ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ধরা পড়েছে ৯ শীর্ষ জঙ্গী

চাঁপাইয়ে জঙ্গীরা তৎপর, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চাঁপাইয়ে জঙ্গীরা তৎপর, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৯ শীর্ষ জঙ্গী ধরা পড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। তারা নড়েচড়ে বসেছে। বাড়িয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কিন্তু কোনভাবেই জঙ্গীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। র‌্যাব বলছে, ১৩ ও ১৪ আগস্ট রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যে ৪ জঙ্গী ধরা পড়েছিল তাদের একাধিক জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে আসে পাঁচ জঙ্গীর ঠিকানা ও অবস্থান। ফের অভিযান চালিয়ে ধরা হয় গোদাগাড়ী উপজেলার আলীপুর বারইপাড়া গ্রামের জালালউদ্দীনের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩২), চর বোয়ালিয়া আদর্শ গ্রামের মোকবুল হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন ওরফে মুরসালিন (২২), চাঁপাই সদর উপজেলার পশ্চিম কোদালকাটি মধ্যচরের রুস্তম আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০), একই এলাকার গোলাম রাব্বানীর ছেলে ইসমাঈল হোসেন (৩০), আইনুদ্দিন ম-লের ছেলে আব্দুল মতিনকে (৪০)। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশী পিস্তল, সঙ্গে ম্যাগজিন ও ৪ রাউন্ড গুলি, ২০০ গ্রাম গান পাউডার, সাতটি হ্যান্ডনোট, চারটি জিহাদী বইসহ নানা উপকরণ। এদের সকলেই শীর্ষ জঙ্গী সংগঠক হলেও আমিনুল ইসলাম জেএমবির স্থানীয় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছিল। সে লোক দেখানো সুতার ব্যবসা করত। এমনকি অন্য আরও পাঁচটি জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ রেখে কাজ করছিল। পূর্বে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল জেএমবির শীর্ষ নেতা সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেলের সঙ্গে। সোহেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হলেও তার একনিষ্ঠ কর্মী ও সাঙ্গপাঙ্গরা সীমান্ত এলাকাসহ ভারতের পশ্চিমবাংলার মালদহ ও মুর্শিদাবাদে অবস্থান নিয়ে এই গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেছে এতদিন। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। এদের এখন মূল অবস্থান মালদহ ও মুর্শিদাবাদে। তাই যোগাযোগের সুবিধার কারণে এরা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, সীমান্তে অবস্থান নিয়ে জঙ্গীরা এখন জাল নোট, সোনা, অস্ত্র ও মাদক পাচারে কাজ করছে। সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, সাঈদীকে চাঁদে দেখাকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ এলাকায় তথাকথিত যে আন্দোলন হয়েছিল তার কয়েক সহস্র যুবক এখনও আসামি হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদ ও মালদহ এলাকায় অবস্থান করছে। এদের সিংহভাগ এখন জঙ্গীদের আশ্রয়ে থেকে তাদের কথামতো কাজ করছে। জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) পদ্মা নদীর চরে অবস্থান নিয়ে তাদের অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক পদ্মার চরে অভিযান চালিয়েও জঙ্গীদের পুরোপুরি নির্মূল করতে পারছে না। তারা সীমান্তে আস্তানা গেড়ে নিরাপদে তৎপরতা পরিচালনাসহ সীমান্ত পথে ভারত থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ এনে হামলা চালিয়ে সেই সব অস্ত্রসহ আবার নিরাপদে ভারতে চলে যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তের দুটি পাশাপাশি ইউনিয়নে আস্তানা গেড়ে জঙ্গীরা আনাগোনা করছে। এরা চাঁপাইয়ের আলাতুিল ও রাজশাহীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের প্রায় ১২টি চরে আস্তানা গেড়েছে। সর্বশেষ ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে এইসব চর এলাকা থেকে র‌্যাব পাঁচ জেএমবির শীর্ষ নেতাকে আটক করে। এরা চরে অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়। জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক নাটোর থেকে শুরু করে রাজশাহী, বরেন্দ্র অঞ্চল, গোদাগাড়ী, আলাতুলি, কোদালকাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, কানসাট হয়ে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত।
×