ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শুধু তো হোটেল নয়। সুরম্য অট্টালিকা নয় শুধু। ইতিহাসের স্মারক। কত কাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে! ঢাকার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা হোটেলটির নামও বদলেছে অনেকবার। তবে শুরুটা হয়েছিল ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল’ নামে। বায়ান্ন বছর পর সেই পুরনো নামে ফিরেছে। কার্যক্রম শুরু করেছে নতুন করে। এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো বৃহস্পতিবার। একটি হোটেল, হোক পাঁচতারকা মানের, আজকের দিনে এ নিয়ে বিশেষ কৌতুহল দেখানোর কিছু থাকে না। নামে পরিবর্তন এসেছে, তাতেই বা কী? তবে নামটি যখন ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল’, তখন চমকিত হতে হয় বৈকী। কারণ এ নাম ইতিহাসের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে, একাত্তরের উত্তাল দিনের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে। সমঝোতা চেষ্টার নামে সেই প্রতারণা, সেই যে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক; এখনও দেখা যায় সাদা কালো ছবিতে। তারও আগে পরের অনেক দুর্লভ ছবি। ছবিতে বারবার দৃশ্যমান হয় ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল।’ ২৫ মার্চের কালরাতের ইতিহাস লিখতে হলেও হোটেলটির কথা লিখতে হয়। ঢাকায় প্রথমবারের মতো গেরিলা আক্রমণের চিহ্নও বহন করছে এই হোটেল। আরও কত কী! ফলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল একটু হলেও স্মৃতিকাতর করছে রাজধানীবাসীকে। বিগত দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ জন্মের আগে ১৯৬৬ সালে মিন্টো রোডে হোটেলটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তখন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ। হোটেলটিও ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছিল এই নাম। এর পর যুক্ত হয় আরেক হোটেল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান শেরাটন। দীর্ঘ ২৮ বছর এই নামে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ২০১১ সালের এপ্রিলে আবার পরিবর্তন। সরকারী কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। এবার নামটি ‘রূপসী বাংলা।’ তবে এই নাম খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বরং ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। নতুন চুক্তি স্বাক্ষর। এতকাল পর আবারও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল! অবশ্য পুরনো নামে ফিরলেও, হোটেলে যোগ হয়েছে নতুন অনেক কিছু। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় সংস্কার কাজ। বড়সড় সংস্কারের কাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ। এ কাজে খরচ করা হয় প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পর দেখা যায়, হোটেলটির একটি নতুন চেহারা দেয়া হয়েছে। মূল কাঠামো ঠিক রাখা হয়েছে। দেয়ালের রংটিও তা-ই। আমুল পরিবর্তন আনা হয়েছে ভেতরের অংশে। বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারায়, সংস্কৃতির উপাদানে সাজানো হয়েছে। মোগল স্থাপত্যশৈলী তুলে ধরার প্রয়াসটিও লক্ষ্যণীয়। আন্তর্জাতিক মানের পরিসেবা নিশ্চিত করতে কক্ষগুলোর আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই কক্ষসংখ্যা কমে হয়েছে ২২৬টি। হোটেলে এখন ২০১টি ডিলাক্স, প্রিমিয়াম ও এক্সিকিউটিভ কক্ষ। প্রতিটির আয়তন ৪০ বর্গমিটার। ৬০ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি সুপিরিয়র স্যুইট। একই আয়তনের ১০টি ডিলাক্স স্যুইট। আছে ৭৫ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি ডিপ্লোমেটিক স্যুইট। পাঁচটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট আছে। প্রতিটির আয়তন ১৫০ বর্গমিটার। আছে দুটি বলরুম। সাতটি সভাকক্ষ। প্রধান বলরুমটির নাম রূপসী বাংলা। যোগ হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্পাসহ নানা কিছু। অবশ্য উদ্বোধন হলেও, হোটেলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে দেড় থেকে দুই মাস পরে। অন্য প্রসঙ্গ। ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, আশার কথা যে, এখনও অব্যাহত রয়েছে। এখন সড়কে নামলেই কিছু না কিছু কড়াকড়ি চোখে পড়ে। ট্রাফিক পুলিশ বেশ তৎপর। গত মঙ্গলবারের কথাই ধরা যাক, এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ৪৩৭০টি মামলা দায়ের করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। জরিমানা করা হয়েছে ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা। এ সময় ট্রাফিক অভিযানে ৩৫টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৯৪টি গাড়ি রেকার করা হয়। ট্রাফিক বিভাগ জানাচ্ছে, অভিযানকালে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর অপরাধে ৩০৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করায় মামলা দেয়া হয়েছে ৪৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে। হুটার ও বিকন লাইট ব্যবহার করার জন্য ৫টি এবং মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস লাগানোর জন্য ৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ১৯০০টি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৯৩টি। এখানেই শেষ নয়, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলায় ২টি ভিডিও মামলা ও ১৮টি সরাসরি মামলা দেয়া হয়েছে। এসব পরিসংখ্যান বলে, জোরেশোরেই চলছে অভিযান। পুলিশের অভিযান হলেও, সবার সহায়তা জরুরী। সাধারণ নাগরিক একটু সচেতন হলে নিশ্চিত বদলে যাবে ঢাকা। বদলে যাওয়ার অপেক্ষা এখন। বৃষ্টির কথাটি বলে শেষ করা যাক। বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ বৃষ্টি। বেশ উপভোগ করল রাজধানীবাসী। বিশেষ করে যাদের একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেও চলে, তারা তো লম্বা ঘুম দিয়েছেন। বিছানা ছাড়তে মন চাইছিল না। ভাদ্রের তালপাকা গরম। এমন গরমের দিনে ভারি বর্ষণ হওয়ায় প্রকৃতি শীতল হয়ে যায়। ভ্যাপসা গরমটা বৃহস্পতিবার অনুভূত হয়নি বললেই চলে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এ কারণেই বৃষ্টি। আগামী দুই তিন দিন একইরকম বৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা। আর তা হলে গরমের কারণে ভুগতে হবে না শহরবাসীকে। কমবে ভোগান্তি।
×