ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

গরমের প্রশান্তি থ্রি-কোয়ার্টার

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গরমের প্রশান্তি থ্রি-কোয়ার্টার

ভেজা হাওয়া এবং তপ্ত রোদ নিয়ে প্রকৃতিতে বইছে শরতের খেলা। তবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরমের মাত্রা। পরিবর্তিত হচ্ছে জীবনযাত্রা। এ পরিবর্তনের বড় একটা অংশ হচ্ছে পোশাক। কারণ আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পোশাক না পরলে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ হয়, যা কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। দিন দিন আমাদের সমাজে ফ্যাশন সচেতন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে প্রত্যেকেই আবহাওয়া অনুকূল পোশাকের সন্ধান করে। ফ্যাশন হাউসগুলোও বসে নেই। প্রতিনিয়ত ক্রেতাসাধারণের কথা মাথায় রেখে ঋতুভিত্তিক পোশাক তারা বাজারে এনে থাকে। তরুণদের মধ্যে থ্রি-কোয়ার্টারের চাহিদা এখন আদিখ্যেতা নয়! বরং আপন মনেই মানুষ এই পোশাকটি পরতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নইলে অসম্ভব গরমে কেনই বা ক্রিকেট মাঠেও থ্রি-কোয়ার্টার পরে একজন ক্ষুদে ক্রিকেটার খেলা করবে! সব হিসাব-নিকাশ শেষে এটা অনুমেয় যে, থ্রি-কোয়র্টার মানেই গরম মোকাবেলা করা, একটু স্বস্তি পাওয়া। এবার দেখা যাক ফ্যাশন ডিজাইনারদের থ্রি-কোয়ার্টার নিয়ে ভাবনা কেমন। আসিফ ইকবাল, শেওড়াপাড়া মিরপুর এলাকায় তার একটি ফ্যাশন হাউস আছে। ছোট পরিসরের তার এই আয়োজন তাকে আগামী দিনের বড় আয়োজনের স্বপ্ন দেখায়। কারণ তিনি খেয়াল করেছেন, এই সময়ের তরুণরা সময়ের সঙ্গে নিজেকে ফ্যাশনেবল করতে চায়। তরুণদের চাহিদা পূরণই হলো একজন ডিজাইনারের স্বার্থকতা। গত দুই মাস আগে থেকে তার কাছে বহু ছেলে এসেছে, যারা নিত্যনতুন থ্রি-কোয়ার্টার কিনতে চান। অনেকের চাহিদা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করতে পেরেছেন আবার অনেকের চাহিদা পূরণ হয়নি। কথা হয় মার্চেন্ডাইজার আবু সায়েমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফ্যাশনের যে কত রকম পরিবর্তন হচ্ছে তার কোন ঠিক নেই। আজ একধরনের, তো কাল আরেক ধরনের। যদি থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের কথা বলি তাহলে দেখা যাবে, এই প্যান্টের বিচিত্র রূপ আজকালের ব্যবধানে বাজারে আসছে। কখনও নিচের দিকে গোলাকার, কখনও একটু কার্ভ, আবার কখনও ত্রিমাত্রিক। কাপড় আর রঙের বিষয় তো আছেই। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের কাপড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যান্টগুলো সাধারণত সুতি, রিমি কটন, কটন, সিল্ক, কাশ্মীরী, উলন এবং চেকের মধ্যে হয়। ফ্যাশনেবল তরুণদের জন্য এবারও জমে উঠেছে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেল অদ্ভুত কিছু চিত্র- শাহবাগ ॥ শাহবাগ মানেই আজিজ সুপার মার্কেট। অধিকাংশ হাউসে থ্রি-কোয়ার্টারের পসরা। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে দামাদামি। কারও পছন্দ হচ্ছে, দরদাম সাধ্যের মধ্যে মনে হচ্ছে সে তার পছন্দসই প্যান্টটি ক্রয় করছে। আবার কারও কারও অভিযোগও আছে, ক্রেতা জাকির দোকানে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি শেষে বেরিয়ে আসলেন। তার কাছে থ্রি-কোয়ার্টারের দাম বেশি মনে হচ্ছে। তবে তিনি যে কোন মূল্যে প্যান্ট কিনতে চান। প্রয়োজনে সে গুলিস্তান হকার্স মার্কেটে যাবেÑ এমন হুঙ্কারও দিয়ে রাখলেন। গুলিস্তান ॥ গুলিস্তানের মার্কেটগুলোতে সাধারণত কাপড়ের দাম একটু কম। তাই ইদানীং এখানে খুচরা ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। এখানে যে সব তরুণকে দেখা গেল, তারা সম্ভবত আরাম আয়েশের সঙ্গেই থ্রি-কোয়ার্টার কিনতে পারছেন। বাম হাতে প্রায় অর্ধডজন ব্যাচলেট আর ডান হাতে রঙিন ঘড়ি পরা তন্ময় হাবিব মোট ছয়টা থ্রি-কোয়ার্টর প্যান্ট কিনে হাসিমুখে দোকান থেকে বের হলেন। এবার তার মুখে শোনা গেল থ্রি-কোয়ার্টারের কথা। সে প্রতি বছর গরমের সময় প্রায় ২০টার মতো থ্রি-কোয়ার্টার পরে। সব প্যান্ট সে এখান থেকেই ক্রয় করে। এখানে নাকি দাম একটু কম। তবে কাপড়ের মান কেমন, তা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ২৫০-৪৫০ এর মধ্যে সে থ্রি-কোয়ার্টারগুলো কিনতে পেরেছে, সেটাই তার কাছে বড় ব্যাপার। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টগুলো আসলে অভিজাত এলাকার মার্কেটগুলোয় দাম একটু বেশি। নিউমার্কেট থেকে শুরু করে এর আশপাশে যতগুলো অভিজাত মার্কেট আছে, সব মার্কেট প্রায় একই দাম নিয়ে থ্রি-কোয়ার্টারের পসরা সাজিয়েছে। এসব এলাকায় ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট বিক্রি করা হয়। কিছু তরুণের কাছে দাম কোন ব্যাপার না। তারা চায় ভালমানের থ্রি-কোয়ার্টার। আর ডিজাইন থাকবে আধুনিক। যাতে বাইরে বের হলে সাধারণ মানুষের নজর পড়ে। সেইসঙ্গে গরমে প্রশান্তি তো থাকছেই। ছবি : মানস সেন মডেল : সেলিম ও তৃষ্ণা
×