ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জন্মদিনে শ্রদ্ধা ভালবাসায় সিক্ত ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জন্মদিনে শ্রদ্ধা ভালবাসায় সিক্ত ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘শৈশবেও পারিবারিকভাবে আমার জন্মদিন পালন হয়নি। আমি প্রতিষ্ঠিত হলেও জন্মদিনের কথা ভাবিনি। আমার মনে হয়েছে এটা শিশুদের জন্য। এখন শেষ যাত্রার দিকে যত যাচ্ছি সংবর্ধনার মাত্রা ততই বেড়ে চলেছে। কিন্তু এটা আন্তরিকভাবে প্রত্যাখান করাও যায় না। মাঝে মাঝে মনে হয় এর জন্য কোন যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি কিনা। যখন এসব অনুষ্ঠান হয়, তখন মনে হয় আরও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এটা মনের ভেতর প্রশান্তি এনে দেয়, আবার নিজেকে উদ্দীপ্তও করে। মাঝে-মধ্যে ভালও লাগে’ নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক ও প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক। তিনি বলেন, স্কুল জীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, আমরা রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করার চেষ্টা করলেও উনি আমাদের ঘাড়ে চেপে আছেন। প্রত্যেকের অগ্রজের পথ ধরে চলার চেষ্টা করা উচিত। অনুজ যারা আছেন, তারা অগ্রজের পথ অনুসরণ করে সমাজকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করবেন। জাতীয় ও মননশীলতার জন্য প্রকৃত শিক্ষার খুবই প্রয়োজন। আমি মনেকরি তারুণ্য এদেশের মুক্তি ঘটিয়েছেন। এখন সহমর্মিতা ও মানবিক চেতনার খুবই অভাব। আমাদের একাত্তর, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ মুক্তি চেতনার সেই জায়গাগুলো অর্জন করতে হবে। আমাদের সমাজ বদল এখনও ঘটেনি। রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত মানবিক সহমর্মিতার জন্য সমাজ গঠনের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ অর্জন না হলে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ হবে না। আহমদ রফিকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। রবীন্দ্রচর্চা ট্রাস্টের তিনি প্রতিষ্ঠাতা। বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তিনি ৯০ বছরে পা রেখেছেন বুধবার। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জন্মোৎসবের আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এদিন বিকেলে। অন্যপ্রকাশ ও অনিন্দ প্রকাশ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, রফিক ভাই একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানের লোক হয়েও জীবনকর্ম শুরু হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নিজের প্রচেষ্টায় তিনি তার ভিতকে গড়েছেন। তার জীবনাদর্শ আমাদের অনুসরণ ও অনুকরণের প্রয়োজন। রফিক ভাইয়ের মতো মানুষের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল কর্মকা-ে কাজ করেছি আমরা। এজন্য তাদের কাছে আমরা ঋণী। দেশকে এগিয়ে নিতে তাদের অবদানের কথা বলার সময় এসেছে। রফিক ভাইয়ের শতায়ু কামনা করছি। সভাপতির বক্তব্যে ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম শহীদ মিনার গড়ার আন্দোলনে রফিক ভাইয়ের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তিনি আমাদের দেশে রবীন্দ্রস্মৃতি বিজড়িত পতিসরের নাম নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। অত্যন্ত সাদামাটা জীবন-যাপন করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তিনি লিখে চলেছেন। তার মতো মননশীল লেখক দেশে দ্বিতীয় জন আছে কি না আমার জানা নেই। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, সংস্কৃতি জন রামেন্দু মজুমদার, গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, কবি আনোয়ারা সৈয়দ হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আহমদ রফিককে নিবেদিত অভিজ্ঞান বচন পাঠ করেন কবি মনির সিরাজ। এবং ‘ভাষার জন্য ভালোবাসা’ শীর্ষক কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে আহমদ রফিককে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবি মনির সিরাজ। শিল্পী হাসেম খানের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাদুঘরের কিপার নূর এ নাসরিন, ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ, মাহমুদ হাশিম, সুজন বড়ুয়া, কামরুল হাসান শায়ক, দনিয়া পাঠাগার, পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি পিয়াস মজিদ প্রমুখ। সম্মেলক কণ্ঠে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
×