ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিদের উড়িয়ে রেকর্ড ১১ বার ফাইনালে ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাকিদের উড়িয়ে রেকর্ড ১১ বার ফাইনালে ভারত

জাহিদুল আলম জয় ॥ অংশগ্রহণকারী সাত দেশের মধ্যে ছয় দেশ জাতীয় দল নিয়ে খেললেও ব্যতিক্রম শুধু ভারত। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বারবার সাফল্যের কারণে এবার তারা বাংলাদেশে পাঠিয়েছে অনুর্ধ-২৩ দল। কিন্তু এই যুবাদেরও কেউ আটকে রাখতে পারছে না। যার প্রমাণ সুবাশিস, মানবিররা আরও একবার রেখেছেন ফাইনালে নাম লেখিয়ে। বুধবার রাতে চলমান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। এর ফলে সাফের ১২ আসরের মধ্যে ১১ বারই ফাইনালে নাম লেখাল তারা। এর মধ্যে টানা সাতবার। আগের ১০ বার ফাইনালে খেলে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭ বার। এবার তাদের ৮ম শিরোপার হাতছানি। অন্যদিকে এবারসহ পাঁচবার সেমিফাইনালে খেলে প্রতিবারই হারের বেদনায় নীল হতে হয়েছে পাকিদের। একবারও ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাদের। এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পেয়েছে মালদ্বীপ। এই ম্যাচে গ্যালারিতে অদ্ভুত দৃশ্যের দেখা মেলে। পশ্চিম অর্থাৎ মোহামেডান গ্যালারিতে হাজারখানেক দর্শক খেলা উপভোগ করেন। এর মধ্যে অনেকের হাতেই শোভা পায় পাকিস্তানের পতাকা। তবে একটি দৃশ্য অনেককে অবাক করেছে। দু’জন দর্শকের হাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুটি পতাকাই দেখা যায়। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে জনৈক দর্শক এক লাঠিতে দু’দেশের পতাকা ওড়ান। যার ওপরে ছিল বাংলাদেশের পতাকা, আর নিচে পাকিস্তানের। ম্যাচের প্রথমার্ধে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়। বল দখলে ভারত কিছুটা এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগে দু’দলই ছিল সমানে সমান। দু’দলই বেশ কয়েকটি সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে। সপ্তম মিনিটে প্রথম ভাল সুযোগ পায় পাকিস্তান। ডি বক্সের বাইরে থেকে ফরোয়ার্ড মেহমুদ খানের উড়ে আসা ফ্রিকিকে দুর্দান্ত হেড করেন মিডফিল্ডার মুহাম্মদ রিয়াজ। কিন্তু তার হেড অল্পের জন্য সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি পাকিদের। নবম মিনিটে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ আসে ভারতেরও। মিডফিল্ডার আশিক খুরনাইন ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন। সেই চলতি বলে দক্ষতার সঙ্গে পা লাগান মানবির সিং। কিন্তু তার প্রচেষ্টা সরাসরি চলে যায় পাকি গোলরক্ষক ইউসাফ বাটের হাতে। ২৫ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে স্টিফেন ফিলিপ কনস্ট্যানটাইনের শিষ্যরা। মাঝমাঠ থেকে সংঘবদ্ধ আক্রমণে ডি বক্সে ফারুক চৌধুরীর কাছ থেকে বল পান ফরোয়ার্ড মানবির সিং। কিন্তু ফাঁকায় পেয়েও তিনি খুব একটা জোরালো শট নিতে পারেননি। তার প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানের গোলরক্ষক। ৩৫ মিনিটে দারুণ সুযোগ আসে পাকিস্তানের। ডানপ্রান্ত থেকে রিয়াজের বাড়ানো বলে মহসিন আলির শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। তিন মিনিট পর আবারও রিয়াজ-মহসিন কম্বিনেশনে সুযোগ আসে পাকিদের। এবার তাদের হতাশ করেন ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল কেইথ। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিল সুবাশিস বোসের ভারত। বামপ্রান্ত দিয়ে ফারুক চৌধুরী দ্রুতগতিতে এগিয়ে যান পাকি বক্সে। এরপর তার নেয়া দারুণ প্লেসিং শট দ্বিতীয় পোস্টে আলতো ছোঁয়া লেগে বাইরে যায়। ফলে প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া আক্রমণ শানাতে থাকে ভারত। ৪৮ মিনিটে প্রত্যাশিত গোলও আদায় করে নেয় তারা। মাঝমাঠ থেকে মিডফিল্ডার নিখিল চন্দ্র সরকার পাকিদের কয়েকজনকে কাটিয়ে বামপ্রান্তে থ্রু দেন। সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আরেক মিডফিল্ডার আশিক গোলমুখে ক্রস করেন। আর চলতি বলে পা ছুঁইয়ে কাক্সিক্ষত ঠিকানায় বল পাঠিয়ে দেন ফরোয়ার্ড মানবির সিং (১-০)। ৬৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ভারত। পাল্টা আক্রমণে মাঝমাঠ থেকে লাললিয়ানজুয়ালার পাসে বল পান মিডফিল্ডার ভিনিত রায়। তিনি বল বাড়িয়ে দেন ডানপ্রান্তে। এরপর চলতি বলে দুর্দান্ত ভলিতে পাকিস্তাদের জাল কাঁপান প্রথম গোলদাতা মানবির (২-০)। ৮৪ মিনিটে পাকিদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় ভারত। মাঝমাঠ থেকে ফারুক চৌধুরী এগিয়ে যেয়ে বল বাড়ান আশিককে। তার উড়ন্ত ক্রসে দুর্দান্ত হেডে গোল করেন বদলি ফরোয়ার্ড সুমিত পাসি (৩-০)। দুই মিনিট পরই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে দু’দলের ফুটবলাররা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলশ্রুতিতে রেফারি পাকিস্তানের মহসিন আলি ও ভারতের লাললিয়ানজুয়ালাকে লালকার্ড দেখান।
×