ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ও পুরানো মুখের তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নতুন ও পুরানো মুখের তৎপরতা

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ আগামী নির্বাচনে (একাদশ জাতীয় সংসদ) বিএনপি অংশ নেবে কি নেবে না, নিলে একক না জোটগত, জোট হলে দলের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত থাকবে কিনা এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখনও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অবস্থাও শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা নিয়েও আলোচনার কমতি নেই। তবে এ পর্যন্ত এটা সুনিশ্চিত যে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা এ সরকারের অধীনে এবং সংবিধান অনুযায়ীই হবে। এক্ষেত্রে বিএনপির বিভিন্ন দাবি ও নানা হুংকার নিয়ে সফলতা আদৌ আসবে কিনা তা একটি বড় ধরনের প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচনে কোন্ দলের সঙ্গে কে জোট বাঁধবে, কে জোট থেকে বেরিয়ে যাবে, কারা বোল পাল্টাবে সেটা এখনও গোলক ধাঁধার বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকারিদল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচন নিয়ে সবদিক থেকেই অন্য দলের চেয়ে প্লাস পয়েন্টে রয়েছে। তবে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মনোনয়ন লাভে আগ্রহীরা। পুরনোদের মাঝে অনেকেই হলফ করে বলতে পারছেন না তার মনোনয়ন নিশ্চিত। আবার নতুন আগ্রহীদের অনেকে আশায় বুক বেঁধেছেন এই বলে যে, এবার পরিবর্তন আসবেই। দলে ক্ষমতা পেয়ে এবং ক্ষমতার বাইরে থেকে যারা বর্তমানে মেয়াদে ভালমন্দ যাই করেছেন তার একাধিক রিপোর্ট দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। একাধিক সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে তিনি তা পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। ফাইনাল টিক মার্ক অর্থাৎ মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটবে সেটা এ পর্যন্ত সভানেত্রী ছাড়া আর কারও কাছে জানা আছে বলে মনে হয় না। তবে একান্ত বিশ্বস্ত বলে যারা নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছেন তাদের মধ্যে কারও কারও কাছে জানা থাকতেও পারে। তবে একথা সত্য যে, মনোনয়ন প্রদানে এ দলে পরিবর্তন যে আসবে সেটা নিশ্চিত। কেননা, মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে কে কিভাবে কোন পর্যায়ে কি কি অবদান রেখেছেন, দলের উপকার করেছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি ভাবমূর্তিকে জনগণের কাছে সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছেন সে রিপোর্টও নেত্রীর কাছে পৌঁছে গেছে। সঙ্গত কারণে এবারের দলীয় মনোনয়ন লাভ আগ্রহীদের জন্য বড় একটি কঠিন পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে এ সরকারের এত উন্নয়ন, এত অর্জন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত স্বীকৃতি লাভের পরও দলের কারও কারও কর্মকা- এত বিতর্কিত এবং এত সমালোচিত হয়েছে যে, সভানেত্রী তাদের ছাড় নাও দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি দলে চট্টগ্রামের ভূমিকা অন্যতম। একটি প্রধান বিষয়। সুদূর ব্রিটিশ আমল থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম আন্দোলন সংগ্রামের তীর্থস্থান রূপে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগামেও চট্টগ্রাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের আসনে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, স্বাধীনতার ঘোষণাসহ জাতীয় স্বার্থের অনেক ঘটনাই চট্টগ্রাম থেকে শুরু। চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী আবার বাণিজ্যিক রাজধানী নামেও স্বীকৃত। এই চট্টগ্রামে বর্তমানে সংসদীয় আসন সংখ্যা ১৬। যার মধ্যে ৪টি মহানগরে। গত সংসদ নির্বাচনে এই চট্টগ্রামে সবক’টি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ (জোটগতভাবে)। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। নিলেও যে খুব বেশি হেরফের হতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ওই নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল সে হিসেবে এবার এই জোয়ার আওয়ামী লীগের স্কন্ধেই বর্তানোর কথা। প্রথম কথা চট্টগ্রামকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে। বহু প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান। বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) মাধ্যমে। সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এই আমলে এই নগরে নগরবাসী পেয়েছে প্রথম ফ্লাইওভার। হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল। নগরীর বাইরে দুটি বড় অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসছে এলএনজি, যার প্রথম সুবিধা পেতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের বেশকিছু শিল্প কারখানা। এছাড়া মাঝারি-ছোট আরও বহু প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, হতে চলেছে। এসব সফলতা নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরীক্ষায় নামতে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রামও প্রস্তুত। জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ। চলছে ক্ষণ গণনা। