মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদন করার পর রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদ- দেয়াকে বৃহস্পতিবার জোরালোভাবে সমর্থন জানিয়েছেন মিয়ানমারের নোবেল জয়ী নেত্রী আউং সান সুচি। এই বিচারের মাধ্যমে দেশটির সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে বিশ্বব্যাপী যে সমালোচনা হচ্ছে এই মন্তব্যের মাধ্যমে তার জবাব দিলেন তিনি। এএফপি ও বিবিসি।
সুচি স্বীকার করেছেন যে, মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো নৃশংস দমনাভিযান যেটাকে জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে অবিহিত করেছে আরও ভালভাবে সামলানো যেত। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দুই রিপোর্টারের বিচার ন্যায্যভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা সাংবাদিক এই কারণে তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়নি, তারা রাষ্ট্রীয় গোপন আইন লঙ্ঘন করেছেন।’ রাখাইনে সামরিক দমনাভিযান চলাকালে সংঘটিত নৃশংসতার ওপর সংবাদ সংগ্রহের সময় রাষ্ট্রের কঠোর সরকারী আইন ভঙ্গের দায়ে গত সপ্তাহে সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কাইয়া সো ওকে (২৮) ৭ বছর করে কারাদ- দেয়া হয়। এক সময় বৈশ্বিক মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার সুচি দেশে দুই সাংবাদিককে রক্ষায় তার নৈতিক শক্তি ব্যবহার করবেন বলে ব্যাপক চাপে রয়েছেন। বিশ্বব্যাপী এই বিচারের রায়ের সমালোচনার জবাবে সুচি বলেছেন, এই নজিরে আইনের শাসনের প্রতিফলন হয়েছে। জাতিসংঘ, বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ইঙ্গিত দিয়েছেন সেখানে ন্যায় বিচারের ঘাটতি রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘উন্মুক্ত আদালতে মামলার বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে, আমি মনে করি না বিচারকের সারমর্ম পড়ে কেউ বিরক্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই দুই সাংবাদিকের এখনও আপীল করার অধিকার রয়েছে। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে বৃহস্পতিবার আসিয়ান ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে সুচি বলেন, ‘এখন ভাবলে মনে হয়, কিছু উপায় অবশ্যই ছিল যার মাধ্যমে পরিস্থিতিটা আরও ভালভাবে সামাল দেয়া যেত।’ নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন স্থাপনায় একযোগে হামলার অভিযোগ তুলে গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সেনাবাহিনী ওই দমন অভিযান শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয় এশিয়ার এ অঞ্চলে সম্প্রতি সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট। গত এক বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায় উঠে এসেছে রাখাইনে তাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই প্রতিবেদন আসার পর জাতিসংঘের সদ্য বিদায়ী মানবাধিকার হাইকমিশনার জাইদ রা’দ আল হুসেইন বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নৃশংস দমন অভিযানের ঘটনায় মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির পদত্যাগ করা উচিত ছিল।
অবশ্য মিয়ানমার বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে, তাদের অভিযান ছিল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, যারা গত বছর ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। হ্যানয়ের সম্মেলনে সুচি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দীর্ঘ সময়ের জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা চাইলে আমাদের পক্ষপাতহীন হতে হবে। কেবল নির্দিষ্ট কোন পক্ষকে আইনের শাসনে সুরক্ষা দেয়ার কথা আমরা বলতে পারি না।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: