ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

খালেদার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে কিনা আদেশ ২০ সেপ্টেম্বর

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

খালেদার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে কিনা আদেশ ২০ সেপ্টেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে কিনা, সে বিষয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবে আদালত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান এদিন ঠিক করেন। খালেদা জিয়াকে বৃহস্পতিবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় দুদকের আইনজীবী ফৌজদারি আইনের ৫৪০ ‘এ’ ধারায় আসামির অনুপস্থিতিতেই আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আর্জি জানালে বিচারক শুনানি শেষে আদেশের এই দিন ঠিক করে দেন। আর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করার যে আবেদন তার আইনজীবীরা করেছিলেন, সে বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে এ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবী মোঃ আক্তারুজ্জামান শুনানিতে ছিলেন। আর মামলার বাদী ও তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমেই দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আজকের আইনগত আলোচ্য বিষয় কি সেটি উল্লেখ করে মামলার অপর দুই আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুরু করতে আদালতের কাছে আবেদন জানান। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, বেগম খালেদা জিয়া কেন আদালতে আসতে অনিচ্ছুক, কেন তিনি আদালতে আসতে চাচ্ছেন না, সেটা জানতে আজকে আমরা একটা পিটিশন দিয়েছি। ওই পিটিশনে আমরা দুইজন আইনজীবী তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছি। আমাদের সময় দেন। আমরা উনার (খালেদা) সঙ্গে সাক্ষাত করে পরে যে আইনী প্রশ্ন উঠেছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেব।’ এ সময় খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত। গতকাল (বুধবার) আপনি একটা আদেশ দিয়েছেন। ওই আদেশ পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি তাতে আপনি জানতে চেয়েছেন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে কি না?’ ‘এখন কথা হলো তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে কি না সেটি সিআরপিসিতে বলা আছে। এ বিষয়ে আইনী ব্যাখ্যা আমরা পরে দেব। এখন শুধু এটুকু বলব জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়াকে আপনিই জামিন দিয়েছেন। আপনার আদেশেই তিনি জামিনে আছেন। যেহেতু তিনি আপনার আদেশেই ভিন্ন একটি মামলায় কারাগারে আছেন। এ মামলায় তিনি আপনার কাস্টডিতেই আছে। এখন তিনি আমাদের কাছে নেই। এ কারণে আমরা আপনার কাছে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাত করি।’ এরপর এ মামলার অপর দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘এ মামলায় চার জন আসামি। এর মধ্যে একজন পলাতক। একজন ভিন্ন মামলায় কারাগারে। আর বাকি দুইজন আদালতে উপস্থিত। এই দুইজনের পক্ষে আমি দাঁড়িয়েছি। যদিও আমরা সকলেই খালেদা জিয়ার প্যানেলভুক্ত আইনজীবী।’ তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমরা আপনার কাছে একটা মৌলিক আবেদন করেছি। যেখানে আমরা আপনার বিরুদ্ধে কোনো অনাস্থা দেয়নি। আমাদের কথা হলো আগে যেখানে আদালত ছিল। সেটা ছিল উন্মোক্ত। এটি কিন্তু উন্মুক্ত আদালত নয়। এখন বিষয়টি যেহেতু প্রধান বিচারপতির কাছেও গেছে। বিষয়টি পেন্ডিং আছে। তারপরও একটা সিদ্ধান্ত তো আসবে।’ এ সময় পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘কী হাস্যকর বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এখানে আদালতে এসে রুটিন ওয়ার্ক করতে পারবেন, জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবেন কিন্তু যুক্তিতর্ক শুরু করতে পারবেন না। এখানে তিনি দাবি তুলেছেন কোরাম পূর্ণ হয় না। আমার বক্তব্য হলো এখানে কোরাম কীসের। আমরা কি স্টক একচেঞ্জের মিটিং এ বসেছি যে, কোরাম পূর্ণ না হলে কাজ বন্ধ থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দেখার করার আবেদন করেছেন এটা ভাল কথা। এটা তারা করতেই পারে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলো- এখানে দুধরনের আসামি আছে। তার মধ্যে একজন কারাগারে, দুই জন জামিনে আছেন। এখন যদি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাদেরও মিলিয়ে ফেলি তাহলে তো সমস্যা। খালেদা জিয়ার দোহাই দিয়ে বাকি দুই আসামির আইনজীবীরা সুযোগ নিতে পারেন না। তারা কেন খালেদা জিয়ার কান্দে চড়ে সুযোগ নেবে।’ যুক্তিতর্ক শুরু না করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে পারেন না। আদালত যেখানে বসবেন সেটাই আদালত। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া আদালতে না এলে তার হাজিরা মওকুফ করে বিচার কাজ চালিয়ে নেয়ার আবেদন জানান এই আইনজীবী। ফৌজদারি আইনের ৫৪০ (এ) অনুযায়ী আদালতকে সে ক্ষমতা দেয়া আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়া সম্মানিত লোক, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। তিনি আইনের মধ্যে থেকেই সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন। এটাই আমরা বিশ্বাস করি। তিনি সুস্থ হয়ে আদালতে আসবেন কিন্তু বাকি দুই আসামির তো যুক্তিতর্ক শুরু করা যায়। তারা তো আর অসুস্থ না।’ বেগম জিয়া যদি আসতে না চান, তার আইনজীবীরা যদি সহযোগিতা না করেন। তাহলে আর বিলম্ব না করে এ মামলায় রায়ের জন্য দিন ঠিক করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান দুদকের এ আইনজীবী। পরে আদালত ২০ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ঠিক করেন। ওই দিন পর্যন্ত আসামিরা জামিনে থাকবেন বলেও তিনি জানান। এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। ‘অসুস্থতার কারণে’ তাকে গত সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে কারাগারের ভেতরে, যেখানে তিনি আছেন। গত বুধবার প্রথমবারের মতো নাজিমুদ্দিন রোডের এই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি আর আদালতে হাজির হতে পারবেন না। আদালত তাকে যা খুশি সাজা দিতে পারেন। তার আইনজীবীরাও সেদিন উপস্থিত হননি আদালতে। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে এই মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়া এ মামলায় বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে শুনানির জন্য হাজির হতে পারছেন না এ পরিস্থিতিতে বিচার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা আদালতকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর এই কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। যদিও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেন, তারা আদালত স্থানান্তরের কোন নোটিস পাননি। সে কারণে ৫ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে তারা কারাগারের আদালতে উপস্থিত হননি। পরে আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির জন্য নতুন দিন ঠিক করে দেন। দুর্নীতির এই মামলায় মোট আসামি চার জন। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।
×