ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারনেটে গুজবের দৈত্য ॥ বোতলে আটকাতে পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইন্টারনেটে গুজবের দৈত্য ॥ বোতলে আটকাতে পদক্ষেপ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বলা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলেও ডিজিটালের সবচেয়ে বেশি কুফল ভোগ করতে হচ্ছে সেই সরকারকেই। আরও পরিষ্কার করে বললে ডিজিটালের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগ তথা প্রগতিশীল শক্তিকে। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণহীন মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে নাশকতামূলক গুজবের বিরুদ্ধে এবার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সর্বশেষ কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের নামে চলা তা-বের প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেটে গুজবের প্রবাহ বন্ধে তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ সেল। এদিকে গুজবের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মিসরের নেয়া পদক্ষেপের দিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমকে ‘মিথ্যার একটি প্ল্যাটফর্ম’ উল্লেখ্য করে প্রতিটি গুজব ও তার বিপরীতে আসল তথ্য মানুষকে জানাতে দেশজুড়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ কাজে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর গুজবের বিরুদ্ধে দেয়া হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য প্রচার ছাড়াও সঠিক তথ্য প্রচার করছে সরকারী-বেসরকারী টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন নিউজপ্রোর্টালসহ সব যোগাযোগ মাধ্যম। সরকারের সূত্রগুলো বলছে, সর্বশেষ কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের নামে চলা তা-বের প্রেক্ষাপটে নড়ে চড়ে বসেছে সরকার। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই ইন্টারনেটে অপপ্রচার বন্ধে ‘গুজব শনাক্তকরণ ও নিরসন কেন্দ্র’ নামে এ সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সেলের মূল দায়িত্ব হবে গণমাধ্যমে এবং ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব গুজব ছড়ানো হয় তার উৎস অনুসন্ধান করা এবং তথ্য যাচাই-বাছাই করে সত্য ঘটনাটি জনসাধারণকে জানিয়ে দেয়া। এছাড়া অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে অপরাধ বন্ধের লক্ষ্যে ফেসবুকের কনটেন্ট মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শীঘ্রই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। তবে ইন্টারনেট ব্যবসায় অত্যাধুনিক সুরক্ষা প্রযুক্তি থাকায় সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর বিপুল উপাত্ত থেকে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ফিল্টার করা প্রায় দুঃসাধ্য বলেই মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এর আগে গত কয়েক বছর ধরেই দেশজুড়ে ঘটেছে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে দেশজুড়ে হত্যা, নাশকতার ঘটনাই শেষ নয়। কক্সবাজারের রামুতে ফেসবুকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনের নামে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে চালানো হয় বর্বরতা। এরপর ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহু প্রগতিশীল ব্যক্তিকে হত্যা, হামলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তা-ব চালানো হয়। হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে বহু অঞ্চলের মন্দিরে। অন্যদিকে ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগের সুযোগে সরকারের সব ভাল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সক্রিয় আছে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শত ফেসবুক পেজ। আছে শত শত অনলাইন যার কাজই হচ্ছে সরকার বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে নাশকতায় উস্কানি দেয়া। দেশে জঙ্গীদের কর্মকা-ও চলে এই পথেই। বছরের পর বছর ধরে এরা সক্রিয় থাকলেও সরকার এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছে কম ক্ষেত্রেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার্যকর নেই ভাল কোন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তুলনায় উগ্রবাদীরাই এক্ষেত্রে বেশি দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এই শক্তির লাগাম টানা যায়নি। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গুজবের দৃশ্য দেখেছে মানুষ তাতে উদ্বিগ্ন সকলেই। পুরো আন্দোলনে উপাচার্যের বাসভবনে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ তা-ব, কবি সুফিয়া কামাল হলে রাতে গুজব ছড়িয়ে বর্ববতা চালানো হয় ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েই। