ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তিমা চক্রবর্ত্তী (শেলী)

স্মরণ ॥ শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ॥ একজন আদর্শবাদী রাজনীতিক

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্মরণ ॥ শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ॥ একজন আদর্শবাদী রাজনীতিক

আজ ১৩ সেপ্টেম্বর, শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মানুষ হিসেবে সমাজে তিনি মনুষ্যত্ব ও মহত্ত্বের যে নিদর্শন রেখে গেছেন তা কখনই ভোলার নয়। নাটোরবাসীর ছায়া ও ভরসার জায়গা ছিলেন শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। প্রায় সবারই ‘শংকর কাকা’। বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট বাবা জ্ঞানদা গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন নাটোরের ভাবনির জমিদার। তাঁর জন্ম ১৯২৬ সালের ৪ মার্চ। তিনি নাটোর, বগুড়ায় পড়া শেষে কলকাতায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময় তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে সবধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সক্রিয়। রাজপথ থেকে সংসদ, সবখানে তার উপস্থিতি ছিল সরব। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আবার নিজে একজন সাধারণ কর্মীর মতো কাজ করেছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নিহত হওয়ার পরবর্তী শাসনামলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাকে এক বছর কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি একাধিকবার ঐতিহ্যবাহী নাটোর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষের একজন ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ নম্বর সেক্টরের জোনাল কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্যও ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নাটোরের গবর্নর নিযুক্ত করেন। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নাটোর সদর আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএইচে তিনি পরলোকগমন করেন। আমৃত্যু তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি নাটোর রানী ভবানী মহিলা কলেজের (পরবর্তীতে সরকারী কলেজ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া নাটোর বনলতা হাইস্কুল, বড়গাছা হাইস্কুল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়সহ নাটোরের ডায়াবেটিক সেন্টার ও সুগার মিল তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাবার স্মরণে নাটোরে ‘শংকর গোবিন্দ চৌধুরী আধুনিক স্টেডিয়াম’ নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত করে। মৃত্যু দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। লেখক : শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে
×