ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা শিবিরে ভীতিকর পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা শিবিরে ভীতিকর পরিবেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খুন, গুম ও অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে ২২ রোহিঙ্গা খুন হওয়ার ঘটনা ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয় লাশ মিলছে বিভিন্ন সময়ে। বর্তমানে প্রায় সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রাতের আঁধারে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং যুবক শ্রেণীর সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদের কারও কারও লাশ পরবর্তীতে মিলছে। আবার কারও কোন হদিস মিলছে না। এ পর্যন্ত পরিসংখ্যানে ২৮ রোহিঙ্গা অপহরণের তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার টেকনাফে অজ্ঞাতনামা এক রোহিঙ্গা যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ঘটনায় লিপ্ত হয়েছে বলে এন্তার অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়া এলাকার প্রদর্শনী চিংড়ি খামার সংলগ্ন জলা থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, আনুমানিক ৩০ বছর বয়সের গেঞ্জি ও প্যান্ট পরিধেয় ওই লাশের মুখে দাড়ি রয়েছে। তাছাড়া শরীরে কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে কেউ লাশটি শনাক্ত করতে পারেনি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্টের রাতের পর থেকে যখন দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তখন বিদ্রোহী রোহিঙ্গা সংগঠনের বহু সদস্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলে আসে। এরাই এ ধরনের অপকর্মে জড়িত। ইতোপূর্বে এ ধরনের অপরাধের অভিযোগ নিয়ে গ্রেফতার অভিযান শুরু করার পর রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করা হচ্ছে বলে চাপ আসে। এমনকি তা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও। এরপরও পুলিশ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অভিযান চালিযে অস্ত্রসহ ১৬ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরে বসবাসকারী কিছু পুরনো রোহিঙ্গা নেতা ও কিছু মদদদাতা এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। এরা এসব সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র পৌঁছাতেও গোপন সহযোগিতায় রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। যে কারণে ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার পর প্রত্যাবাসন ফাঁকি দিয়ে এদেশে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে এলাকার বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে। সূত্র জানিয়েছে, কিছুসংখ্যক এনজিও রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার মানসে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তারা ওই রোহিঙ্গাদের অভয় দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ওসব এনজিও এবং পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের উস্কানি পেয়ে অশিক্ষিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সন্ধ্যার পর থেকে রোহিঙ্গা শিবিরে যেন ভীতিকর পরিবেশে পৌছে যায়। নিরীহ রোহিঙ্গারা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই নিজ নিজ কক্ষে ঢুকে পড়ে। কেউ কারও সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছে কি না দেখতে সন্ত্রাসী ক্যাডাররা চুপিসারে বিভিন্ন কক্ষের সম্মুখে গিয়ে নীরবে অবস্থান নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া মঙ্গলবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, গত এক বছরে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত হত্যা মামলা হয়েছে ১৮টি। টেকনাফের ৭টি রোহিঙ্গা শিবির থেকে এ পর্যন্ত ১২৭ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। অস্ত্রধারী ডাকাত রোহিঙ্গা আবদুল হাকিমকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় সোর্স কাজ করছে। উখিয়া থানার ওসি তদন্ত মোঃ খায়রুজ্জামান জানান, উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ খায়রুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গা স্রোত অনুপ্রবেশের পরবর্তী সময়ে ২১টি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে উখিয়া থানায়। তন্মধ্যে ৫টি অপমৃত্যু এবং ১৬টি নিয়মিত হত্যা মামলা। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ৩৪ রোহিঙ্গাকে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশ নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও পুলিশ সদা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কোথাও কোন অপরাধের সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হচ্ছে পুলিশ দল।
×