ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ ভবনে বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণ উদ্ঘাটন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সংসদ ভবনে বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণ উদ্ঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদ ভবনের বিদ্যুত সরবরাহের জন্য স্থাপিত সাবস্টেশনের রিলে সেটিংয়ে সমস্যার কারণে মঙ্গলবার বিকেলে সংসদে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সিমেন্সের কাছ থেকে কেনা সাবস্টেশনটি সংসদে বসিয়েছে গণপূর্ত অধিদফতর (পিডব্লিউডি)। নিয়ন্ত্রণও তারাই করে থাকে। সাবস্টেশনটি স্থাপনের সময় বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিকে জানায়নি তারা। মঙ্গলবার ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সব জায়গাতে ঠিক থাকলেও সংসদে বিদ্যুত চলে যাওয়াতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বুধবার চারটি তদন্ত কমিটি বিদ্যুত বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে সংসদের স্টাবস্টেশনের কারিগরি ত্রুটিকে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধের জন্য দায়ী করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে বিদ্যুত বিভাগে ডিপিডিসি যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাতে সাবস্টেশটির সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সাবস্টেশনটিতে জাতীয় সংসদ ভবনের লোড এবং সিস্টেম ভোল্টেজ অন্যান্য প্যারামিটার ঠিকমতো সমন্বয় করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এক্ষেত্রে সময়, লোভোল্টেজের জন্য কতটা দেরিতে ব্রেকার পড়বে, কোন্ ভোল্টেজ লেভেলে আবার সরবরাহ শুরু হবে তা ঠিক করা ছিল না। বলা হ”েণ্ড রিলে প্রটেকশন স্কিম যথাযথ থাকলেও লোড এবং সোর্স ভোল্টেজের সঙ্গে সেটিং প্যারামিটার সামঞ্জস্যপূর্ণ না থাকায় ২য় সোর্স চালু হয়নি। ফলে জাতীয় সংসদে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটেছে। সূত্রগুলো জানায়, সংসদে গ্যাস ইনস্যুলেটেড সাবস্টেশন (জিআইএস) বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। এ ধরনের সাবস্টেশন সর্বাধুনিক এবং খুব স্পর্শকাতর। আমাদের পুরাতন বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে এটি খুব বেশি মানানসই নয় বলে মনে করছেন বিদ্যুত বিভাগের কেউ কেউ। অভিযোগ রয়েছে, সাবস্টেশনটি নির্মাণের সময় গণপূর্ত অধিদফতর (পিডব্লিউডি) বিদ্যুত সরবরাহকারী ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এর কাউকে ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাখেনি। মঙ্গলবার রাতে সরকারের উর্ধতন ব্যক্তিরা সংসদ এলাকায় গেলে এককভাবে পিডব্লিউডির এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিভাবে দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে থাকা স্থাপনায় স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন কার্যক্রম চলে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন পিডব্লিইডির তরফ থেকে বলা হয় সাবস্টেশন স্থাপনের সময় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) কে জানানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন সরকার জানান, সাবস্টেশনটি পিডব্লিউডি এককভাবে বসিয়েছে। আমাদের জানায়ওনি। কমিটিতেও রাখেনি। তিনি বলেন, আমরা ৩৩ কেভি থেকে ১১ কেভিতে সংসদে বিদ্যুত সরবরাহ করি। কিন্তু এরপর সাবস্টেশন নিয়ন্ত্রণ করে পিডব্লিউডি। তদন্ত প্রতিবেদনে ৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলোতে বলা হয়, আন্ডার ভোল্টেজ রিলে সেটিং যথাযথ করতে হবে। পিডব্লিউডি উপকেন্দ্রের ১১ কেভি ফিডার রিলে সেটিং যথাযথ করতে হবে। লোডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জেনারেটর বসাতে হবে। পিডব্লিউডি খেজুর বাগান সাবস্টেশনটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রকে নতুন জিআইএস প্রযুক্তির করতে হবে। খেজুর বাগান উপকেন্দ্রের এভিআর (অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটর) সচল করতে হবে একই সঙ্গে একটি কারিগরি কমিটির মাধ্যমে সিস্টেম সুরক্ষার কাজ করাতে হবে। এদিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখেছি আমাদের সিস্টেমে মঙ্গলবার কোন সমস্যা ছিল না। আমাদের কোথাও ট্রিপও করেনি। ফলে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একই জিআইএস প্রযুক্তিতে বঙ্গভবন এবং গণভবনে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। তাদেরও কোন সমস্যা হয়নি। ফলে আমরা মনে করছি সমস্যা থাকলে সংসদ ভবনের সাবস্টেশনে কোন অসামঞ্জস্য রয়েছে। মেঘনাঘাট-৪৪০ মেগাওয়াট এবং ঘোড়াশাল -১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে লোভেল্টেজের সূত্রপাত হয়। কিন্তু সংসদের সাবস্টেশনটিতে কারিগরি সব দিক ঠিক থাকলে বিদ্যুত বন্ধ হতো না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×