ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনী শাহরিয়ার রশীদের জামাতা ফুয়াদ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর খুনী শাহরিয়ার রশীদের জামাতা ফুয়াদ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া খুনী লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশীদের জামাতা ফুয়াদ জামানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। ফুয়াদ জামান দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সহযোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে চেষ্টা করছিলেন। এজন্য ফুয়াদ ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যায় তার শ্বশুরের ফাঁসির রায় মেনে নিতে পারেননি। এজন্য তিনি বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা- নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রশংসা করেছেন। ফুয়াদের স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনী সুলতান শাহরিয়ার রশীদের ছোট মেয়ে শেহনাজ রশীদও ইতোপূর্বে মাদকসহ ধানম-ি থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। ফুয়াদকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। তাকে রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গত ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে ফুয়াদ জামানকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এসআই পার্থ প্রতীম ব্রহ্মচারী জানান, চলতি বছরের ২৩ আগস্ট মোঃ নাজমুল হাসান পিয়াস নামে এক ব্যক্তি ধানমণিড মডেল থানায় ফুয়াদ জামানের (৪৩) বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি তিনি তদন্ত করছেন। সেই তদন্তের ধারাবাহিকতায় ফুয়াদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আসামি ফুয়াদকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, আসামি ফুয়াদ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের মেয়ের জামাতা। ফুয়াদের স্ত্রী শেহনাজ রশিদ খান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-ে দ-িত রশিদ খানের মেয়ে। ফুয়াদ শাহরিয়ার রশিদের জামাতা হওয়ায় তার শ্বশুরের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ মেনে নিতে পারেননি। এজন্য তিনি তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকা- নিয়ে কটূক্তি করেন। আসামি ফুয়াদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের সত্যতা স্বীকার করেছেন। মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটনসহ আরও কোন তথ্য অন্য কোন ডিভাইসে সংরক্ষিত আছে কি না এবং আসামির প্রকৃত নাম-ঠিকানা, অন্য কোন সহযোগী বা ইন্ধনদাতা আছে কি না তাদের নাম-ঠিকানা ও অপপ্রচার আরও কোন যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে কি না, তা জানার জন্য আসামিকে রিমান্ডের প্রয়োজন। আদালতে আসামি পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। বিচারক শুনানি শেষে ফুয়াদকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। ফুয়াদকে গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম জানান, বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে ফুয়াদকে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার সময় গ্রেফতার করা হয়। ফুয়াদ গ্রেফতারের সময় অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিলেন বলে মনে হয়েছে। ফুয়াদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি এবং তার আত্মস্বীকৃত খুনীদের প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বলে ধানম-ি থানায় দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য মোহাম্মদ নাজমুল হাসান পিয়াস ধানম-ি থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা- নিয়ে কটূক্তি করে এবং আদালতের রায়ে প্রমাণিত হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে গত ১৫ আগস্ট ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ফুয়াদ। ওই পোস্টে জাতির পিতার খুনীদের অপরাধের পক্ষে সাফাই গেয়ে খুনীদের প্রশংসা করে এবং যেসব খুনীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। সে তার ফেসবুক পোস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্বৈরাচার বলে তার হত্যাকে ভাল কাজ বলে আখ্যা দেয়। বিষয়টি জাতির পিতার প্রতি চরম অসম্মান ও মানহানিকর এবং উস্কানিমূলক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য। তারপর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে। মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মামলা তদন্তের গতি থেমে যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দ-িত সুলতান শাহরিয়ার রশিদসহ পাঁচজনের ফাঁসি ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়। এর আগে ২০১১ সালের ৬ আগস্ট শাহরিয়ার রশিদের ছোট মেয়ে শেহনাজ রশিদ ও তার স্বামী ফুয়াদ জামানকে ইয়াবা বিক্রির টাকা ও ইয়াবাসহ ধানম-ি থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এছাড়া ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সাংসদ ফজলে নূর তাপসকে বোমা মেরে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে শাহরিয়ার রশিদের বড় মেয়ে মেহনাজ রশিদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
×