ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আসমা আক্তার মুক্তা

একে অপরকে বোঝাটা জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

একে অপরকে বোঝাটা জরুরী

‘তালাক’ যার অর্থ করলে বোঝায় বিচ্ছেদ। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ। দিন দিন এই তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েই চলেছে। ধর্মীয় নৈতিক দৃষ্টিতে তালাকের বৈধতা দেয়া হয়েছে। স্বামী যেমন স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে তেমনি স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট কারণ লাগে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বিবাহ-বিচ্ছেদের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে দেখা যায় সংসারে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, মাদকাসক্তি, পরকীয়া-সন্দেহ প্রবণতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক ঝগড়া বিবাদ, উত্তরাধিকার সম্পত্তি ইত্যাদি। এই বিচ্ছেদ যে সুফল বয়ে আনে তা কিন্তু নয়, বিচ্ছেদের কারণে ঘটে মানসিক বিপর্যয়ও। যার থেকে হতে পারে কোন অপরাধ প্রবণতার সৃষ্টি। একটা পরিবার যখন একটা মেয়েকে বিয়ে দেয়, হয়ত এমনও হতে পারে তার কোন মিল হচ্ছে না। তাদের সম্পর্ক, পরিকল্পনা, কোনটাতেই দুজনের মিল থাকে না, তারা হয়ত দুজন-দুজনার মতো চলবে। ফলে প্রতিদিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হবে, আর এর শেষ পরিণতি বিবাহ বিচ্ছেদ। অনেকেই দেশের বাইওে কিংবা এক শহর থেকে অন্য শহরে চাকরি-বাকরি করতে যায়। আর বাড়িতে স্ত্রীকে রেখে যায়। এক্ষেত্রে স্ত্রীদের মন একঘেয়েমিতে ভরে ওঠে। দেখা দেয় সন্দেহ, ভুল বোঝাবুঝি। যার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদকেই তারা শান্তির সমাধান হিসেবে বেছে নেয়। বেশি অর্থ যেমন অনর্থ ঘটায় আবার অর্থের অভাবও তাই। বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে আর্থিক অসচ্ছলতাকেই দায়ী করা হয়। স্ত্রীর পিতৃসম্পত্তির জন্যও আমাদের দেশে স্বামী তালাক দেয়। যা আমার দেখা এক আত্মীয়র ক্ষেত্রে ঘটেছিল। যার পিতৃসম্পত্তি তার বাবা-মা সব তার ভাইদের দিয়ে দেয়, কিন্তু ৫ বোনের একজনকেও সম্পত্তি দেয়া হয়নি। আর এর জন্য তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তাদের তিন সন্তানকে তাদের চাচার বাসায় নিয়ে যায়। তাদের পড়ালেখা বন্ধ করে দেয় ফলে তারা মাকে ছাড়া হয়ে ওঠে বিষণœ। ওই পরিবারের অন্য ৪ বোনদের স্বামীরা হুমকি দিতে থাকে যে যদি পিতার সম্পত্তি না আনে তাহলে তালাক দিয়ে দেবে । এছাড়া শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে তালাক বেড়ে চলেছে, যারা নিজেদের মতামতকে একভাবে না দেখে ভিন্নভাবে দেখে। আর প্রযুক্তির যুগে এসে বাড়ছে বিশ্বাসহীনতা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুধু স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত পুরুষের নয় স্বামীর সঙ্গেও অন্য নারীর সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী। শহরে বড়লোকের মেয়েদের আত্মঅহমিকা রয়েছে। এরা স্বাধীনচেতা হচ্ছে, দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে পরকীয়ায়। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। আর এ বিচ্ছেদেও প্রধান শিকার হন সন্তানরা। তারা পিতা-মাতাহীন বেড়ে উঠে। আর আস্তে আস্তে তারা ঝুঁকে পড়ে অপরাধপ্রবণতার দিকে। এভাবে দিন দিন তালাকের পরিমাণ বেড়ে চললে ভবিষ্যত প্রজন্ম বিপথগামী হবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। বাড়বে কিশোর অপরাধ। এভাবে দিন দিন অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকলে পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্রে উগ্রতা বেড়ে যাবে, যা দমন করা হয়ে উঠবে কষ্টসাধ্য। তাই বন্ধ হোক বিবাহ বিচ্ছেদ। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় থেকে
×