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন কারা পাবেন, আর কারা পাবেন না সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আগ্রহীদের সকলেই যে যার পথে লবিংয়ে ব্যস্ত। কিন্তু লবিংয়ে নেত্রীকে তাঁর নিজ সিদ্ধান্ত থেকে টলানো যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এবার পুরনোদের সঙ্গে মনোনয়ন লাভের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন নতুন নতুন বহু মুখ। খোদ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এমন নতুন মুখের সংখ্যা কম নয়। ম্যাজিকেল লেডি হিসেবে আখ্যাপ্রাপ্ত দলের সভানেত্রী এই পর্যন্ত যা বলেছেন তা হচ্ছে, কারও মুখের দিকে তাকিয়ে নয়, যোগ্যরাই মনোনয়ন পাবেন। আর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেছেন, মনোনয়ন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অক্টোবর নাগাদ হবে। পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় অনেককে চিঠি দেয়া হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চট্টগ্রামেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং গ্রুপিং সৃষ্টির জন্য দায়ী অনেকেই রয়েছেন। ছোটখাটো বহু ঘটনা রয়েছে যা দলের ভাবমূর্তিকে জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রয়াত আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো গণমুখী, জনদরদী ও দলের জন্য নিবেদিত প্রাণশক্তিসম্পন্ন নেতার বড্ড অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্বাচন এলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শ দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড বিশেষভাবে বিবেচনা করত। এখন এই মহানগরে এ দলের মূল শক্তি বলে উল্লেখযোগ্য স্থান কেউ নিতে পারেননি। তিনটি সাংগঠনিক জেলা নিয়ে চট্টগ্রাম। নগরে ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ আখতারুজ্জামান চৌধুরী এবং উত্তরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রথম দুজন বর্তমানে প্রয়াত। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উত্তরের নেতৃত্ব থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসীন হয়েছেন। পাশাপাশি মন্ত্রিত্বেও আছেন। সাংগঠনিক জেলায় তাঁর প্রভাবও বিদ্যমান। বয়সও হয়েছে। কিন্তু কর্মে তৎপর। তাই মীরসরাই (চট্টগ্রাম-১) আসলে তার মনোনয়ন যে নিশ্চিত এতে তেমন কারও সন্দেহ নেই। ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম-২) আসনে মনোনয়নের টিকেট কার ললাটে আসছে তা বলা কঠিন। আগ্রহী বহু। সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম-৩), সীতাকু- (চট্টগ্রাম-৪), হাটহাজারী (চট্টগ্রাম-৫), চান্দগাও-বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম-৮), বাকলিয়া-কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম-৯), ডবলমুরিং-হালিশহর (চট্টগ্রাম-১০), বন্দর-পতেঙ্গা (চট্টগ্রাম-১১), চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম-১৪), সাতকানিয়া-লোহাগড়া (চট্টগ্রাম-১৫), বাঁশখালী (চট্টগ্রাম-১৬) দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। নতুন প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদেরও কমতি নেই। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসবেন তা এখনও অনিশ্চিত। তবে রাউজান (চট্টগ্রাম-৬), রাঙ্গুনীয়া (চট্টগ্রাম-৭), পটিয়া (চট্টগ্রাম-১২), আনোয়ারা (চট্টগ্রাম-১৩) আসনে যারা বর্তমান এমপি রয়েছেন তারা মনোনয়ন দৌড়ে প্লাস পয়েন্টে রয়েছেন। তবে একেবারে হলফ করে বলাও মুশকিল। কেননা, অন্তর্কোন্দল, একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ এসব আসনের কোন কোন এমপির বিরুদ্ধেও রয়েছে। তবে এদের প্রায় সকলের সরকার পক্ষের দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে স্ব স্ব এলাকায়। ইতিবাচক-নেতিবাচক দুধরনের রিপোর্টই সভানেত্রীর টেবিলে পৌঁছে গেছে। এক্ষেত্রে রাঙ্গুনীয়ায় ড. হাছান মাহমুদ, আনোয়ারায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও রাউজানের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নামটি বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। এর কারণও রয়েছে। ড. হাছান মাহমুদ দলের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বর্তমানে ভূমি প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী রাউজানের উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তবে একক কর্তৃত্ব আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি নিয়ে তার সমালোচনারও কমতি নেই।
×