ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা কার্গো সেবা চালু রাখার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা কার্গো সেবা চালু রাখার প্রস্তুতি

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিভিল এভিয়েশন ও বিমান। খুব দ্রুততম সময়ে এ কার্গো চালু করার ক্ষেত্রে কি ধরনের জটিলতা রয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বুধবার সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান ও সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিমান ও অন্যান্য কর্মকর্তারা কার্গো হাউস পরিদর্শন করেন। তারা এ কার্গো হাউসের অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করেন। যদিও সিভিল এভিয়েশন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়েছে -প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশনার আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তুু জটিলতা রয়েছে অন্যত্র। ঠিক এই মুহূর্তে চব্বিশ ঘণ্টা কার্গো সার্ভিস চালু করার আগে তিনটা বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো হচ্ছে- রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত সেন্ট্রাল সার্ভারকে আরও গতিশীল করা ও কম্পিউটার ফিগারেশন বাড়ানো, রাত্রিকালীন ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করা ও আমদানিকারদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাল খালাস করতে বাধ্য করা। এগুলো নিশ্চিত করা গেলেই- কার্গোর বিদ্যমান অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা দিয়েই দিবারাত্র এ সেবা দেয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে নির্দেশনা দেয়া হয় সিভিল এভিয়েশন ও বিমানকে। একই সঙ্গে আমদানি পণ্য বিমানবন্দর থেকে দ্রুত ছাড় করার স্বার্থে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখাগুলো শনিবার ছুটির দিনেও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সেবাসংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে এ রকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান সমন্বয়কারী করা হয় সিভিল এভিয়েশনের এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানকে। এ কমিটিতে আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধিও রাখা হবে। এদিন যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় Ñকার্গো আসার আগেই যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দেয়া হয়। প্রতি কার্যদিবসে পণ্য ছাড় করার জন্য রাত ৯টা পর্যন্ত ওয়্যার হাউস খোলা রাখা হবে। এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হলে প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত ওয়্যার হাউসের কার্যক্রম চালু থাকবে। শুল্কায়ন কার্যক্রম দ্রুত করতে এনবিআরের সার্ভারকে শক্তিশালী করা হবে। এদিকে বুধবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশ তৎপর হয়েছে সিভিল এভিয়েশন,বিমান কাস্টমস ও আমদানিকারকরা। কার্গো হাউসের তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান সিভিল এভিয়েশন ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডল সেবাদানকারী বিমানের আপাতত কোন জটিলতা নেই। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোসাদ্দিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা তো বর্তমানে দিবারাত্র চব্বিশ ঘণ্টা সার্ভিস দিচ্ছিই। সিভিল এভিয়েশনও একই সময়ে অবকাঠামোগত সব ধরনের সুবিধাদি, নিরাপত্তা ও অটোমেশন সুবিধা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছে। এ বিষয়ে কাস্টমস হাউসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন- চব্বিশ ঘণ্টা আমদানি কার্গো হাউস চালু রাখতে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানের দিক থেকে কোন ধরনের জটিলতা বা অসুবিধা নেই। এটা এখন নির্ভর করছে প্রথমত, আমদানিকারক, দ্বিতীয়ত, রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল সার্ভারের গতিশীলতা ও তৃতীয়ত, ব্যাংকিং সুবিধার ওপর। তিনি বলেন, সরকারী দফতর বা অবকাঠামোগত যে কোন সুবিধার দায়িত্ব সরকারেরই। সরকার চাইলে সেটা পারে। কিন্তু বেসরকারী উদ্যোক্তা বা আমদানিরকারকদের ওপর নিয়ন্ত্রণে কতটা কর্তৃত্ব থাকবে সেটার ওপরই নির্ভর করছে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়া না হওয়ার বিষয়টি। যেমন চব্বিশ ঘণ্টা আমদানি পণ্য খালাসের সুবিধা থাকার পরও কোন আমদানিকারক যদি না আসে রাত গভীরে, তাহলে কার্গো হাউসের করার কি আছে। একইভাবে যদি সিএন্ডএফ কর্মীরা রাত গভীরে কাজে না আসে তাহলেও করার কিছুই নেই। এদিকে কার্গো হাউস সূত্রে জানা গেছে- আমদানির পণ্য দ্রুত খালাসের অন্যতম উপায় হচ্ছে- প্রি-এরাইভ্যাল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। বিদেশ থেকে কোন পণ্য নিয়ে ফ্লাইট যখন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তখন থেকেই আমদানি হাউসের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া যেমন-এরো বিল জমা, এসেসমেন্ট ও শুল্কাদি নির্ণয় সম্পন্ন করা গেলে এটা সম্ভব। এ সুবিধা কার্গো হাউসের থাকলেও রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল সার্ভারের শ্লথগতির দরুন তা ব্যাহত হয়। এজন্য জরুরী ভিত্তিতে সার্ভারের গতিশীলতা বাড়ানো ও কম্পিউটার কনফিগারেশন বাড়াতে হবে। এটাও হয়ত সম্ভব। তবে এ বিষয়ে সন্দীহান প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন-পণ্য আমদানি করা হয় ব্যাংকে এলসির মাধ্যমে। দেশে এখন অসংখ্য ব্যাংক রয়েছে। আমদানিকারকরা নিজেদের সুবিধামতো এসব ব্যাংকে এলসি খোলেন। এখন কার্গো হাউসের পাশে এসব ব্যাংকের শাখা চালু বা অন্য জায়গা থেকে সেবা দেয়া কতটুকু সম্ভব হবে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার ওথেলো চৌধুরী বলেন-কাস্টমস তো এখনও সারারাত ডিউটি করছে। অনেকেই তো পচনশীল পণ্য রাত গভীরে খালাস করছে। কিন্তু অন্য আমদানিকারকরা যদি রাতে না আসে তাদের তো বাধ্য করা যাবে না। উল্লেখ্য, আমদানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন-বিমানবন্দরের কার্গো সেবাসহ বিভিন্ন সেবা মানসস্পন্ন নয়। পণ্য ছাড়ে সাবেকি ব্যবস্থাপনার কারণে বন্দরে খোলা আকাশের নিচে কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়। পণ্য খালাসে জটিলতার দরুন অনেক বিলম্ব ঘটে। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান আমদানি ও রফতানিক কার্গো হাউসের তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান সিভ্লি এভিয়েশন। নিরাপদে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন, অবতরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর প্রধান দায়িত্ব। এ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে গত তিন বছরে সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করেছে। বিশ্বের অত্যাধুনিক ইডিএস মেশিনসহ ডুয়েল মোড স্ক্যানার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংযোজিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় শেড নির্মাণ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এয়ার কমোডর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সার্বিক তদারকি ও দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রমের দরুন কার্গো হাউসের কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে বলেই এখন চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দেয়া সম্ভব বলে মনে করছে আমদানিকারকরা।
×