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয় কেন্দ্র নেই

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৮ চরের মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৮ চরের মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। কোথাও নদী। আবার কোথাও সাগর দ্বারা বেষ্টিত। সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নেই। নেই প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র অর্থাৎ সাইক্লোন শেল্টার। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মৌসুমে চরম সঙ্কটাপন্ন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ৮টি চরের কয়েক হাজার মানুষের জীবন। সাগরপারের রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই, এমন আটটি চরের অন্যতম দ্বীপ জনপদ হচ্ছে- ‘চরকাশেম’। সেখানে আট শতাধিক মানুষের বসবাস। যার পূর্ব-পশ্চিম আর উত্তর কোনে বুড়াগৌরাঙ্গ নদ ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। অর্থাৎ দ্বীপ জনপদটির চারদিকেই উত্তাল জলরাশি। দ্বীপটি উপজেলা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্বকোণে অবস্থিত। চরকাশেমের বাসিন্দা হাওয়া বেগম বলেন, ‘অবদা (বেড়িবাঁধ) না থাহায় চরে জোয়ার-বইন্যার সময় বেশি পানি উডলে (উঠলে) পোলা-মাইয়া (ছেলে-মেয়ে) লইয়া কান্নাকাটি করা ছাড়া কিছু করার নাই। আমাগো চরে সেন্টার (আশ্রয় কেন্দ্র) নাই। হেই (সেজন্য) লাইগ্যা (জন্য) কেহ গাছে ওডে। কেহ আল্লাহর ওপরে ভরসা কইরা পোলা-মাইয়া লইয়া ঘরের মধ্যেই থাহে।’ এ অবস্থা শুধু চরকাশেমেই নয়, উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের কলাগাছিয়া চর, চরকানকুনি, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশন, চরনজির, চরতোজাম্মেল, কাউখালী চর ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতায়ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি। তাই দুর্যোগকালীন এ আটটি চরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিচ্ছিন্ন ওই আটটি চরের মধ্যে কোথাও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধও নেই। নদী-সাগরে সামান্য জোয়ারেই চরে পানি উঠে যায়। দুর্যোগকালীন ঝড়-বন্যায় নিরাপদে থাকার জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রও নেই। তাই দ্বীপবাসীর জীবন থাকে মহাসঙ্কটে। এ কারণে দুর্যোগ মোকাবেলায় এখানকার মানুষ অপ্রস্তুত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের পাঁচ-ছয় মাস প্রকৃতির বিরূপ আচরণের সঙ্গে এক রকম যুদ্ধ করে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, অমাবশ্যা-পূর্ণিমার সময়ে নদী-সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে গেলেই আটটি চরের বেশিরভাগ চর প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় কারও সহায় সম্বল। দুর্যোগ মৌসুমে আকাশের কালো মেঘের গর্জন শুনলেই চরের বাসিন্দাদের মনের মধ্যে বয়ে যায় আতঙ্ক। আর ঝড়-বন্যা হলে নিয়তি নির্ভর ছাড়া তারা কোন উপায় খুঁজে পায় না। কাউখালী চরের বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, তিন দিকে নদী, একদিকে খাল। মাঝখানে আমরা বাস করি। পানি বাড়লে নিরাপদে যাওয়ার কোন উপায় নাই। আশ্রয় কেন্দ্রও নাই। তখন উঁচু জায়গায় গিয়া ছেলে সন্তান নিয়া থাকি। কিন্তু বড় ধরনের ঝড়-বন্যা হলে বাঁচার আর সম্ভাবনা নেই। এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ওইসব চরে সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র দিতে পারছি না। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়, তবে আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য দ্রুত প্রস্তাব পাঠাব। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগির বলেন, যেসব চরে স্কুল নেই, সেগুলোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তখন প্রজেক্ট (প্রকল্প) ছিল না। এখন এক হাজার স্কুলের প্রজেক্ট ছাড়ছে। ওই প্রজেক্টের মাধ্যমে এসব চরের স্কুল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, ঝড়-বন্যায় চরের মানুষের জীবন ঝুঁকিতে থাকে। অনেক জায়গায় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। আবার কোথাও বেড়িবাঁধ নেই। এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। মানুষের শখের অন্ত নেই। দূরপাল্লায় যাওয়ার জন্য কেউ কেনে মোটরসাইকেল, কেউ প্রাইভেটকার, জিপ কেউবা হেলিকপ্টার। কিন্তু রাজশাহীর তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের দেউতলা গ্রামের ৬৫ বছরের খাইরুল ইসলাম ও সরনজাই ইউনিয়নের সরনজাই গ্রামের ৪৫ বছরের মিনারুল ইসলাম ইনাদের শখ একটু আলাদা। আধুনিক যানবাহনের যুগে এখনও তারা সনাতন পদ্ধতিতে রাজকীয়ভাবে ঘুরে বেড়ানো ঘোড়া ব্যবহার করেন। খাইরুল ইসলাম ও মিনারুল ইসলাম উভয়ে ভাল বন্ধু। পেশায় কৃষক হলেও অন্তরে তারা ধারণ করে নবাবীয় খায়েশ। বীরদর্পে রাজপুত্রের মতো ঘোড়ার পিঠে রাস্তায় তাদের দেখা মেলে প্রায় সময়। খাইরুল জানায় ছোট বেলায় তার নানার ঘোড়া ছিল, সেই সুবাদে তিনিও ৪ বছর থেকে ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। মিনারুল জানায় হাটবাজার দোকানে সওদাপাতি কেনাকাটা সে ঘোড়ায় চড়ে করে থাকে। প্রায় দুই বন্ধু ঘোড়া নিয়ে একই জায়গায় মিলিত হয়ে আড্ডা দেয় এবং চা পান করতে করতে কাটে তাদের অনেক সময়। তাদের দেখা মেলে এলাকায় তানোর উপজেলার কাশেম বাজার এলাকায়।
×