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা আন্দোলনে গুজবের চরম ফল দেখেছে পুরো দেশ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক বলে কাজ শুরু করলেও ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সঙ্কট ঘনীভূত করার পাঁয়তারায় নামে তৃতীয় পক্ষ। শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পর্কেও মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য ছড়ানো হয়। ছবি বিকৃত করে শিক্ষার্থীদের উস্কানি দেয়া হয় নাশকতার জন্য। শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয় যে তাদের ওপর হামলা, রগ কেটে দেয়ার মতো গুজব। ভূইফোঁড় নিউজপোর্টালে প্রধানমন্ত্রীর নামে বিকৃত, মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ফলে সড়কে গুজবের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সরকারকেই। এক আলোকচিত্র শিল্পীর বিএনপি-জামায়াত নেতার স্টাইলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সরকার বিরোধী উস্কানি, আওয়ামী লীগ কার্যলয়ে খুন ধর্ষণের মতো গুজব ছড়ানোর দৃশ্য এখনও আছে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। কোন কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় অপরাধীরা নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে অপপ্রচার। তবে জানা গেছে, এবার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। সে অনুসারে আসছে বিশেষ পদক্ষেপ। প্রথমবারের মতো একটি কার্যকর সেল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। যাতে আশার আলো দেখছেন সকলেই। কিন্তু কি সেই পদক্ষেপ? আর এসব বিষয়ে সংশ্লষ্টরাই কি ভাবছেন? তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করছি সামাজিক মাধ্যমে একটি বিশেষ চক্র, বিশেষভাবে সাম্প্রদায়িক চক্র, যুদ্ধাপরাধী চক্র, ক্রমাগতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। এটা সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে, অবিশ্বাস তৈরি করছে এবং সংঘর্ষের উস্কানি দিচ্ছে। এজন্যই সরকার মনে করছে গুজবের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সতর্ক করা এবং সচেতন করার প্রয়োজন। বিএনপি-জামায়াতকে সাম্প্রদায়িক চক্র এবং তাদেরকে গুজব রটনা ও মিথ্যাচারের প্রধান কারখানা হিসেবে আখ্যায়িত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং কোরানের বাণী নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাওয়া এই সম্প্রদায়িক-জঙ্গীচক্রের কালো থাবা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে রক্ষা করতে হবে। জানা গেছে, এ বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে বিশেষ এই সেল গঠিত হবে। গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব গুজব ছড়িয়ে পড়ছে, এই সেলগুলো তা শনাক্ত করবে। গুজবের উৎস অনুসন্ধান করবে, গুজবের বিষয় শনাক্ত করবে এবং প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জনসাধারণকে জানিয়ে দেবে। এসব গুজবের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকেও যুক্ত করা হবে। আপাতত তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সেল গঠিত হবে এবং পরে এতে বিশেষজ্ঞরাও যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিহত করতে গুজব শনাক্তকরণ ও নিরসন সেল দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। এই সেল কোন গুজব ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা শনাক্ত করে ৩ ঘণ্টার মধ্যে গুজবের সত্যতা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানাবে। তারানা হালিম বলেন, যে কোন গুজব অনুসন্ধানে তথ্য সেল গঠন করা হবে। আট ঘণ্টা করে তিনটি শিফটে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিংয়ে রাখা হবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। প্রতি শিফটে সাতজন করে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, গুজব থেকে কেউ নিরাপদ নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেমন অনিরাপদ তেমনি আপনারাও (গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান) কেউ নিরাপদ নন, আপনাদের লোগো ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য নানা ধরনের অপকর্ম করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবির তিন শ’রও বেশি ফেসবুক পেজ পরিচালনা ও অর্থায়ন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে অপরাধ বন্ধের লক্ষ্যে ফেসবুকের কনটেন্ট মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শীঘ্রই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ফেসবুক, গুগল কিংবা ইউটিউব, তারা তাদের নিয়ম অনুযায়ী চলে, তাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চলে। আমাদের সাধারণত তাদের অনুরোধ করতে হয়, কোন কিছু বন্ধ করা বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। সেক্ষেত্রে তারা যদি মনে করে কাজাটা করা প্রয়োজন তাহলে করে। আমাদের জন্য এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা। আমরা মনে হয় দু’তিন মাসের মধ্যে এর সুফল দিতে পারব। কিন্তু অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট ফিল্টার বেশ জটিল প্রক্রিয়া বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, এটা খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন সাব্বির বলেন, সোস্যাল মিডিয়ার বা বিভিন্ন মিডিয়ার কন্টেন্টর একটা বড় অংশ হলো এনক্রিপ্টেট। এই জাতীয় কন্টেন্ট ফিল্টারিং করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য এবং ব্যয়বহুলও বটে। তবে ফেসবুকসহ এসব সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকার যৌথভাবে কাজ করলে অনাকাক্সিক্ষত কনটেন্ট মুছে ফেলা সহজ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবারের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় গুজবের বিরুদ্ধে স্বোচার ছাত্র নেতাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে উগ্রবাদীদের অপপ্রচারের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল। কবি সুফিয়া কামাল হলের বিষয়ে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধী শিবির জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তেই জানা গেছে। বেগম সুফিয়া কামাল হলেরই ছাত্রী ও ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক তিলোত্তমা সিকদারের মতে, আমাদের হলের ঘটনাসহ পুরো আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সরকার বিরোধীদের ছড়ানো গুজব। একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ‘সরকার যে উদ্যোগের কথা জানিয়েছে তাতে আশার আলো দেখবে মানুষ। এটি খুব প্রয়োজন ছিল।’ এদিকে গুজবের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মিসরের নেয়া পদক্ষেপের দিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান বলছিলেন, অন্যান্য পদক্ষেপের বাইরেও মিসর যে সঠিত তথ্য প্রচারের কাজটা করছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে আমাদের দেশেও ওই কাজ করা প্রয়োজন। যেটা করলে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে গুজবের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্যটা পৌঁছানো সম্ভব হবে। এটা খুবই ফলপ্রসূ উদ্যোগ হতে পারে। কিন্তু কি পদক্ষেপ সেখানে নেয়া হয়েছে? জানা গেছে, মিসরে ফেসবুকসহ সামাজিক নেটওয়ের্কে গুজব ঠেকাতে টেলিভিশনে সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। দেশটিতে তিন মাসে ২১ হাজার গুজব ছাপিয়েছে। এক জনসমাবেশে এই তথ্য তুলে ধরে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এরপর থেকে সতর্কবার্তা দিয়ে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। দেশটিতে সামাজিক নেটওয়ার্কে সর্বশেষ ছড়িয়েছিল যে, একটি মানব পাচারকারী দল তিনটি শিশুকে কায়রোতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর হত্যা করেছে। এটি প্রত্যাখ্যান করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় একটি বেসরকারী টেলিভিশনে। সেই বিজ্ঞাপনে নিরাপত্তা বাহিনীকে উদ্ধৃত করে প্রচারটিকে গুজব হিসেবে বর্ণনা করা হয়। মিসরে টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সামাজিক নেটওয়ার্কে আপনি যা দেখবেন, তার সবটাই বিশ্বাস করবেন না। সামাজিক নেটওয়ার্কে কোন খবর শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নিন। খবর জানার জন্য বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য মাধ্যমের উপর নির্ভর করুন।’ আরেকটি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। এই বিজ্ঞাপনে ১০ দিনের একটি সময়সীমা ধরে সেই সময়ে সামাজিক নেটওয়ার্কে আটটি ‘গুজব’ ছড়ানোর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম মিথ্যার একটি প্ল্যাটফর্ম বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। যে আটটি গুজবের কথা বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তার একটি হচ্ছে, মিসরের একটি তহবিলের আওতায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এটিকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করাই এই তহবিলের লক্ষ্য এবং সেটাই তারা করছে। সামাজিক মাধ্যমে আরেকটি ঘটনা প্রচার করা হয়েছে, সুয়েজ খালে ছয়টি জাহাজের সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু সেখানে এ ধরনের কিছুই ঘটেনি বলে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গুজব দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে।’ মিসরের প্রেসিডেন্ট সামাজিক নেটওয়ার্কে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধ যে প্রচার চালাচ্ছেন, দেশটির সংবাদমাধ্যমও একই ধরনের প্রচার নেমেছে। গুজব দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যগুলো পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারিকে মিসরের সংবাদমাধ্যম প্রধান শিরোনাম হিসেবেও প্রকাশ করেছে। যেমন একটি বেসরকারী পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম করা হয়েছে, ‘তিন মাসে আমরা ২১ হাজার গুজবের মুখোমুখি হয়েছি’-প্রেসিডেন্ট। অনলাইন সংবাদপত্র বা নিউজ ওয়েবসাইটগুলোও এই ক্যাম্পেনে অংশ নিচ্ছে। তারা সরকারী কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের সাক্ষাতকার প্রচার করছে, তাতে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে বক্তব্য থাকছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে একটি ওয়েবসাইট বলেছে, যুবকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টির টার্গেট নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
×